সিডনী মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১


বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মাদকমুক্ত করুন: কুবির প্রথম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি


প্রকাশিত:
২৮ জানুয়ারী ২০২০ ২২:১২

আপডেট:
৭ মে ২০২৪ ১০:২১

 কুবির প্রথম সমাবর্তনে বক্তব্য দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, মাদক ও ইয়াবায় সয়লাব হয়ে গেছে সারা দেশ। এর ভয়াবহ বিস্তার থেকে আজ মুক্ত নয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোও। ভয়ঙ্কর এই মরণনেশা থেকে দেশকে মুক্ত করতে ছাত্রসমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রসমাজের অগ্রণী ভূমিকা ছিল বলে দেশকে স্বাধীন করতে পেরেছি। কত ত্যাগ-তিতিক্ষার ফলে স্বাধীনতা পেয়েছি সে সম্পর্কে তোমরা সম্যক অবগত। একাত্তরের মতো আজকের ছাত্রসমাজকে মাদকের বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘোষণা করতে হবে।

সোমবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রথম সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আবদুল হামিদ।

সমাবর্তনে অংশ নেয়া গ্র্যাজুয়েটরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিকাল ৩টায় সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহেরের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চেীধুরী। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এফসিএ, অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহিদুল্লাহ।

কুমিল্লার শিক্ষাগত ঐতিহ্য উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কুমিল্লা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ জনপদ। কুমিল্লার ভৌগোলিক অবস্থান ও সুপ্রাচীন ইতিহাস সুশিক্ষির ঐতিহ্যকে বহন করে। এ জেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক জ্ঞানী ও গুণিজন। যারা তাদের মেধা, মনন ও প্রজ্ঞা দিয়ে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবদান রেখেছেন। এ জনপদে মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুর, নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী, ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও অনুবাদক লায়লা নূর, গীতিকার এবং কণ্ঠশিল্পী আপেল মাহমুদ, সঙ্গীতশিল্পী শচীন দেববর্মনসহ বহু শিক্ষাবিদ জ্ঞানী-গুণী। জাতীয় নজরুল ইসলামের অনেকটা সময় কেটেছে কুমিল্লায়।’

সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা উন্নত জাতি তৈরির মহান কারিগর। একজন শিক্ষক জাতির পথপ্রদশর্ক। একজন শিক্ষকের কাজ শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে সীমাবদ্ধ নয়, তিনি জাতির বুদ্ধি ও বিবেককে জাগ্রত করে অন্তরে জ্ঞানের মশাল প্রজ্বলিত করেন। তাই, একজন শিক্ষককে হতে হবে আদর্শ ও ন্যায়নীতির প্রতীক।’

গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘নৈতিকতা ও দৃঢ়তা দিয়ে দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। বিবেকের কাছে কখনও পরাজিত হবে না। এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের কথা ভুলে যাবে না। তাদের শ্রম ও ঘামের বিনিময়ে তোমরা শিক্ষা অর্জন করেছ। এখন সময় এসেছে সেই ঋণ পরিশোধ করার। বিশ্বের যেই প্রান্তেই থাক, তোমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়কে, এ দেশের মাটি ও মানুষকে ভুলে যাবে না।’

সমাবর্তনে অংশ নেয়া গ্র্যাজুয়েটবৃন্দ

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। এ সময়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আধুনিক ও প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশের বিশাল তরুণ সমাজকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার জন্য আনুপাতিক হারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিকল্প নাই।’

অনুষ্ঠানে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এ দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে এখনই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা হারিয়ে যেতে পৃথিবীতে আসি নাই, জিততে এসেছি। আজকের দিনে পৃথিবীতে এগিয়ে যেতে হলে প্রযুক্তিগত শিক্ষার বিকল্প নেই। আমরা শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুক্ত রয়েছি। আগামী দিনে টেকনোলজিক্যাল বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে সামনের দিনগুলোয় এগিয়ে যেতে পারব।’

সমাবর্তনে পাঁচটি অনুষদের মোট ২ হাজার ৮৮৮ জন গ্র্যাজুয়েট অংশ নিয়েছেন। যার মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারী ১ হাজার ২২২ জন এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ১ হাজার ৬৬৫ জন। শিক্ষায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের মোট ১৪ জন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করেন রাষ্ট্রপতি। বিকাল পাঁচটার দিকে সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি।

সমাবর্তনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, স্থানীয় সংসদ সদস্য, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় কনসার্টের আয়োজন করা হয়।

সূত্র: বাসস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top