সিডনী শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১


বৈধ কাগজপত্র না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে থেকে ১৮ বাংলাদেশি গ্রেফতার


প্রকাশিত:
৪ জুন ২০১৮ ১০:৪৪

আপডেট:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৪:০৯

বৈধ কাগজপত্র না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে  থেকে ১৮ বাংলাদেশি গ্রেফতার

বৈধ কাগজপত্র না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী লারেদো শহর থেকে গত সপ্তাহে কমপক্ষে আরও ১৮ বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত টহল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর ফলে এই অর্থবছরে মোট ২৭৪ বাংলাদেশি গ্রেফতার হলেন।



 



যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্যের সীমান্তবর্তী লারেদো শহর থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। অন্য যেকোনও সীমান্তের চেয়ে এখান দিয়েই সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে। মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশের জন্য অভিবাসন প্রত্যাশীদের লারেদো শহরের দক্ষিণের রিও গ্রান্ড নদীর পার হতে হয়। গত মাসে নদী পার হওয়ার সময় একজন অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যু হয়। পরে যাচাই-বাছাই শেষে জানা যায় তিনি বাংলাদেশি নাগরিক।



বাংলাদেশি নাগরিকদের ওই এলাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনুপ্রবেশ করার বিশেষ কোনও কারণ নেই। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, মানব পাচারকারী চক্ররাই মূলত ওই রুটটি নিয়ন্ত্রণ করে। তারাই ঠিক করে দেয় কারা কোন পথে সীমান্ত অতিক্রম করবে।



লারেদো সেক্টরের সহকারী প্রধান টহল কর্মর্তা গ্রাবিয়েল আকোস্টা বলেন, দেখা যায় আমাদের বাহিনী প্রতিদিনিই বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মানুষদের আটক করে। গ্রেফতার হওয়ার পরই কেবল অবৈধভাবে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। গ্রেফতার অনেকে অভিবাসন কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তরের আগে চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয়। কারণ দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমণ করায় তারা ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত থাকে।



গ্রেফতারের পর সবারই আগের অপরাধের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়। এজন্য বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন ডাটাবেজ ঘেটে দেখা হয়। এর মাধ্যমে তাদের আগের অপরাধ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি তাদের অভিবাসন মর্যাদাও জানা যায়। কর্মকর্তারা বলেন, অভিবাসীরা লুকানো বা পালানোর চেষ্টা করে না। তার পরিবর্তে তারা হেটে গিয়ে সীমান্ত এজেন্টদের কাছে ধরা দেয়। অভিবাসীরা নিজ দেশে জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে আশ্রয় চেয়ে অনুরোধ করে থাকে।



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়। সেই হিসেবে আশ্রয়প্রার্থীদের সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮০ সালে কনভেনশনে স্বাক্ষর করে তা নিজ দেশে আইনে পরিণত করে। মূলত নিজ দেশে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার লক্ষ্যেই আইনটি করে যুক্তরাষ্ট্র।



ট্রাম্প প্রশাসন যখন ক্যাচ ‘ধরো এবং ছেড়ে দাও’ প্রক্রিয়াকে আরও  কঠোর করার চিন্তা করছে, ঠিক তখনই বাংলাদেশি নাগরিকদের গ্রেফতারের বিষয়টি খবরের শিরোনাম হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের ধরার পর অভিবাসন বিচারকের কাছে শুনানির জন্য অপেক্ষা করার সময় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিবাসন আদালতে কয়েক লাখ অমীমাংসিত মামলা রয়েছে। তাই একটি মামলা শেষ হতে বছরের পর বছর সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে এসব ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের জীবন গড়ে তোলেন। সমালোচকদের দাবি, অভিবাসন আদালতে মামলা জটের কারণে গ্রেফতার হওয়ার ভয় থাকা সত্ত্বেও বিদেশি নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করে।



ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশি দূতাবাস বলেছে, তারা এসব গ্রেফতারের ঘটনায় সচেতন রয়েছে আর তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে মার্কিন সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে। দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা সম্প্রতি বলেন, ‘আমরা মার্কিন আইনকে শ্রদ্ধা করি এবং এই বিষয়টি দেখার জন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।



গ্রেফতারকৃতদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। আর এজন্য ক্ষমতাসীন সরকারকে দোষারোপ করছে। কিন্তু দাবির পক্ষে তাদের কাছে কোনও দলিল নেই।’ তিনি আরও  বলেন, এই মানুষগুলো তাদের জীবনকে উন্নত করতে চায়। আর এজন্য যেকোনও  উপায়ে যু্ক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে মরিয়া হয়ে থাকে।



যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ঘোষণা করেছে, কত তাড়াতাড়ি মামলার শুনানি শেষ করতে পারে ও  কতটি মামলা নিষ্পত্তি করতে পারে তার ওপর নির্ভর করে অভিবাসন বিচারকদের মূল্যায়ন করা হবে। তবে অভিবাসন আন্দোলনকর্মীরা এই ঘোষণার সমালোচনা করে বলেন, এতে আদালতের সুবিচার বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। আর এর  ফলে নির্বাসনের ঘটনা আরও বাড়বে।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top