চীনে ১৭২ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আটকা, দেশে ফিরার আকুতি
প্রকাশিত:
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১১:৪৮
আপডেট:
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২১:৪৩
প্রভাত ফেরী ডেস্ক: চীনের হুবেই প্রদেশের ইচাং সিটিতে আটকা পড়েছেন বাংলাদেশি ১৭২ শিক্ষার্থী। তারা এখন মহাবিপদে। তাদের গচ্ছিত খাবার ও পানি ফুরিয়ে যেতে শুরু করেছে। একে অন্যের খাবার ভাগ করে খাচ্ছেন। তাদের ডরমেটরিটি ইতোমধ্যে চীন সরকার সিলগালা করে দিয়েছে। ফলে তারা বাইরে বের হতে পারছেন না। কেউ তাদের খাবারও দিয়ে আসছে না।
গত মঙ্গলবার রাত থেকে সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এসব শিক্ষার্থী সেখানকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য গিয়েছিলেন। তাদের এই অবস্থার কথা জানিয়ে সেখানে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সাহায্য মিলছে না। উল্টো দূতাবাস কর্তৃপক্ষ ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছে। আবার ঢাকায় যোগাযোগ করলে তারা চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসকে দেখাচ্ছেন। এ অবস্থায় এই ১৭২ শিক্ষার্থী বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন। তাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছেন তারা। আটকে পড়া এই শিক্ষার্থীদের এখন একটাই চাওয়া, তাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হোক।
এই শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই ইচাংয়ের চায়না থ্রি গর্জেস ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তাদেরই একজন ইমন চৌধুরী।
তিনি ফেসবুকে জানান, আমরা বুধবার দুপুর ২টায় বাংলাদেশ দূতাবাসে ফোন করেছিলাম। কিন্তু তাদের কোনো সাড়া পেলাম না। তাদের বিন্দুমাত্র কোনো প্রকার সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো তারা ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। আবার ঢাকায় কথা বললে তারা চীনে যোগাযোগ করতে বলছেন।
এই শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, চীনের হুবেই প্রদেশের ইচাং সিটিতে ১৭২ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী একটি ডরমেটরিতে অবস্থান করছেন। তারা সেখানেই থাকছেন। গত ১৪ দিন আগে তাদের অনেকে পানি ও খাবার মজুদ করেছিলেন। কিন্তু তা শেষ হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে অনেকের খাবার ফুরিয়েছে। অনেকের ফ্রিজে থাকা খাবার ও বিশুদ্ধ পানিও শেষ। তারা বাইরে যেতে না পারায় কিছু কিনতেও পারছেন না। কেউ তাদের খাবারও দিচ্ছে না। এই অবস্থায় তারা খাবার ভাগ করে খাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস কোনোভাবেই সাহায্য করছে না। আমরা দূতাবাসকে ফোন করছি। কিন্তু তারা বলছে, ঢাকা থেকে ব্যবস্থা করবে। আর ঢাকাকে ফোন করলে তারা বলছে দূতাবাসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় আমরা ঢাকা আর বেইজিংয়ের মাঝখানে পড়েছি। আমাদের পুরো শহর লকডাউন। বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো খাবারের ব্যবস্থা করতে পারছে না। আমাদের শিক্ষকরাও বের হতে পারছেন না। গত চারদিন আগে খাবারের ডিম, পেঁয়াজ আর মরিচের অর্ডার করেছিলাম কিন্তু তারা তা আজ পৌঁছাতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, বুধবার এক বাঙালি বাজার করার জন্য গেটে গিয়েছিলেন, ডরমেটরির নিরাপত্তাকর্মীদের অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তারা তার কথা শুনেনি। উল্টো তার ছবি তুলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে যে, সে বাইরে যেতে চায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ফোন করে বলেছে বাইরে যাওয়া যাবে না। আমরা সবাই খাবারের অভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছি।
খাবার ও পানি সঙ্কট নিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীরা বলেন, খাবারের অভাব যে কত বড় একটা অভাব তা নিজে সম্মুখীন না হলে হয়তো বুঝতাম না। আমাদের ফ্রিজের খাবার সব ফুরিয়ে গেছে। পানিটা নেই। পানি তাও ফুটিয়ে খাওয়া যায় কিন্তু খাবার না থাকলে তো আর রান্না করা যায় না। আমরা এখানে ১৭২ জন বাংলাদেশি যে কী পরিমাণ কষ্টে আছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য ছাড়া কিছুই করতে পারব না। কারণ এখানে ট্রেন, স্টেশন ও বিমানবন্দর বন্ধ। পানি ও খাবার শেষ হচ্ছে। অচিরেই অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় আমরা কদিন বেঁচে থাকব জানি না। সব মিলিয়ে আমরা খুবই বিপদে আছি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিনীত অনুরোধ আমাদের এই অবস্থা থেকে রক্ষা করুন।
চীনে দেশে ফেরত আসার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসে সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন।
অন্যদিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে গত ১৬ দিনে (২১ জানুয়ারি-৫ ফেব্রুয়ারি) চীন থেকে ৭১৪৬ যাত্রী ফিরেছেন। কিন্তু এই ১৭২ শিক্ষার্থীকে কবে ফিরিয়ে আনা হবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
বিষয়: চীন করোনা ভাইরাস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: