সিডনী সোমবার, ২০শে মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


প্রবাস জীবনে মানসিক চাপ ও সমস্যা, বাড়ছে প্রানহানির ঘটনা


প্রকাশিত:
২৭ মার্চ ২০১৯ ১৪:১০

আপডেট:
২০ মে ২০২৪ ২৩:৩৪

প্রবাস জীবনে মানসিক চাপ ও সমস্যা, বাড়ছে প্রানহানির ঘটনা

৬ মার্চ ২০১৯, বুধবার। সপ্তাহের অন্যান্য কর্মদিবসের মতোই আরেকটি ব্যস্ত দিনের শুরু। খুব ভোরবেলা থেকে সিডনির ট্রেন-বাসগুলো ভরে উঠছে কর্মস্থলগামী মানুষের ভীড়ে। অনেকে গাড়িতে বসে একনজর চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন খবরের শিরোনামগুলোতে। তবে এদিনের প্রধান শিরোনাম একটু ব্যতিক্রমী, তুলনামূলক নিরাপদ এই দেশে এমন বিভৎস খবর সচরাচর দেখা যায় না। আগের রাতে সিডনির কিংসফোর্ড এলাকায় এক গাড়ির ভেতর থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে ভারতীয় বংশোদ্ভুত এক মেয়ের মৃতদেহ। পেশায় দাঁতের ডাক্তার মেয়েটিকে কেউ নির্মমভাবে ছুরির আঘাতে হত্যা করে মৃতদেহ স্যুটকেসে ভরে তারই গাড়িতে ফেলে রেখে গেছে আবাসিক এলাকায় এক রাস্তার পাশে।



পরবর্তীতে পুলিশের ভাষ্যে এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের বর্ণনায় পুরো ঘটনা উঠে আসে। বত্রিশ বছর বয়সী ডেন্টিষ্ট প্রীতি রেড্ডি থাকতেন সিডনির পশ্চিমে পেনরিথ এলাকায়। শনিবার তিনি সেন্ট লিওনার্ডস এলাকায় সারাদিন ব্যাপী ডাক্তারদের এক কন্টিনিউইং এডুকেশন কনফারেন্সে যোগ দিয়েছিলেন। একই কনফারেন্সে যোগ দিতে চারশ কিলোমিটার দুরের এলাকা টেমওয়ার্থ থেকে গাড়ি চালিয়ে সিডনিতে আসেন প্রীতির প্রাক্তন বয়ফ্রেন্ড হর্ষবর্ধন নর্দা। একসময় দীর্ঘদিন তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু হর্ষবর্ধন সিডনি থেকে টেমওয়ার্থ চলে যাওয়ার পর থেকে সে সম্পর্ক ধীরে ধীরে ভেঙে যায়।



প্রীতির পেনরিথে বাড়ি ফেরার কথা ছিলো রবিবার, কিন্তু রবিবার বিকেলের মাঝেও সে না ফেরাতে তার পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তারা পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ প্রীতিকে খুঁজতে শুরু করে। সিডনি সিটির জর্জ স্ট্রিটের এক ম্যাকডোনাল্ডস স্টোর থেকে তাকে শনিবার দিবাগত রাতে পানি কিনতে দেখা যায় সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে। তারপর সে পায়ে হেঁটে মার্কেট স্ট্রিটের সুইসোটেল হোটেলের দিকে চলে যায়।



এদিন সুইসোটেল হোটেলেই ছিলো তার প্রাক্তণ প্রেমিক হর্ষবর্ধন। এ সিসিটিভ ফুটেজ খুঁজে পেয়ে ঘটনার রহস্যভেদ করার আগেই রবিবার মিসিং পার্সন ইনকোয়ারির নিয়মিত রুটিনওয়ার্ক হিসেবে টেমওয়ার্থের পুলিশ হর্ষবর্ধনের সাথে যোগাযোগ করেছিলো। পরবর্তীতে পুরো বিষয়টি পরিস্কার হওয়ার আগেই সোমবার রাতে নিউ ইংল্যান্ড হাইওয়েতে হর্ষবর্ধন তার গাড়ি চালিয়ে দ্রুতগতিতে একটি সেমি ট্রেইলার ট্রাকের নিচে ঢুকে পড়ে। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় সে নিহত হয়।



পুলিশ মনে করছে, কোন কারণে ঝগড়া বিবাদের ফলে হর্ষবর্ধন প্রীতিকে হত্যা করে স্যুটকেসে ভরে তারপর গাড়িটি কিংসফোর্ডে রেখে নিজের কর্মস্থলে ফিরে গিয়েছিলো। পরবর্তীতে গ্রেফতারের ভয়ে কিংবা অনুশোচনায়, যে কারণেই হোক সে নিজেও গাড়ি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছে।



এ ধরণের মার্ডার-সুইসাইডের খবর যে কোন স্বাভাবিক মানুষকে মর্মাহত করে। যত সমস্যাই থাকুক না কেন, অন্য কারো প্রতি শারীরীক সহিংসতা চালানো এবং এমনকি হত্যা করা এবং নিজেও আত্মহত্যা করা, এটি সুস্থ মানসিকতার পরিচয় না। নিঃসন্দেহে যে মানুষ এমন ধরণের কাজ করতে পারে, মানসিকভাবে তাকে সমস্যাগ্রস্থ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। জীবনের কঠিন সংকটের সময় স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে পরিচিত অনেকে এমন অনাকাংখিত আচরণ ও কাজ করে তার পরিচিতজনদের হতবাক করে দিতে পারে।



বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানসিক সমস্যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অজানা থেকে যায়। যারা এ ধরণের মানসিক চাপ ও সমস্যাকে নিজের ভেতরে চেপে রেখে জীবনযাপন করেন, তারা হলেন যে কোন সময় বিস্ফোরিত হওয়ার আংশকায় থাকা সুপ্ত এক টাইম বোমার মতোই ভয়াবহ।



প্রীতি এবং হর্ষবর্ধন দুজনেই ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত অভিবাসী, দুজনেই দাঁতের চিকিৎসক হিসেবে সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সাফল্যের চুড়ায় জীবনযাপন করছিলেন। কিন্তু শিক্ষাগত কিংবা পেশাগত সাফল্যের সাথে মানসিক সুস্থতা এবং শান্তির সবসময় সাযুজ্য হয়না, এ মর্মান্তিক ঘটনাটি তার আরেকটি প্রমাণ হয়ে থাকলো।



কিছুদিন আগে সিডনির বাংলাদেশী কমিউনিটিও চমকে উঠেছিলো এক আত্মহত্যার ঘটনায়। পেশাগত জীবনে সফল একজন ভদ্রলোক আত্মহত্যা করেছিলেন, সম্ভবত পারিবারিক অশান্তি ও অতৃপ্তির জের ধরে। এধরণের মর্মান্তিক পরিণতি ছাড়াও এই প্রবাসের নিরাপদ ও শান্তিময় জীবনযাত্রার মাঝেও কদাচিত শোনা যায় পারিবারিক নানা সহিংসতার ঘটনা। দেখা যায় সমাজে সজ্জন হিসেবে পরিচিত একজন মানুষও হয়তো সভ্যতার সীমা লংঘন করে অযাচিতভাবে হাত তুলছেন স্ত্রী-সন্তানদের উপর। আবার অনেক সময় মানসিক চাপ এবং সমস্যার ভিকটিম অন্যরা হয় না, বরং মানুষটি নিজেকেই ভিকটিমে পরিণত করে। ভুগতে থাকেন চরম মাত্রার বিষণ্ণতা অথবা হতাশায়।



এসব নানা কারণে সমাজবিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানীরা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রবাসীদের মাঝে মানসিক সমস্যার প্রকোপ কি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি? না কি এই হার সমাজের অন্যান্য মানুষদের মতোই একই মাত্রার?



মানুষ সামাজিক প্রাণী। শৈশবে বেড়ে উঠার পরিচিত পরিবেশ, চিরপরিচিত মুখের ভাষায় অন্যদের সাথে যোগাযোগ ভাব আদান-প্রদানের সহজাত অভ্যস্ততা, নিজ পরিবারের স্বজন এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর কিছুটা অবসর; ব্যস্ত জীবনযাত্রার মাঝে এসব বিষয় প্রতিটি মানুষকেই এক ধরণের সামাজিক নিরাপত্তা ও মানসিক নিশ্চয়তার চাদরে ঢেকে রাখে। দৈনন্দিন জীবনে পরিচিত পরিবেশ, পরিচিত মুখ, পরিচিত ভাষার মতো বিষয়গুলো প্রতিটি মানুষকেই পরোক্ষ শক্তি যোগায়।



তবুও বর্তমান পৃথিবীতে অনেক মানুষ নানা কারণে এসবের মায়া ত্যাগ করে নতুন দেশে নতুন পরিবেশে প্রবাসী জীবন বেছে নিচ্ছেন। আজ থেকে এক কিংবা দেড় শতক আগেও প্রবাসজীবনের এতোটা প্রচলন ছিলো না। তখনকার দিনে দেশ বিদেশ ভ্রমণে যাওয়া ছিলো রোমাঞ্চকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানের মতো একটি কাজ যা খুব বেশি মানুষ করতো না। তখনকার দিনেও অভিবাসনের প্রচলন ছিলো বটে কিন্তু সে জীবনের ধরণ ও প্রকৃতি ছিলো বর্তমানের চেয়ে অনেক ভিন্নতর।



যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি এবং তার পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনে বর্তমান পৃথিবীতে অভিবাসনের হার বেড়েছে অনেক অনেক গুণ বেশি। এই প্রবাসী জীবনে নতুন এক পরিবেশে নতুন জীবন শুরু করতে মানসিক শক্তি এবং প্রণোদনা যেমন থাকে, তেমনি নানা প্রতিকূলতার ফলে বাড়তি মানসিক চাপও একটি স্বাভাবিক বিষয়। অনেক সময়েই এ পরিস্থিতি মোড় নিতে পারে মাত্রাতিরিক্ত সমস্যার দিকে। সৃষ্টি হতে পারে বিষণ্ণতা, বিষাদ সহ নানা ক্ষতিকর উপসর্গের। এমনকি মানসিক চাপের পরিণতিতে আত্মহত্যাও বর্তমানে যেন একটি নিয়মিত দুঃসংবাদের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।



অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশী কমিউনিটি একটি ক্রমবর্ধিষ্ণু এবং বিকাশমান কমিউনিটি। এক দশক কিংবা এক যুগ আগের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত মানুষের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। নিজ দেশের মানুষদের কাছ থেকে প্রাত্যাহিক জীবনের নানা দরকারী বিষয়ে সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনা এখন অনেক বেশি। পাশাপাশি যেন পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নানা মানসিক সমস্যার ঘটনা। অনেকেই প্রচন্ড মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতা নিয়মিত বয়ে বেড়াচ্ছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, জীবিকা কিংবা অভিবাসন সংক্রান্ত নানা জটিলতা থেকে মানসিক চাপের সৃষ্টি হচ্ছে। এদেশের ভিন্ন পরিবেশ ও সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের সাথে তাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের অর্থ্যাৎ পিতামাতার মানসিক তফাতের ফলে দুটি পক্ষই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।



একজন মানুষের জীবনে শৈশব ও কৈশোরের সময়টুকু খুব গুরুত্বপূর্ণ । এসময়ে তার শারীরীক ও মানসিক বিকাশ ঘটে, ভবিষ্যত জীবনের জন্য স্থায়ী এক অবকাঠামো তৈরী হয়। বাংলাদেশের মতো যৌথ পরিবারনির্ভর সমাজে যখন একজন মানুষ বেড়ে উঠে, এ সময়টাতে পিতামাতার পাশাপাশি অন্যান্য আত্মীয় স্বজনরাও নানা অবদান রাখে। সমাজ অবদান রাখে। অন্যদিকে শিল্পবিপ্লব পরবর্তী অর্থনৈতিকভাবে উন্নত সমাজগুলোতে জীবনযাত্রার ব্যস্ততা ও চাপের কারণে নিজ সন্তানদেরকেও পর্যাপ্ত সময় দেয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত মানুষদের স্বল্পতা শিশু কিশোরদের জীবনে ঘাটতি তৈরী করে। ঘরের বাইরে এক ধরণের পরিবেশ এবং ঘরের ভেতরে পিতামাতার কাছ থেকে অন্য ধরণের প্রত্যাশার টানাপোড়েন তাদেরকে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত করে। ধর্মীয় ও সামাজিক নানা চিন্তা ও আচরণ কদাচিত তাদের জন্য অসহনীয় মানসিক চাপের সৃষ্টি করে।



বিদেশে বেড়ে উঠা প্রবাসী নতুন প্রজন্মের ক্ষেত্রে এ ধরণের মানসিক চাপের ফলে অনেক মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এর বাস্তব পরিণতি আমরা চোখের সামনেই দেখতে পাই। সিডনিতে দেখা যায় নির্দিষ্ট একটি কমিউনিটির নতুন প্রজন্মের মাঝে বেপরোয়া আচরণ, আইনভঙ্গের প্রবণতা ও শিক্ষার প্রতি অনীহার প্রকাশ। অনেক কমিউনিটির মাঝে গ্যাং কালচার বা দলবদ্ধ দুর্বৃত্তপনার প্রকোপ দেখা যায়। অন্যদিকে দেখা যায় অন্য কোন কমিউনিটির সন্তানেরা হয়তো পারিবারিক ও কমিউনিটির সামষ্টিক পরিবেশের কারণে পড়ালেখায় ভালো করছে কিন্তু অতিরিক্ত চাপের কারণে নিঃসঙ্গতায় ভুগতে শুরু করেছে। ফলশ্রুতিতে এসব প্রবাসী সন্তানরা জড়িয়ে পড়ছে মাদক গ্রহণ ও মাদক ব্যবসার মতো ভয়াবহ কাজেও।



তাদের পিতামাতা প্রচন্ড পরিশ্রম করে পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদাগুলো পূরণ করে যখন সন্তানদের এ অবস্থা দেখেন তখন তারাও হতাশায় ডুবে যান। উভয় পক্ষ থেকেই মানসিক চাপ ও হতাশার কারণে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সংঘাত চলতে থাকে। সমাধানের পরিবর্তে বরং তখন জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে সমস্যাগুলো। একই ধরণের ঘটনা ঘটছে অনেকের দাম্পত্য জীবনে। হয়তো কিছুটা সঠিক পদক্ষেপ ও কিছুটা ইতিবাচক চিন্তা থাকলে যেখানে দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু নানা কারণে ও মানসিক চাপের ফলে শেষপর্যন্ত তার পরিণতি গিয়ে ঠেকছে বিবাহবিচ্ছেদের মতো বেদনাদায়ক ও অনাকাঙ্খিত ঘটনায়।



মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক দিকটি একটু গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এর সাথে তার সামাজিক জীবনযাত্রার নানা বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অনেক সময় দেখা যায় শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতা থাকার পরও সার্টিফিকেট কিংবা ভাষাগত সমস্যার কারণে অনেক প্রবাসী মানুষ তার প্রত্যাশিত কাজ করার সুযোগ পায় না। জীবনের দীর্ঘ একটি সময় তাদেরকে প্রাথমিক স্তরের কাজ করে পরবর্তীতে প্রত্যাশিত স্তরে পৌছতে হয়, অনেকে সে সুযোগও পায় না বরং অন্য কোন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। এ ধরণের বিষয়ও অনেকসময় একজন মানুষের মনকে কুড়ে কুড়ে খায়। অনেক সময় হয়তো তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং আপন মানুষটিও বুঝতে পারে না তার মনের এ কথা কিংবা আক্ষেপগুলো। অন্য কারো সাথে চিন্তা ও অনুভূতিগুলো ভাগ করে নেয়ার সুযোগ না থাকাতে মানুষটি আক্রান্ত হয় নিঃসঙ্গতাবোধে।



কিন্তু মানসিক সমস্যা কিংবা মানসিক চাপ এমন একটি বিষয় যা কেবলমাত্র আক্রান্ত ব্যক্তিকেই ক্ষতিগ্রস্থ করে না, বরং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এবং পরিচিত মানুষরাও এ সমস্যার কারণে উদ্ভব নানা ঘটনার ভুক্তভোগীতে পরিণত হতে পারেন। মনোবিশেষজ্ঞরা সাধারণত মতপ্রকাশ করে বলেন, যারা প্রবাস জীবন বেছে নেয় তাদের গড়পড়তা মানসিক শক্তি অন্যদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হওয়াটা একটি প্রত্যাশিত বিষয়। প্রবাস জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ তারা মোকাবেলা করে, প্রতিকূল পরিবেশে তারা জীবন শুরু করে। তাছাড়া মানুষ মানসিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী প্রাণী। মানুষেরই আছে যে কোন পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার এবং যে কোন পর্যায় থেকে নতুন করে অনুকূল পরিবেশ তৈরীর কাজ শুরু করার এক আশ্চর্য শক্তি। মোদ্দাকথা, সবধরণের সংগ্রামের ভেতর দিয়ে নতুন সমাজে অবস্থান তৈরী করে নেয়ার বিষয়টি সাধারণত প্রবাসী মানুষদের একটি ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য। বর্তমান সময়ে দুনিয়াব্যাপী নাগরিকত্ব ও অভিবাসনবিষয়ক গবেষণায় এটি একটি প্রতিষ্ঠিত মতামত।



তবে প্রবাসীদের এই গড়পড়তা মানসিক শক্তির বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি অনেক প্রবাসী মানুষের মাঝে মানসিক চাপ ও দুর্বলতার আতিশয্যের বিষয়টিও বর্তমান সময়ের একটি বাস্তবতা। অভিবাসন এবং নতুন পরিবেশে জীবনযাত্রা শুরু করা অতিস্বাভাবিকভাবে একজন মানুষের মনে প্রচুর মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করে। নতুন পরিবেশে কাজ খুঁজে পাওয়া, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীতা অর্জন করা, নতুন সমাজে নিজ আত্মপরিচয় নির্ণয় করা, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক নানা টানাপোড়েনের মাঝে ভারসাম্য সৃষ্টি করা, ভিন্ন প্রজন্মের চিন্তাধারায় সাযুজ্য তৈরী করা এসব বিষয় একজন মানুষের মনে যে অভাবনীয় চাপের সৃষ্টি করে তা থেকে উদ্বেগ, হতাশা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, ঘুমের সমস্যা, এমনকি আত্মহত্যার চিন্তা ও আত্মহত্যা করে ফেলার মতো মারাত্মক সব পরিণতিতে পৌছার বিষয়গুলোও বর্তমান যুগের মনোবিজ্ঞানী ও সামাজিক বিশ্লেষকদের মাঝে স্বীকৃত একটি বিষয়।



যে কোন সমস্যার মতোই এ সমস্যার সমাধানে প্রথম পদক্ষেপ হলো সমস্যাটির অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়া। কিন্তু বাস্তবতা হলো মানসিক সমস্যা এমন একটি বিষয় যা সাধারণত কেউ স্বীকার করে নিতে কিংবা মেনে নিতে চায় না। বাংলাদেশ তো পরের কথা, পশ্চিমের উন্নত দেশগুলোতেও অনেক সময় বিষণ্ণতা, হতাশাবোধ কিংবা নিঃসঙ্গতাবোধের মতো মানসিক সমস্যাগুলোর জন্য বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়াকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়।



অনেক সময় একজন আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করতে থাকেন এসব সমস্যা নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যাবে, তেমনিভাবে তার পরিচিত মানুষরাও বিষয়টাকে ততটা গুরুত্ব দিয়ে দেখেন না। ভয়ংকর বিষয় হলো অনেক সময় অনেকে মনে করেন এ ধরণের সমস্যায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়ার মাধ্যমে আক্রান্ত মানুষটির দুর্বলতা প্রমাণিত হয়। এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি মানসিকতা।



প্রবাসীদের মাঝে মানসিক সমস্যা নিয়ে গবেষণা করেছেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টোর গবেষক ফারাহ ইসলাম। তার গবেষণায় অংশ নেয়া বাংলাদেশী একজন প্রবাসীর ভাষ্যে আমরা বাঙালীরা সব কিছু নিজেদের ভেতরে রেখে দেই। আমরা সাহায্য চাই না, সেবার জন্য খোঁজ করি না। কারণ যদি অন্যরা এ বিষয়টি জেনে যায় তাহলে তা আমার জন্য খুবই লজ্জ্বাজনক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়াবে



মানসিক সমস্যার বিষয়টি নিয়ে আমাদের সামষ্টিক মানসিকতা কি ধরণের, এ বক্তব্যটি তার একটি যথার্থ উদাহরণ। আমরা মনে করি, মানসিক সমস্যা নিয়ে পরিবারের বাইরে কথা বললে, এমনকি পরিবারের ভেতরে কথা বললেও তা নিজের জন্য খুবই লজ্জ্বার একটি বিষয়। এ ধরণের বিষয় প্রকাশ পেলে সামাজিকভাবে পাগল আখ্যা পেতে হবে এবং তা পুরো পরিবারের জন্য একটি কলংকের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। এই মানসিকতার পরিবর্তন এবং সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সমস্যার অস্তিত্ব মেনে নেয়ার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি খুব জরুরী একটি পদক্ষেপ।



অস্ট্রেলিয়ায় মানসিক সমস্যা নিয়ে অনেক সংগঠন ও সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সংস্থা হলো বেয়ন্ড ব্লু। স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, হাসপাতাল সহ বিভিন্ন জনসমাগমের স্থানে প্রচারণা, এ ধরণের ক্ষেত্রে বেয়ন্ড ব্লু সংগঠনটির উপস্থিতি যে কোন সচেতন মানুষের চোখে পড়বে। এটি মূলত উদ্বেগ, হতাশা এবং আত্মহত্যার চিন্তা প্রতিরোধে সহায়তা মূলক কাজে নিয়োজিত একটি স্বায়ত্তশাসিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান।



অস্ট্রেলিয়ান সরকারও মানসিক চাপ ও সমস্যার প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য বিভিন্ন ধরণের নিয়মিত কার্যক্রমে প্রচুর অবকাঠামো গড়ে তুলেছে। এদেশে একজন মানুষ যদি এ ধরণের কোন সমস্যা অনুভব করে তাহলে অন্য যে কোন অসুস্থতার চিকিৎসার মতোই স্থানীয় ডাক্তার বা জিপির সাথে এ নিয়ে কথা বলতে পারে। তখন সে ডাক্তারই তাকে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেন এবং বিশেষজ্ঞ মতামত ও পরামর্শের জন্য যথোপযুক্ত জায়গাগুলোতে যোগাযোগ করিয়ে দেন।



অভিবাসী কমিউনিটিগুলোর মাঝে মানসিক চাপ ও উদ্বেগের বিষয়টি নিয়েও অস্ট্রেলিয়ান সরকার যথেষ্ট সচেতন। সিডনি যে স্টেটে অবস্থিত, সেই নিউ সাউথ ওয়েলসের স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে এনএসডব্লিউ ট্রান্সকালচারাল মেনটাল হেলথ সেন্টার নামের একটি সংস্থা বিভিন্ন ভাষাভাষী অভিবাসীদের মানসিক সুস্থতায় সেবা ও সহায়তা দেয়ার জন্য কাজ করে। ভিক্টোরিয়া এবং কুইনসল্যান্ড সহ অন্যান্য যেসব স্টেটে অভিবাসী জনসংখ্যার প্রাচুর্য্য দেখা যায়, সেসব স্টেটেও সরকারী উদ্যোগে এধরণের প্রতিষ্ঠান আছে। এর পাশাপাশি ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথের অধীনে পুরো দেশে মেন্টাল হেলথ ইন মাল্টিকালচারাল অস্ট্রেলিয়া নামের প্রতিষ্ঠানও অভিবাসীদের মানসিক সুস্থতায় বিশেষায়িত সেবা ও পরামর্শ দেয়।



এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অভিবাসীদের জন্য মানসিক সুস্থতা প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রকাশনা বের করা হয়। অভিবাসীরা যেসব ভাষায় কথা বলে থাকে সে ভাষাগুলোতে অনুবাদ করে তারা প্রচুর তথ্যামূলক উপাদান প্রকাশ ও প্রচার করে থাকে।



সন্তান জন্মকালীন বিষণ্ণতা, পারিবারিক সমস্যা ও সহিংসতা, দৈনন্দিন জীবনের মানসিক চাপ, কর্মক্ষেত্রের সমস্যার ফলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ এ ধরণের বিভিন্ন প্রসঙ্গে বিভিন্ন ভাষায় এসব প্রকাশনা অভিবাসীদেরকে এ সমস্যার বিষয়টি বুঝতে এবং প্রতিকারের উদ্যোগ নিতে সহায়তা করে। এসবের মাঝে প্রচুর সংখ্যক প্রকাশনা আরবী, চাইনিজ, জার্মান, গ্রীক, ইটালিয়ান, স্প্যানিশ, উর্দু, হিন্দি, পাঞ্জাবী, ভিয়েতনামিজ, ইন্দোনেশিয়ান, আফগানি দাড়ি, তামিল, তুর্কি, কোরিয়ান, থাই, সামোয়ান, টোঙ্গান, সোয়াহিলি, পোলিশ, মেসিডোনিয়ান এসব ভাষাতে দেখা যায়।



অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো এসব হাজারো উপাদানের মাঝে তন্ন তন্ন করে খুঁজে বাংলাভাষাতে কেবলমাত্র তিনটি প্রাথমিক পর্যায়ের প্রকাশনা পাওয়া গেছে। ট্রান্সকালচারাল মেন্টাল হেলথ সেন্টার নামক এনএসডব্লিউর সরকারী প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে মানসিক সুস্থতা যাচাই এর জন্য কেসলার-টেন নামের একটি প্রাথমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাংলা ভাষায় অনুদিত করা আছে। এর পাশাপাশি একই ওয়েবসাইটে ২০১৩ সালের মানসিক স্বাস্থ্য মাস উদযাপন উপলক্ষে একটি লিফলেট এবং মানসিক সেবা কার জন্য উপযোগী ও প্রয়োজনীয় সে বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত প্রকাশনা দেয়া আছে বাংলা ভাষায়। সবচেয়ে বেশি দুঃখের বিষয় হলো এ তিনটি প্রকাশনাতেই ভাষার মান এতোটাই আনাড়ি এবং খটমটে যে একজন বাংলাভাষী মানুষ এসব পড়তে গিয়ে আগ্রহ হারিয়ে সম্ভবত বরং ইংলিশেই এ বিষয়ে তথ্যমূলক প্রকাশনা পড়তে আগ্রহী হবে।



এ সমস্যার সমাধানে বাংলাভাষী মানুষদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। সরকারী সংস্থাগুলো যখন মাঠপর্যায়ের তথ্যের মাধ্যমে দেখতে পাবে বাংলাভাষী কমিউনিটির জন্য এ ধরণের প্রকাশনার প্রয়োজন রয়েছে তখন তারা নিজেরাই বাংলায় অধিকতর অনুবাদ এবং প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এমনকি বাংলাদেশী ও বাংলাভাষী অনেক চিকিৎসক অস্ট্রেলিয়ায় দক্ষতা ও সুনামের সাথে কাজ করলেও মানসিক সুস্থতা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বাংলাভাষী চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল।



সিডনিতে মানসিক সমস্যা নিয়ে কাজ করা বাংলাভাষী পেশাজীবিদের একজন কানিতা আহমেদ। তিনি এনএসডব্লিউ হেলথ বিভাগে বর্তমানে কালচারাল সাপোর্ট ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়াও তার রয়েছে এক্রেডিটেড মেন্টাল হেলথ ইনস্ট্রাকটর হিসেবে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। প্রবাসীদের মানসিক সমস্যা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, নতুন একটি দেশে নতুন পরিবেশে বর্ধিত পরিবারের সহায়তা ছাড়াই নানা আর্থিক, সামাজিক ও পেশাগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া যে কোন মানুষের জন্যই একটি কঠিন কাজ। এ সময় অনেকেই বাস্তবতাকে মেনে নিতে পারেন না। তখন অবচেতনে অতীতমূখী হয়ে তারা ডিপ্রেশন বা হতাশায় ভুগতে শুরু করেন, অথবা অনেকে ভবিষ্যতের নানা আশংকার চাপে এংজাইটি বা উদ্বেগেও ডুবে যান। এছাড়া স্ট্রেস বা মানসিক চাপও বর্তমান সময়ে অনেক মানুষের মাঝে দেখা যায়।



মেন্টাল হেলথ ফার্ষ্ট এইড অস্ট্রেলিয়া নামের ন্যাশনাল নন-প্রফিট অর্গানাইজেশনের একজন সক্রিয় কর্মী কানিতা আহমেদের মতে এ ধরণের সমস্যা অনুভব করলে কোন দ্বিধা ছাড়াই একজন পেশাদার মানুষের সহায়তা নেয়া উচিত। তিনি বলেন, এছাড়াও সমাজের প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব আছে তার আশেপাশের মানুষদের প্রতি খেয়াল রাখার। অনেক সময় একজন চুড়ান্ত হতাশাগ্রস্থ মানুষ কথার ছলে জীবনের অর্থহীনতার কথা বলেন, এসব বিষয় খেয়াল করা উচিত। অথবা খেয়াল করা উচিত একজন মানুষ কেন মাত্রাতিরিক্ত নিঃসঙ্গ অবস্থায় থাকতে চাচ্ছে। এসব কারণেই পরস্পর পরস্পরের প্রতি খেয়াল রাখার সংস্কৃতি চালু করতে অস্ট্রেলিয়াতে উৎসাহ দেয়া হয় সবাইকে কুশল বিনিময় করতে, জিজ্ঞাসা করতে আর ইউ ওকে? 



এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশীদের মাঝে প্রচারণা এবং সচেতনতার অভাবের ফলে প্রশ্ন উঠতে পারে, এর অর্থ কি এই যে বাংলাভাষী কমিউনিটিতে মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ কিংবা হতাশা এ ধরণের সমস্যা গুলো কম? বাংলাদেশী কমিউনিটির মাঝে অনেক সময় একটি প্রচলিত ধারণা দেখা যায় যে মানসিক সমস্যা হলো যারা এ বিষয়গুলো নিয়ে অনুভূতিপ্রবণ, তাদের একটি সমস্যা। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু পরিচালিত ২০০৭ সালের এক জরিপে দেখা যায় প্রায় ১৬% বাংলাদেশী কোন না কোন মানসিক অসুস্থতার ভুক্তভোগী। এর অর্থ হলো প্রতি ৬ জনের মাঝে ১ জন বাংলাদেশী তাদের জীবদ্দশার কোন না কোন সময়ে এ সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে।



এর বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ কর্তৃক একই ২০০৭ সালের ন্যাশনাল সার্ভে অফ মেন্টাল হেলথ এন্ড ওয়েংবিয়িং এর তথ্য অনুযায়ী ১৬ থেকে ৮৫ বছর বয়স্ক অস্ট্রেলিয়ানদের ২০% মানুষ পূর্ববর্তী বছরের কোন না কোন সময় মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ছিলো। এর অর্থ দাঁড়ায় প্রতি ৫ জনে ১ জন অস্ট্রেলিয়ান মানসিক সমস্যায় ভুগেছে। এ থেকে পরিস্কারভাবেই প্রমাণ হয় আর্থসামাজিক অবস্থা কিংবা পরিবেশের ভিন্নতা থাকলেও মানসিক অসুস্থতার বিস্তারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশী অথবা অস্ট্রেলিয়ানদের মাঝে তেমন বড় কোন ফারাক নেই। একই অবস্থা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা কিংবা আমাদের প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান সহ অন্যান্য আরো অনেক দেশের ক্ষেত্রেই প্রায় কাছাকাছি হারে বিদ্যমান।



প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির বাস্তবতাও কিন্তু এমন কোন ইঙ্গিত দেয় না যে বাংলাদেশীদের মাঝে এ সমস্যা কম হতে পারে। ক্রমবর্ধমান বিবাহবিচ্ছেদের হার, পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা, সন্তানের সাথে পিতামাতার দুরত্ব, এমনকি আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনা বর্তমানে বাংলাদেশী কমিউনিটির মাঝে ঘটছে। প্রচুর মানুষ ভুগছেন একাকীত্ব, বিষণ্ণতা ও হতাশাবোধে। তাদের মানসিক শক্তি তিলে তিলে ধ্বসে যাচ্ছে, এমনকি যার প্রভাব পড়ছে শারীরীক সুস্থতার উপরেও। কিন্তু অনেক সময় খুব কাছে থেকেও আমরা বুঝতে পারছি না এ সমস্যার অস্তিত্ব ও ভয়াবহতা।



এ সমস্যার সমাধানে তাই সর্বপ্রথম পদক্ষেপ হলো সমস্যার অস্তিত্বকে স্বীকার করে নেয়া এবং ন্যুনতম প্রয়োজন বোধ করলেই কোন সংকোচ ছাড়া বিশেষজ্ঞের সাহায্য পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা। আর তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন আমাদের সবার মাঝে মানসিক সুস্থতা ও সমস্যা প্রসঙ্গে সচেতনতা ও তথ্যনির্ভর জ্ঞান বৃদ্ধি করা।



 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top