সিডনী রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


শীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ : আইসিডিডিআরবিতে প্রতিদিন ভর্তি ৬০০ শিশু


প্রকাশিত:
২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ২৩:১২

আপডেট:
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:০৭

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: শীতের প্রকোপে ডায়রিয়া রোগ বাড়ছে। শীতে সক্রিয় রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এ কারণে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) ভর্তি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ২৫ জন শিশু সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছে। আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। এ হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ জন শিশু চিকিৎসা নিতে আসছে।

এ ছাড়া শীতের কারণে সর্দিজ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা, অ্যালার্জি ও চোখ ওঠা রোগীদের সংখ্যাও বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে।

বুধবার আইসিডিডিআরবিতে সরজমিনে দেখা যায়, ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যাই বেশি। গত চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৪ বছরের শিশু তাহসীন। তার মা নিপা জানান, ২১ ডিসেম্বর থেকেই পানির মতো পাতলা পায়খানা হতে থাকে। অবস্থার আরও অবনতি হলে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাহসীনকে। টানা তিনটি স্যালাইন দিতে হয় তাকে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আইসিডিডিআরবিতে স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী ভর্তি হলেও এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৫৫০ থেকে ৬০০ জন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই শিশু। শৈত্যপ্রবাহে শীত বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৫ থেকে ৬ দিনে এর সংক্রমণ চলে শরীরে। এ কারণে ৫ থেকে ৬ দিন শিশুদের চিকিৎসা দিতে হয়।

শীত কমে গেলে রোগীর সংখ্যা কমে যাবে। তবে রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন ৭৫০ থেকে ৮০০ হলে তা মহামারী আকার ধারণ করবে। গ্রীষ্ম বা বর্ষায় ডায়রিয়ার কারণ থাকে ব্যাকটেরিয়া। আর আমাদের দেশে শীতকালে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এটা মুখের মধ্য দিয়েই শিশুদের পাকস্থলীতে যায়। বড়দের ক্ষেত্রে রোটা ভাইরাস তাদের খুব একটা দুর্বল করতে পারে না। তবে শিশুরা যথাসময়ে চিকিৎসা না পেলে মারাও যেতে পারে। এ কারণে ডায়রিয়া দেখা দিলে শিশুদের বেশি বেশি স্যালাইন খাওয়াতে হবে।

আইসিডিডিআরবির চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের ডায়রিয়া বাড়ছে। শীতের কারণে শিশুরা রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় তাদের ডায়রিয়া রোগ দেখা দিচ্ছে। এ কারণে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ৫৫ শতাংশই রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে অসুস্থ হচ্ছে। ৫ বছরের কম বয়সি শিশুরা এখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এর মধ্যে ২ বছরের কম বয়সিরা আরও বেশি ঝুঁকিতে। তাই শিশু কি খাচ্ছে, মুখে আঙুল দিচ্ছে কি না, সেটি খেয়াল রাখতে আর বাইরে থেকে কেনা খাবার না খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব জীবাণু তাপমাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত শীতকালে তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ও মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। ফলে এ সময় মানুষ বিশেষ ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলোটাইসিস, ব্রংকিউলাইটিস, সাইনোসাইটিস, বাত, আর্থাইটিস ও চামড়ার শুষ্কতা অন্যতম। এসব রোগ থেকে সুরক্ষায় শীত এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শীতজনিত রোগে গত দুমাসে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই লাখ। এ পর্যন্ত ৪৯ জন মারা গেছেন।

ঢাকার বাইরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শিশু রোগীরা শ্বাসতন্ত্র ও ডায়রিয়া সমস্যা নিয়ে আসছেন। অনেক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তন এবং তীব্র শীতের কারণে এ দুটি রোগে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন-আয়ের শিশুদের মধ্যে যারা অপুষ্টিতে ভুগছে তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top