সিডনী সোমবার, ২০শে মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


বিশের পরের কথা


প্রকাশিত:
২৪ জুন ২০১৮ ০৮:৪৬

আপডেট:
২০ মে ২০২৪ ২২:৩৫

বিশের পরের কথা

তুলির বয়স ১১ বছর ৬ মাস। ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী সে। একদিন স্কুলে থাকাকালীন তার পিরিয়ড হয়ে যায়। কিন্তু কেবল না জানার কারণে সে হয়ে পড়ে আতঙ্কিত। কাপড়ে সহসাই রক্তের দাগ কী করে এল, কেনই বা এমন হচ্ছে তা সে বুঝতে পারে না। বাড়িতে ফিরে মাকে জানাতেই মা সব ভয় কাটিয়ে দিলেন। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকাল অর্থাৎ ১০-১৬ বছর বয়সের মধ্যে যেকোনো সময় মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হয়। সাধারণত প্রথম পিরিয়ড শুরুর গড় বয়স ১৩ বছর ধরা হয়। তাই কাছাকাছি বয়সে পা রাখার পর পরই পিরিয়ডের স্বাভাবিকতা, এ সম্পর্কে যাবতীয় ধারণা দেয়া উচিত মেয়েকে। এতে করে পিরিয়ড সম্পর্কিত ভয় ও ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে না।



জীবনে প্রথম ঋতুস্রাবকে ‘মেনার্ক’ (গবহধত্পযব) বলে। বয়ঃসন্ধিক্ষণে প্রতি মাসের রক্তক্ষরণকে বলা হয় মাসিক ঋতুস্রাব। একজন সুস্থ নারীর দুটি পিরিয়ড বা ঋতুচক্রের মধ্যকার দূরত্ব ২৬-৩০ দিন হতে পারে। তবে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২১-৩৫ দিনের মধ্যে হলেও একে স্বাভাবিক বলেই ধরে নেয়া হয়। পিরিয়ড চলাকালীন স্থায়িত্বকাল দুই-সাতদিন পর্যন্ত হতে পারে। এ সময়ে রক্তস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবে গড়ে ৩৫-৪৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে ৫-৮০ মিলিমিটার পর্যন্ত রক্তস্রাবকে স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য করা হয়। কারো কারো ঋতুস্রাবের সময় তলপেট, পিঠ, কোমরে ব্যথা হতে পারে। তবে এ ব্যথা সাধারণত ১২ ঘণ্টায় বেশি স্থায়ী হয় না।



জীবনের প্রথম ঋতুস্রাবের স্থায়িত্বকাল সাতদিনের বেশিও হতে পারে। শুরুর প্রথম কয়েক বছর অনিয়মিতভাবে হতে পারে (তিন-চার মাস পরপর)। পরিমাণও বেশি হতে পারে। সাধারণত এ সমস্যাগুলো মাসিক ঋতুস্রাব শুরুর দুই-তিন বছরের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। তবে তা যদি অস্বাভাবিক হয়, তাহলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। তবে পিরিয়ড চলাকালীন সঠিক নিয়মে না চললে তা বড় কোনো স্ত্রী অসুখের কারণ হতে পারে। এ সময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের সময় পুরনো কাপড় ব্যবহার করতে দেয়া হয়। আর এ ব্যবহার করা কাপড় শুকানোর জন্য রোদে দেয়ার পরিবর্তে আড়াল রয়েছে এমন স্থানে রাখা হয়। ফলে তা স্যাঁতসেঁতে রয়ে যায়। এসব কাপড় ব্যবহারে নারীদের প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ বা ইনফেকশনের আশঙ্কা অনেকাংশে বেড়ে যেতে পারে।



তাই এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর উপায় হচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা। আর জীবনের প্রথম পিরিয়ড থেকেই মেয়েদের স্যানিটারি প্যাড অথবা ট্যাম্পুন (ঞধসঢ়ড়হ) ব্যবহার করা শেখাতে হবে। ট্যাম্পুন আমাদের দেশে কম ব্যবহার করা হয়। স্রাবের সময় স্যানিটারি প্যাড নিয়মিত ও বারবার বদলাতে হবে। প্রতিদিন গোসল করতেই হবে। তবে এ সময়ে পানি, তরল খাবার, শাক-সবজি, ফল, বিশেষ করে লৌহজাতীয় খাবার বেশি খেলে ভালো হয়।



মায়েদের উচিত প্রথম ঋতুস্রাবের সময়ে মেয়েকে জড়তা কাটিয়ে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করা। সাধারণত ঋতুস্রাবের বিষয়টিকে গোপন করার চেষ্টা করা হয়— যেন এটি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। যা মোটেও ঠিক নয়। তাকে বোঝাতে হবে পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব খুবই সাধারণ একটা শারীরিক ঘটনা। এটি কোনো রোগ নয়। সুতরাং এত ভয়ের অথবা লজ্জার কিছু নেই।



 



ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী



সহযোগী অধ্যাপক



স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগ



কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top