কৃষকদের অজ্ঞ ও দেশবিরোধী বলে বিতর্কে বিজেপির সাধ্বী প্রজ্ঞা


প্রকাশিত:
১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ২৩:০৩

আপডেট:
২২ এপ্রিল ২০২৫ ০০:৫৯

 

প্রভাত ফেরী: ভারতে বিক্ষোভকারী কৃষকদের ‘দেশবিরোধী’ এবং শূদ্রদের ‘অজ্ঞ’ হিসেবে উল্লেখ করে আবারো বিতর্কিত হলেন বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর। হিন্দু বর্ণ প্রথার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ধর্মশাস্ত্রে সমাজ ব্যবস্থার জন্য চারটি বর্গ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ক্ষত্রিয়দের ক্ষত্রিয় বললে খারাপ লাগে না। ব্রাহ্মণকে ব্রাহ্মণ বললে খারাপ নাগে না। বৈশ্যকে বৈশ্য বললে খারাপ লাগে না। শূদ্রকে শূদ্র বললে খারাপ লাগে। এর কারণ কী? অজ্ঞতা। ওরা বুঝতেই পারে না।

ক্ষত্রিয় মহাসভা আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে প্রজ্ঞা এমন অনেক কিছু বলেছেন, যা ভারতীয় সংবিধানের মূল আদর্শ ও ধারণার বিপরীত। ভারতের সংবিধান অনুসারে, যে কোনো নাগরিকের যে কোনো পেশায় থেকে জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে। প্রজ্ঞার মতামত তার উল্টো। তার পরামর্শ, প্রত্যেকের উচিত নিজ জাতি বা বর্ণের জন্য নির্দিষ্ট পেশা বা বৃত্তিতে নিয়োজিত থাকা।

বর্তমানে ভারতের কৃষকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি পশাসনের আনা তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে। কৃষি ক্ষেত্রে করপোরেটদের প্রবেশের পথ খুললেও ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের কমে যেন তারা ফসল কিনতে না-পারে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করাও তাদের অন্যতম লক্ষ্য। নিজ অধিকার ও সুরক্ষার জন্য আন্দোলনে নামা কৃষকরা প্রজ্ঞার মতে ‘দেশবিরোধী’। তিনি বলেছেন, কৃষকের পরিচয়ে যারা প্রতিবাদ করছেন, তারা দেশবিরোধী। তারা আসলে কৃষকই নন। কৃষকের ছদ্মবেশে কংগ্রেসের লোকজন ও বামপন্থীরাই দেশবিরোধী কথা বলছেন, ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দিল্লির শাহিন বাগে ঠিক এমনটাই করেছিলেন তারা বলেও মন্তব্য করেন প্রজ্ঞা।     

প্রজ্ঞা আরো বলেন, নিজেদের দায়িত্ব বুঝতে হবে ক্ষত্রিয়দের। আরো বেশি সংখ্যক সন্তান উৎপাদন করে তাদের সেনাবাহিনীতে পাঠাতে হবে। যাতে তারা দেশের জন্য লড়তে পারে ও মজবুত করতে পারে দেশের সুরক্ষা বিভাগ। কাজ বা শিক্ষায় সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে তর্ক দীর্ঘদিনের। আর্থিকভাবে সচ্ছল হলেও দলিতদের সমাজে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়। মূলত এই যুক্তিতেই সংবিধানে জাতপাত ভিত্তিক সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল এবং এখনও তা বহাল রয়েছে। প্রজ্ঞার দাবি, জাতপাতের ভিত্তিতে নয়, শুধুমাত্র আর্থিকভাবে অনগ্রসরদের জন্য সংরক্ষণ থাকা উচিত। 

বিতর্কিত মন্তব্য করে প্রজ্ঞার শিরোনামে আসা ও পরে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। প্রজ্ঞার বিরুদ্ধে এক সময় তদন্ত  করেছিলেন হেমন্ত কারকারে। ২৬/১১ হামলার মোকাবিলা করতে গিয়ে এটিএস প্রধান হেমন্ত প্রাণ দিলে, সাধ্বী বলেছিলেন, তার ‘অভিশাপে’ এই মৃত্যু।

এজন্য ক্ষমা চাইতে হয় তাকে। নাথুরাম গডসেকে ‘দেশপ্রেমিক’ বলেও দু’বার সংসদে ক্ষমা চেয়েছেন অতীতে। গোমুত্র খেয়ে তার ক্যান্সার সেরেছে বলে দাবি করে হাসির পাত্রও হয়েছেন বিজেপির এই সাংসদ।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top