সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


ডিএসপি কন্যাকে ইন্সপেক্টর বাবার স্যালুট - মুহূর্তেই ছবি ভাইরাল : মু: মাহবুবুর রহমান  


প্রকাশিত:
৭ জানুয়ারী ২০২১ ২১:২৬

আপডেট:
৭ জানুয়ারী ২০২১ ২২:৪৫

ছবিঃ মেয়ে ইয়েন্দুলুরু জেসি প্রশান্তি এবং বাবা শ্যামসুন্দর

 

এক নারী ডিএসপি (DSP-Deputy Superintendent of Police)-কে স্যালুট করছেন তারই অধীনস্ত সার্কেল ইন্সপেক্টর (Circle Inspector)। আপাতদৃষ্টিতে এই ছবিতে বিশেষ কোনো বিশেষত্ব না থাকলেও এর নেপথ্যের গল্পই মন জয় করেছে সবার। কারণ ছবিতে যে দুজন রয়েছেন, তাঁরা আসলে সম্পর্কে বাবা-মেয়ে। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ পুলিশ (Andhra Pradesh Police)-এর পক্ষ থেকে ছবিটি টুইটারে পোস্ট করতেই তা নিমেষে ভাইরাল হয়ে যায়। 

১৯৯৬ সাল থেকে ওয়াই শ্যামসুন্দর (Y Shyam Sundar) চাকুরী করছেন ভারতের পুলিশ বিভাগে। বর্তমানে তিনি সার্কেল ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত। স্বপ্ন ছিল তাঁর মেয়ে বড় পুলিশ অফিসার হবে। বাবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তার মেয়ে ইয়েন্দুলুরু জেসি প্রশান্তি (Yendluru Jessy Prasanthi) ২০১৮ সালে পুলিশ বিভাগে ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট অব পুলিশ- ডিএসপি হিসেবে যোগদান করেন। ডিএসপি পদমর্যাদায় বাবার পদের চেয়ে অনেক ওপরে। 

এতদিন চাকুরী করলেও ডিউটিরত অবস্থায় বাবা-মেয়ে কখনো মুখোমুখি হননি। কিন্তু এবছর ৪ঠা জানুয়ারী এক অনুষ্ঠানে দুজনের দেখা হলে নিয়ম অনুযায়ী বাবা তাঁর বস অর্থাৎ ডিএসপি কন্যাকে স্যালুট করেন। ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভুলে দায়িত্বে পালনে আন্তরিক বাবা-মেয়ের এমন অসাধারণ সেই মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করেন অন্য কর্মকর্তারা। সেই ছবি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 

 

 “ফার্স্ট ডিউটি মিট” (1st Duty Meet) নামক ওই অনুষ্ঠানে গত ৪ঠা জানুয়ারী রাজ্য পুলিশের সব কর্মীকে একে অপরের সঙ্গে পরিচয়  করিয়ে দেয়া হয়। সেখানেই মেয়ের সামনে এসে ‘বাবা’ হিসেবে নয়, বরং সার্কেল ইন্সপেক্টর হিসেবেই ডিএসপিকে স্যালুট জানান শ্যামসুন্দর। জবাবে মেয়েও বাবাকে স্যালুট জানায়। আর এই দৃশ্য দেখেই আপ্লুত গোটা পুলিশ বিভাগ।  

মেয়েকে দেখে রক্তের সম্পর্ক ভুলে পেশাদারিত্বের পরিচয় দেন বাবা। দুজনই পরে ছিলেন পুলিশের ইউনিফর্ম, মুখে ছিল হাসি। গুন্টুর জেলার ডিএসপি মেয়েকে দেখে কল্যাণী দাম পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের বর্তমানে সার্কেল ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত বাবা স্যালুট ঠুকেন। মুখে বলেন, 'নমস্কার ম্যাডাম'। বাবাকে স্যালুট ঠুকতে দেখে মেয়ের চোখ ছলছল করে ওঠে, মুখে লেগে ছিল হাসি। তিনিও জবাবে বলেন, 'ধন্যবাদ বাবা'।  

অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের ছবি সংবলিত টুইটটি ভাইরাল হলে তা মিডিয়ার নজরে আসে। জি নিউজ ইন্ডিয়াকে বাবা শ্যাম সুন্দর বলেন, “প্রথমবারের জন্য কর্তব্যরত অবস্থায় মেয়ের মুখোমুখি হলাম। একসঙ্গে কাজ করতে পারায় আমি গর্বিত। মেয়ে আমার থেকে সিনিয়র, তাই স্যালুট করেছি। আমি বিশ্বাস করি আমার মেয়ে তার কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করবে এবং গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াবে।“ 

মেয়ে ইয়েন্দুলুরু জেসি প্রশান্তি বলেন, “আমার বাবা একজন রোল মডেল এবং আমার জন্য অনুপ্রেরণা। তিনি বছরের পর বছর ধরে পুলিশ বিভাগে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। এই প্রথম কর্তব্যরত অবস্থায় আমরা মুখোমুখি হলাম। একে অপরকে দেখে আমরা দুজনেই সম্পূর্ণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। বাবার আদর্শ ধারণ করে আমি অবশ্যই আমার কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করবো এবং মানুষের পাশে দাঁড়াবো।“ 

বিষয়টি নিয়ে তিরিপাটি জেলার এসপি রমেশ রেড্ডি বলেন, “এমন অসাধারণ দৃশ্য আমরা সাধারণত সিনেমায় দেখে থাকি। হিন্দি মুভি 'গঙ্গাজল'-এর কথা আমার খুব মনে পড়ে। আমি প্রশান্তিকে ব্যক্তিগতভাব অভিবাদন জানাতে চাই, সে তাঁর বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে। তার জন্য শুভকামনা।“ 

 

মু: মাহবুবুর রহমান  
নিউজিল্যান্ডের মেসি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top