প্রথমবারের মতো সর্বসম্মতিক্রমে রোহিঙ্গা বিষয়ক প্রস্তাব পাস করলো জাতিসংঘ : মু: মাহবুবুর রহমান


প্রকাশিত:
৩০ নভেম্বর ২০২১ ০০:৪৭

আপডেট:
২২ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:০৩

 

জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো সর্বসম্মতিক্রমে রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। ২০১৭ সালে নতুনকরে রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকে প্রতিবছর জাতিসংঘে রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা বিষয়ক প্রস্তাব গৃহীত হয় ভোটের মাধ্যমে, যেখানে কোনো না কোনো দেশ বিরোধিতা করে। তবে এ বছরই প্রথম সর্বসম্মতিক্রমে রোহিঙ্গা বিষয়ক প্রস্তাবটি গৃহীত হলো।

স্থানীয় সময় বুধবার (১৭ নভেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রস্তাবটি যৌথভাবে উত্থাপন করে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন -ওআইসি) ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।  

প্রস্তাবে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করা, বাংলাদেশের সাথে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করা, এবং মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতসহ জাতিসংঘের সকল মানবাধিকার ব্যবস্থাপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবটিতে বিশ্বের ১০৭টি দেশ সহপৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে, যে সংখ্যা ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসি ছাড়াও প্রস্তাবটিতে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, সুইজারল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন ভৌগলিক অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশ সমর্থন জুগিয়েছে এবং সহপৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে।

প্রস্তাবে প্রাথমিকভাবে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং ১ লা ফেব্রুয়ারি ২০২১-এ মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষাপট এর মতো বিষয়গুলোর প্রতি। এছাড়া কক্সবাজারের অত্যন্ত জনাকীর্ণ আশ্রয় ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাষানচরে স্থানান্তর এবং এ লক্ষ্যে সেখানে অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তৈরি করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যে প্রচেষ্টা ও বিনিয়োগ করেছে তারও স্বীকৃতি দেয়া হয় প্রস্তাবে।

প্রস্তাবটিতে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মধ্যকার সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরকে স্বাগত জানানো হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে মিয়ানমার, ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপির মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারকটি নবায়ন ও তার কার্যকর বাস্তবায়নের কথাও প্রস্তাবটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। 

প্রস্তাবটি অনুমোদনের সময় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, ‘‘জাতিসংঘে এবারই প্রথম সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হল রোহিঙ্গা রেজুলেশন, যা এই সঙ্কটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন।’’

রাবাব ফাতিমা আরও বলেন, ‘‘এবারের প্রস্তাবটি নিজভূমি মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে, যা দীর্ঘস্থায়ী এই সমস্যার টেকসই সমাধানে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একটি শক্তিশালী ম্যান্ডেট নিয়ে এবারের প্রস্তাব গৃহীত হলো, যা রোহিঙ্গাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করবে। যে জন্য তারা পথ চেয়ে বসে আছে।’’

প্রস্তাব পাসের প্রক্রিয়ার সময় জাতিসংঘে মিয়ানমারের প্রতিনিধি বলেন, সামরিক জান্তার দমন-পীড়নে দেশের সকল নাগরিককে যে ভুগতে হচ্ছে, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। অভ্যুত্থানের আগে ও পরে সেনাবাহিনীর চালানো সন্ত্রাস ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিবরণও তিনি তাঁর বক্তৃতায় তুলে ধরেন। মার্টিন লুথার কিংয়ের বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “কোথাও যদি অবিচার হয়, তা সুবিচারের প্রতি হুমকি তৈরি করে সব জায়গায়। আমরা সুবিচারের জন্য লড়ছি।”

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর অভিযানের মুখে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।

 

মু: মাহবুবুর রহমান
নিউজিল্যান্ডের মেসি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top