ভারতীয় ইতিহাসবিদ রণজিৎ গুহ আর নেই
 প্রকাশিত: 
 ২৯ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:৪৭
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ০৬:৫০
 
                                
প্রখ্যাত ভারতীয় ইতিহাসবিদ রণজিৎ গুহ আর নেই। আজ ভোরে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাতে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আর মাত্র ২৪ দিন পার হলে শতবর্ষ পূর্ণ করতেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন রণজিৎ গুহ। নানান রোগ ও বয়সের জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা উডসের বাসভবনে স্ত্রী মেখঠিল্ড এবং পরিচর্যাকারীরা শেষ সময়ে তাঁর পাশে ছিলেন।
রণজিৎ গুহ ১৯২৩ সালে ২৩ মে বরিশালের বাখরগঞ্জের সিদ্ধকাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশভাগের সময় পারিবারিকভাবে কলকাতায় চলে যান। কলকাতায় এসে সিপিআইয়ের সক্রিয় সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে যুক্ত হন রণজিৎ। প্রেসিডেন্সি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র থাকাকালে ১৯৪৭ সালে ডিসেম্বরে প্যারিসে বিশ্ব ছাত্র সম্মেলনে যোগ দেন। এরপর দলের প্রতিনিধি হিসেবে ভ্রমণ করেন সাইবেরিয়া, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও চীন। ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরিতে সোভিয়েত অনুপ্রেবেশের বিরোধিতায় তিনি দল ছাড়েন। ১৯৫৯ সালে তিনি ভারত থেকে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান এবং সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে রিডার পদে যোগ দেন। পরে অবসরের জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন অস্ট্রিয়া।
তিনি দলীয় মুখপত্রে ‘মেদিনীপুরের লবণশিল্প’ নামে একটি লেখা লেখেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পেছনের তাত্ত্বিক ভাবনা নিয়ে লেখেন অসম্পূর্ণ ধারাবাহিক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে গবেষণার ইচ্ছা থাকলেও হয়নি। এরপর পাড়ি জমান ইংল্যান্ডের সাসেক্সে। সেখানকার গবেষণা ‘আ রুল অব প্রপার্টি’ নামে পরে প্রকাশিত হয়। ১৯৮০ সালে সাবঅলটার্ন বা নিম্নবর্গ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হলেন রণজিৎ গুহ, পরের বছর থেকে তা অক্সফোর্ডও প্রকাশ করতে থাকে। দেশ থেকে দূরে থাকলেও রণজিতের ছাতার নীচে দীপেশ চক্রবর্তী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্র পাণ্ডে, শাহিদ আমিন, গৌতম ভদ্র, গায়ত্রী স্পিভাক চক্রবর্তী প্রমুখ নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চা করেছিলেন। ঔপনিবেশিক ভারতে কৃষক বিদ্রোহ নিয়ে তাঁর আকর গ্রন্থে দেশের গণতান্ত্রিক বোধে কৃষকের ভূমিকা মেলে ধরেন রণজিৎ।
তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, ‘প্রবাদপ্রতিম ঐতিহাসিক রণজিৎ গুহর মৃত্যুতে আমি আমার গভীরতম শোক প্রকাশ করছি। অস্ট্রিয়ায় তাঁর বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন, মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। রণজিৎ গুহ ভারতের কৃষক আন্দোলন নিয়ে সূদূরপ্রসারী কাজ করেছেন। তিনি নিম্নবর্গীয় ইতিহাস চর্চার ধারা গড়ে তোলেন এবং বেশ কিছু সমমনোভাবাপন্ন তরুণ ঐতিহাসিককে নিয়ে একটি শক্তিশালী ঐতিহাসিক গোষ্ঠী গড়ে তোলেন। এই নিম্নবর্গীয় ইতিহাস চর্চার প্রভাব পড়ে সারা পৃথিবীতে।ঐতিহাসিক গুহ পৃথিবীর নানা জায়গায় পড়িয়েছেন, নানা জায়গায় তাঁর ছাত্র ও অনুরাগীরা আছে। ঐতিহাসিক গুহর প্রয়াণে জ্ঞানচর্চার পৃথিবীতে অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি রণজিৎ গুহর স্ত্রী মেখঠিল্ড গুহসহ তাঁর সকল আত্মীয় পরিজন, ছাত্রছাত্রী ও অনুরাগীদের সকলকে আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’
বিষয়:

 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: