কলকাতার রাস্তায় ক্রমশ বাড়ছে দুর্ঘটনা
প্রকাশিত:
৯ জানুয়ারী ২০২৫ ১১:৩৩
আপডেট:
১৬ জানুয়ারী ২০২৫ ২২:২৬
কলকাতার রাস্তায় কি ক্রমশই বাড়ছে বেপরোয়া চাকার দৌরাত্ম্য? খোদ পুলিশের দেওয়া তথ্যই সে দিকে জোরালো ভাবে ইঙ্গিত করছে। আর পথের অভিজ্ঞতা বলছে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে বেলাগাম চাকার শিকার হচ্ছেন পুলিশকর্মীরাও।
মঙ্গলবার দু’টি পৃথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক পুলিশকর্মী এবং এক চিকিৎসকের। টালিগঞ্জে ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় মারা যান রাজ্য পুলিশের এএসআই ঋতুপর্ণা দে (৩৭)। ট্রাম ডিপোর সামনে ট্রামলাইনে স্কুটারের চাকা স্কিড করে পড়ে গেলে পিছন থেকে দ্রুতগতিতে আসা একটি তেলের ট্যাঙ্কার ধাক্কা মারে ঋতুপর্ণাকে।
অন্যদিকে হাওড়ার সাঁতরাগাছি ব্রিজে বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় মারা যান চিকিৎসক শুভাশিস ঘোষ (৪০)। তিনি একটি ডাম্পারকে ওভারটেক করতে গেলে সেটি তাঁকে ধাক্কা মারে। শুভাশিস ডিভাইডারে পড়ে গেলে ব্রিজে থাকা একটি বাস তাঁকে রেলিংয়ের সঙ্গে পিষে দেয়।
এখানেই শেষ নয়। মঙ্গলবার রাতে বাসন্তী হাইওয়েতে মোটরবাইকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় মমতা দলুই (৩৩) নামে এক পথচারীর। পুলিশ সূত্রের খবর, বছরদুয়েকের ছেলেকে নিয়ে রাস্তা পেরোচ্ছিলেন মমতা। সেই সময়ে দ্রুতগতিতে আসা মোটরবাইকের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন দু’জনে। পুলিশ উদ্ধার করে দু’জনকে চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে নিয়ে গেলে মমতার মৃত্যু হয়। শিশুটি অবশ্য সুস্থ রয়েছে। পুলিশ মোটারবাইকের নম্বর প্লেট চিহ্নিত করতে পারলেও চালককে বুধবার রাত পর্যন্ত ধরতে পারেনি।
লালবাজারের তথ্য বলছে, কলকাতায় পথ দুর্ঘটনায় ২০২৩–এ মারা গিয়েছিলেন ১৫৯ জন। সেখানে ২০২৪ সালে মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছেছে ১৯১ জনে। অর্থাৎ, বৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মার দাবি, ‘ভাঙড় ডিভিশন যুক্ত হওয়ায় দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার কমাতে যা যা করণীয়, সবই করা হচ্ছে।’ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলি চিহ্নিত করার পাশাপাশি নজরদারি এবং প্রচারমূলক কর্মসূচি আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন সিপি।
লালবাজার সূত্রের খবর, শহরে পথদুর্ঘটনায় গত এক বছরে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের ৮০ শতাংশই বাইকচালক। এঁদের মৃত্যুর নেপথ্যে অন্যতম মূল কারণ হিসেবে উঠে আসছে হেলমেট না পরা এবং বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো। নিয়ম ভাঙার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি ‘মা’ এবং ‘এজেসি বোস রোড’–এর মতো উড়ালপুলে।
পুলিশের দাবি, কলকাতায় ১২ লক্ষ ১ হাজার ৩১২ জন মোটরবাইক ব্যবহার করেন। ২০২৪–এর ১ জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে বিনা হেলমেটে ধরা পড়ে জরিমানা দিতে হয়েছে ৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ৬১৭ জনকে। এঁদের মধ্যে একই চালক একাধিকবার জরিমানা দিয়েছেন। মোটের উপর পুলিশের হিসেবে প্রায় ৪০ শতাংশ চালকই হেলমেট পরেন না। শুধু বড়দিনেই হেলমেটহীন ১,৪৪৯ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। লালবাজারের এক কর্তার বক্তব্য, ‘আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। লাগাতার প্রচারও করছি আমরা। তার পরেও মানুষ সচেতন না-হলে আমাদের আর কী করার আছে।’
মোটরবাইকের পরেই বাসের ধাক্কায় গত বছর মৃত্যু হয়েছে সবচেয়ে বেশি মানুষের। এর পিছনে যাত্রী তোলাকে কেন্দ্র করে দু’টি বাসের রেষারেষি অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। পুলিশের দাবি, রেষারেষি বন্ধে বাসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় ঠিকই। কিন্তু যাত্রী সংখ্যার উপর চালক–কন্ডাক্টারের কমিশন নির্ভর করায় চালকদের মধ্যে ওভারস্পিডে গাড়ি চালানোর প্রবণতা কমছে না।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: