সিডনী মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ ২০২৪, ৫ই চৈত্র ১৪৩০


করোনা হওয়া মানেই মৃত্যু নয় : সেলিনা পারভীন


প্রকাশিত:
২০ জুলাই ২০২১ ০৭:৫৭

আপডেট:
১৯ মার্চ ২০২৪ ১৫:৪১

 

টিভিতে খবরের মাধ্যমে প্রথম যখন চীন দেশে করোনা নামক ব্যাধিটির আগমন বার্তা শুনলাম তখন রোগটি যে এত ভয়াবহ এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ হবে এটা স্বপ্নেও কখনো কল্পনা করিনি। ভয়াবহ এই অর্থে নয় যে এই রোগটা সেরে যাবার কোন সম্ভাবনা নেই তা কিন্তু নয়। আসলে ভয়াবহ এই অর্থে যে, এই রোগটা আর পাঁচটা সাধারণ রোগের মত নয়। এই অসুখটা যার হয় সে অন্য মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কারন এই রোগটা আক্রান্ত রোগীর স্পর্শ, হাঁচি কাশি থেকে ছড়ায়। তাই স্বাভাবিক ভাবেই রোগীকে অন্য সুস্থ মানুষ থেকে নিরাপত্তার স্বার্থেই নিজেকে দূরে রাখতে হয় এটাই একটা বেদনাদায়ক ভয়াবহ ব্যাপার। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চললেই এবং মনে জোর রাখলে করোনা নামক মহামারী রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই এই অসুখকে ভয় না পেয়ে মনে জোর রেখে যথাযথ চিকিৎসা এবং নিয়ম কানুন মেনে চলাই আমাদের সবারই উচিত।

এখন সাধারণ জ্বর গলাব্যথা মাথাব্যথা এসব হলেই মানুষের মনে আতঙ্ক ঢুকে যায়। আমরা সবাই ভীত হয়ে পড়ি করোনা ভয়ে। করোনা হলে যে আইসোলেশনে থাকতে হবে আপনজন থেকে। এটাই মনোকষ্টের আর মনোবল ভাঙার সবচেয়ে বড় কারন। যদি আপনি হসপিটালে নাও যান বাড়িতে থাকেন তবুও আপনাকে কোন এক ঘরে বা জায়গায় একা থাকতে হবে অন্যের থেকে, নিরাপত্তার স্বার্থে। নিজের বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান সবাই আপনার চোখের সামনে থাকলেও নিরাপত্তার স্বার্থে আপনি তাদের কাছে যেতে পারবেন না, ছুঁয়ে নিজের বাচ্চাকেও আদর পর্যন্ত করতে পারবেন না এটাই সবচেয়ে বড় কষ্ট। ডিজিটাল কায়দায় ভিডিও কল করে কি মনপ্রাণ ভরে ? তবুও আমাদের সবার স্বাস্হ্য সুরক্ষার সার্থে সেটাই মেনে নিতে হবে। মনে সাহস রেখে করোনার যে সমস্ত ওষুধ আছে তা খেতে হবে এবং নিয়মকানুন কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে তবেই আমরা অতি তাড়াতাড়ি নিশ্চয় ভাল দিনে ফিরে যেতে পারবো।

আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি রোজার ঈদের দুই দিন পর আমার জ্বর আসে সেই সাথে প্রচন্ড মাথা ব্যথা। আমি ভিষনভাবে ঘাবড়ায়ে যাই। মনে মনে ভাবি আমার কি করোনা হলো ? বাসায় আমার দুইটা বাচ্চা আর স্বামী ছাড়াও বৃদ্ধ শ্বশুর শ্বাশুড়ি থাকেন। তাদের সবার কথা চিন্তা করে আমি আলাদা ঘরে চলে যাই নিজেকে নিজেই বন্দী করে ফেলি। এখন আমার একমাত্র সম্বল এবং সঙ্গী মোবাইল ফোন। এটাও কিন্তু খুব একটা খারাপ না। একেবারে নিঃসঙ্গ জীবনে একজন সাথী তো আছে যে সবার সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করবে। তবে এই সময়টা এত বেশি মাথা ব্যথা করছিল যে ফোনেও কথা বলতে ভাল লাগতো না। এভাবে কেটে গেল দুই তিন দিন। পরে ভাবলাম করোনার টেষ্টটা করেই আসি এভাবে মনে করোনার ভয় নিয়ে থাকার চেয়ে টেষ্ট করাই ভাল। সিজনাল জ্বর মাথাব্যথা তো হরহামেশাই হয়। এখন করোনা আসাতে আমরা সবাই আতঙ্কিত জ্বর মাথাব্যথা হলেই ধরেই বসি এটা করোনা আর অযথা ঘাবড়ায়ে যাই। তিন চারদিনের মাথায় আমি হাসপাতালে গেলাম আমার স্বামীসহ এক ছোট ভাইয়ের সাথে। সেই ই টেষ্টের সব ব্যবস্হা করে দিল। টেষ্টের স্যাম্পল দিয়ে আসলাম আমি আর আমার স্বামী। যে কয়দিন টেষ্টের রেজাল্ট আসেনি ভীষন টেনশনে ছিলাম তবে মনে সাহস রেখেছিলাম যা হবার হবে। আর যদি করোনা হয়েই যায় তাহলে প্রয়োজনমত ওষুধ খাবো আর নিয়ম কানুন মেনে চলবো একটুও ঘাবড়াবো না। কয়দিন পর আমাদের টেষ্টের রেজাল্ট আসলো নেগেটিভ, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু এই কয়দিনের জ্বর আর বাড়তি মানসিক চাপ আমাকে ভিষনভাবে দূর্বল করে ফেলেছিল। তাই আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি জ্বর সর্দি কাশি মাথা ব্যথা হলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন না ধৈর্য্য ধরে নিরাপদে থেকে টেষ্ট করুন আর সেই অনুযায়ী মনে জোর রেখে তার চিকিৎসা করুন। 

তবে বয়স্ক আর শিশুদের প্রতি একটু বেশি নজর রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। বয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশুরা সাধারণত দূর্বল থাকে। বয়স্ক ব্যক্তিরা বিভিন্ন রোগে আগে থেকেই আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাই তাদেরকে বেশি সাবধানতার সাথে রাখা উচিত। 

করোনা যেহেতু ভাইরাস এটা সহসা একেবারে পৃথিবী থেকে চলে যাবে না। আমাদের সবাইকে মনে জোর রেখে তাই করোনা প্রতিরোধক সঠিক নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে তবেই আমরা সবাই সুস্হ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবো। সব সময় মনে রাখতে হবে... করোনা হওয়া মানেই মৃত্যু নয় ।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top