সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

রেল লাইন (অনুগল্প) : গোলোকেশ্বর সরকার


প্রকাশিত:
১৫ মার্চ ২০২৩ ২১:৩৩

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৪২

 

রেলপথ। রেল লাইন ধরে হাঁটছিল অনিরুদ্ধ আর তিলোত্তমা। রেল লাইনের এক পারে অনিরুদ্ধ অপর পারে তিলোত্তমা। দু'জনের মাঝে সমান্তরাল রেল লাইন। অনিরুদ্ধ ও তিলোত্তমার মধ্যে প্রেম করে বিয়ে হয়েছিল। বর্তমানে তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। তিলোত্তমার বাড়ি রেল লাইনের ওপার আর অনিরুদ্ধের বাড়ি রেল লাইনের এপার। বিকেলের এই সময়ে রেল লাইন দিয়ে কোনও ট্রেন আসে না। অনেক লোক এই সময়টাতে রেল লাইনের পাশ দিয়ে বিকেলের ভ্রমন করে। আজ এখন শুধু রয়েছে তিলোত্তমা আর অনিরুদ্ধ। শেডহীন একটিমাত্র প্ল্যাটফর্ম। রেল লাইনের এপারে কংক্রিটের প্ল্যাটফর্ম, ওপারে সবুজ গাছ--গাছালি আর সবুজ ঘাস। তিলোত্তমার গায়ে হলুদ চুড়িদার। নীল--রঙের ওড়না বুকের ওপর দেওয়া। অনিরুদ্ধের পরনে আকাশি রঙের জিন্সের প্যান্ট আর সাদা জামা। ডিভোর্সের পর থেকে দু'জনের মধ্যে কথা বলাবলি বন্ধ। ওরা দু'জন বিকেলের হাঁটাহাঁটি করছিল। চলতে চলতে এক ঝলক ওদের মধ্যে আড়চোখে চোখাচোখি হলো। সাথে সাথে চোখ ঘুরিয়ে নিল দু'জনেই। আবার সামনের দিকে তাকিয়ে চলতে শুরু করল তারা। অনেক দূর অবধি দেখা যায় রেল লাইনটি। সমান্তরাল রেল লাইন কখনও এক জায়গায় মিলিত হয় না। মিষ্টি রোদ দু'জনের মুখের ওপর এসে পড়ছিল। ওপারে পলাশ গাছে প্রচুর লাল পলাশ ফুল। মাটিতে পড়ে মাটিকেও রাঙিয়ে তুলেছে পলাশ ফুল। রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দু'একজন ফুল বিক্রেতা হেঁটে--হেঁটে নানা রকমের ফুল বিক্রি করতে আসে। বিভিন্ন সময়ে স্টেশনে ফুল হাতে তাদের দেখা যায়। অনিরুদ্ধ হাঁটতে--হাঁটতে প্ল্যাটফর্মে উঠতেই থমকে দাঁড়াল। দু'পা পিছিয়ে এল। তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল,"ইস! আর একটু হলে পায়ের নিচে পড়ে যেত। আর একটু হলে পায়ের তলায় ডলা পড়ত। সর্বনাশ হয়ে যেত!" অনিরুদ্ধ দেখল, প্ল্যাটফর্মে তার পায়ের সামনে পড়ে রয়েছে একটি লাল--গোলাপ ফুল। অনিরুদ্ধ এগিয়ে গেল। নিচে বসল। গোলাপটি হাত দিয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে তুলল। তারপর রেল লাইনের অপর পারে জোরে ছুঁড়ে ফেলে দিল লাল--গোলাপ ফুলটি।
রেল লাইনের অন্য পারে থাকা তিলোত্তমা অনিরুদ্ধের ছোঁড়া লাল--গোলাপটি দু'হাতে ধরে ফেলল।

 

গোলোকেশ্বর সরকার
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top