সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

সহমর্মিতা (অণুগল্প) : উজ্জ্বল সামন্ত


প্রকাশিত:
১৫ মার্চ ২০২৩ ২২:৪২

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:২০

 

একমাত্র কন্যা তিতলির ৫ বছরের জন্মদিন আগত। ওর বাবা-মা কোথাও বেড়াতে যান নি ওকে নিয়ে। সারদা দেবী মেয়ের কাছে জানতে চান জন্মদিনে কি উপহার চায়। উত্তরে তিতলি বলে ও নিজেই নিজের উপহার পছন্দ করে নেবে। অনেক কান্নাকাটি ,অনুরোধের পর মেয়েকে নিয়ে বের হন ওরা। গাড়ির জানালার কাঁচে চোখ রাখে। একটি জুতার দোকান থেকে দাঁড়াতে বলে। ওর বাবা-মা বিস্মিত হয়। দোকানের ভেতরে ঢুকে একটি নবজাতকের ছোট্ট জুতো দেখে আবদার করে কিনে দিতে হবে। অগত্যা, নাছোড়বান্দা মেয়ে। কিন্তু জুতোর দামের ট্যাগ্ নেই। নীচে লেখা: বাচ্চার এই জুতোটি বিক্রির জন্য নয়! সেলসম্যান কে অনুরোধ করলে মালিকের সঙ্গে দেখা করতে বলে। একজন ভদ্রমহিলা ক্যাশ কাউন্টারে থেকে জিজ্ঞেস করেন, কি হয়েছে? একটি ছোট্ট বাচ্চা উইল চেয়ারে । সারদা সবিস্তারে জানায়। ২ বছর আগে সেই অভিশপ্ত দিনের গাড়ি এক্সিডেন্ট। হাঁটুর নিচ থেকে ওর কচি দুই পা বাদ যায় শিশুটির প্রাণ বাঁচানোর জন্য ।
ওর জন্মদিনের আবদার এই জুতোটি নেবে। তখন ভদ্র মহিলাটি জিজ্ঞেস করলেন, তিতলি কেন কিনতে চাও এই জুতো? উত্তরে তিতলি বলে আমার বেবি (ডলের) জন্য। ওর পায়ে জুতো নেই!
ভদ্রমহিলার চোখে জল, অতীতে ঘটে যাওয়া গর্ভস্থ শিশুর জন্য নানা উপহার ও জুতো কিনে রাখা। কিন্তু নিয়তির পরিহাসে সিঁড়ি থেকে নামার সময় পা পিছলে পড়ে গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হয়। ডাক্তার জানিয়েছিলেন তিনি আর কোনদিন মা হতে পারবেন না।
একজন মা বাস্তব পৃথিবীটাকে বিশ্বাস করতেন ভগবানের থেকে বেশি। একজন মা চান তার শিশুর মুখের নিষ্পাপ হাসি, নিজের সবটুকু দিয়ে।
সেলসম্যান কে ডেকে সেই জুতোটি প্যাক করে দিতে বলেন ভদ্রমহিলা। তিতলি, এটা বার্থডে গিফট তোমার জন্মদিনে, আমার তরফ থেকে। মুখে হাসি রেখেও কিন্তু চোখের জল গড়িয়ে পড়ে...

 

উজ্জ্বল সামন্ত
পূর্ববর্ধমান, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top