সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১

আমার পুরস্কারপ্রাপ্তি (রম্যরচনা) : পরমার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়


প্রকাশিত:
১৭ এপ্রিল ২০২৩ ২১:৩১

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৪৩

 ছবিঃ পরমার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়


এক-

সুধী পাঠকবৃন্দ, আপনাদের অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই যে, নতুন বছরে
বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার আমি পেতে চলেছি। ১৪৩০ বঙ্গাব্দ থেকেই, এই পুরস্কার প্রদান চালু করা হচ্ছে। সর্ববাংলা ছোট, বড়, মেজ, ন’, ফুল, সেজ পত্রিকা সংগঠনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে আমাকে এই পুরস্কারের যোগ্য এবং একমাত্র দাবিদার বলে চিহ্নিত করেছেন, আর কারও নাম বিবেচিত হয়নি। বস্তুত, আমার ধারাবাহিকভাবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সমস্ত পত্রিকার সম্পাদকদের খুঁত খুঁজে খুঁজে বার করে, তাঁদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলার অনন্য দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার প্রদান শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রত্যেক সম্পাদককে ধন্যবাদ, তাঁরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ভোট আমাকেই দিয়েছেন। এমনকী সমস্ত ভোট আমি একা পাওয়া সত্ত্বেও কেউ ভোটে কারচুপির কোনও অভিযোগ আনেননি। আমি গর্বিত এবং আনন্দিত। বিনীত লেখারও ইচ্ছে ছিল, কিন্তু দেখলাম এই আনন্দঘন মুহূর্তে মিথ্যা বলা উচিত হবে না। কোনও পত্রিকায় লেখা পাঠালেই, সম্পাদকমণ্ডলীকে তেল দেওয়ার জন্য, লেখার শেষে ধন্যবাদান্তে, বিনীত…লিখি, যেটা সর্বৈব মিথ্যা। তবে ওইটুকু তেল দিতেই হয়, নয়তো আমার লেখা কে পড়বেন, কেনই বা পড়বেন? আমি নিজেই তো পড়ে উঠতে পারি না। যাই হোক, যেকোনও সময় পুরস্কার ঘোষিত হয়ে যাবে, আমি তো সারা ক্ষণ সমাজ মাধ্যমে একটা বই সংক্রান্ত গ্রুপ থেকে আর একটা গ্রুপে ঘুরে বেড়াচ্ছি, যাতে পুরস্কার ঘোষণা হলে প্রথম লাইকটা নিজেই ঝাড়তে পারি। এক ডজন সেলফিও তুলে রেখেছি, একে একে নানা কায়দা সহকারে পোস্ট করব বলে। সম্পাদকেরা শুনলাম এখনও পুরস্কারের নাম নিয়ে সহমত হতে পারেননি, তাই একটু বিলম্ব হচ্ছে। তবে নিম্নলিখিত কয়েকটা নাম ওঁরা বিবেচনা করছেন-

১) ভয়াবহশ্রী
২) খুঁতভূষণোত্তম
৩) দুর্বিনীত চূড়ামণি
৪) অভব্যসাগর
৫) কুচুটে কুচকুচে
৬) …
ছ’-নম্বর নামটা ঠিক করে উঠতে পারলেই ওঁরা একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। তবে সবগুলোই বেশ জাঁদরেল নাম, আমার তো ভারী পছন্দ হয়েছে। দেখি কোনটা জোটে শেষ পর্যন্ত।

দুই-

সম্পাদকমণ্ডলী শেষে, ষষ্ঠ তথা অন্তিম নম্বরের জন্য, ‘চোখে আঙুল আঙ্কেল’ নামটা প্রস্তাব করেছেন। আঙ্কেলটা খুব বিটকেল হয়ে যাওয়াতে, আমি তীব্র আপত্তি জানিয়েছি। ‘চোখে আঙুল কাকা’ বা ‘চোখে আঙুল মামা’ হলে বেশ হয়, সেটা জানাতেও ভুলিনি।

কানাঘুষোয় শুনলাম, একজন সম্পাদক তো স্বীকার করেছেন, আমার একটা লেখা কী করে যেন তাঁর একবার পছন্দ হয়েছিল, তবে ভয়ে ছাপেননি। আমি নাকি কোনও পত্রিকায় লেখা ছাপা হলেই সেই পত্রিকা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে খুঁত বার করি, তাই আর কী, সম্পাদক ওই ঝুঁকি নেননি। ভাবছি একটা তৈলাক্ত চিঠি দিয়ে, ওঁর পত্রিকা না পড়ার অঙ্গীকার করব, চাইলে কোর্ট পেপারে লিখে দিতে পারি। দেখি চিঁড়ে ভেজে কি না।

 

পরমার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top