মন থেকে দূর করুন করোনার ভয়
প্রকাশিত:
১৪ মে ২০২০ ১৯:৫০
আপডেট:
১৪ মে ২০২০ ১৯:৫১
প্রভাত ফেরী: বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, বনের বাঘে খায় না কিন্তু মনের বাঘই খায়। আসলেও, আমি-আপনি যখনই কোনও কিছু নিয়ে ভয়-উৎকন্ঠা আর হতাশার মাঝে থাকি, তখন আমাদের সুন্দর চিন্তা-ভাবনাগুলো লোপ পায়। অত্যন্ত সহজ কাজটিও নিজেরাই কঠিন করে তুলি। সুস্থ ও সময় উপযোগী পরিকল্পনা-সিদ্ধান্ত থেকে আমরা দূরে সরে যাই। আর বিপদ থেকে উত্তরণে দিগবিদিক ছুটে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু অজানা, অচেনা রাস্তার শেষ কোথায়, এটা নিশ্চয়ই বলা কঠিন। তাই আগে জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং পরিকল্পনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে শুধু করোনাভাইরাসই নয়, যেকোনো সংকট মোকাবেলা করা সহজ, মসৃণ হয় উত্তরণের পথ-পদ্ধতিও।
মানুষের মধ্যে কোনও না কোনওভাবে মানসিক চাপ তৈরি হয়। যে কোনও পরিস্থিতি বা অবস্থার কারণে আমাদের মধ্যে স্ট্রেস বা চাপ হতে পারে। যেমন করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ক্রমেই চেপে বসছে মাথায়। আমরা সংবাদমাধ্যমে খবর দেখছি, প্রায় দেশেই প্রতিদিন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। সবসময় আতঙ্ক লাগছে, ভয়ে ঠিকমতো অনেকে ঘুমাতেও পারছে না। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেরও একই অবস্থা। এরকমভাবেই করোনার আতঙ্কে আর মানসিক চাপে ভুগছেন আরও অনেকেই।
একাকিত্ব ও বিষাদ ছেয়ে গেছে। মানুষ সিনেমা ভুলেছে, খেলা ভুলেছে, রাজনীতিও ভুলেছে। ভুলেছে তার নিজস্ব পরিসর। একমুখী করোনা-চিন্তায় জীবন কাটাতে কাটাতে ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী মানসিক চাপ। করোনাভাইরাসের অজানা শঙ্কাই মূলত এর জন্য দায়ী।
চাপিয়ে দেওয়া ঘরবন্দি মানুষের অবস্থায় অভ্যস্ত নয় মানুষ। আগে এমন অভিজ্ঞতা না থাকাও শরীরের স্ট্রেস হরমোনগুলিকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলছে। ফলে টেনশন, চাপা উদ্বেগ, ভয়, আতঙ্ক এগুলোই মাথার মধ্যে দপদপ করছে। অন্য কোনও ভাবনা স্থায়ী হচ্ছে না।
মন কিছুতেই বসছে না। এই সময়ও চারপাশে এটাই ঘটছে। তার সঙ্গে বাড়িতে বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ মানুষ থাকলে তাঁদের নিয়েও বাড়তি চিন্তা দানা বাঁধছে। উত্তেজিত হচ্ছে মোটর নিউরোন। এ সব থেকেই মনের চাপ বেড়ে চলেছে।
মানসিক চাপ কতটা ক্ষতি করতে পারে। কী কী রোগ হতে পারে। মানসিক চাপ বেড়ে গেলে, শরীরে ক্ষতিকর রাসায়নিকের রমরমা এতই হয় যে তার দাপটে প্রতিরোধ যোদ্ধাটি চলে যায় ব্যাকফুটে। তার উপর দুশ্চিন্তায় ঘুম কমে, খাদ্যাখাদ্য বিচার থাকে না, আগ্রহ থাকে না ব্যায়ামে। সবে মিলে প্রতিরোধ ক্ষমতার অবনতি হয়। এ ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের রোগীদের বেলায় অসুখ বেড়ে যাওয়ার ভয়ও বাড়ে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, আরও অস্থিরতা ও বিরক্তি বাড়ে।
উপরের সবকিছু থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে কয়েকটা বিষয় মানতে হবে। তা হলো-
মন ভাল রাখে এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। ছবি আঁকতে ভাল লাগলে, তাই করুন। গান গাইতে ভাল লাগলে তা-ই। রান্না করতে চাইলে সেটাই করুন। যার যে কাজে আনন্দ, তিনি তাতে কিছুটা সময় দিন। মন ভাল থাকবে। বাড়িতে থাকার সময় ভাল সিনেমা দেখুন, গান শুনুন, প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলুন, দেখতে দেখতে দিন কেটে যাবে।
মন বসাতে সমস্যা হলে রোজ সকালে একটু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, বাড়িতে বসে করা যায় এমন কিছু ব্যায়াম, বিশেষ করে মন ভাল রাখার যোগা, ডিপ ব্রিদিং, মেডিটেশন করুন। এতে রক্তচাপ কমবে, শরীর ফুরফুরে হবে, সঙ্গে মনও আনন্দ পাবে। মনে রাখুন, যা জানি না, যা আমার হাতে নেই, তা নিয়ে অকারণ দুশ্চিন্তার কোনও মানেই নেই। ভাবলেই কেউ বিপদ এড়াতে পারবেন না। তাই অহতুক ভেবে মাথার উপর চাপ বাড়ানো থেকে দূরে থাকুন। করোনা হওয়ার আগেও মানুষ মারা যেতেন, এর পরেও মানুষ মরণশীলই থাকবেন, রাস্তাঘাটে যে কোনও দুর্ঘটনাও অকালে প্রাণ কাড়তে পারে। তাই অযথা মৃত্যুভয় পাবেন না।
সব চিন্তা ফেলে রেখে পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নিন ৷ ক্লান্তি ও চিন্তা দূর করার জন্য ঘুম অত্যন্ত দরকার৷
বিষয়: করোনা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: