সিডনী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১


আম্ফানে সারাদেশে ২২ জনের মৃত্যু, বিদ্যুৎহীন ১০ লাখ মানুষ


প্রকাশিত:
২৩ মে ২০২০ ১১:৩৩

আপডেট:
২৩ মে ২০২০ ১১:৩৩

আম্ফানের তাণ্ডবে পড়ে আছে বিদ্যুতের খুটি

 

প্রভাত ফেরী: ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে লণ্ডভন্ড হয়ে আছে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো। সকল ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জানতে আরো ২ দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। তবে এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২২ জন হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই ঝড়ে গাছ বা ঘর চাপা পড়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে যশোরেই ১২ জন। এ ছাড়া পিরোজপুরে তিন, পটুয়াখালীতে দুই এবং ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, ভোলা, চাঁদপুর ও বরগুনায় একজন করে মারা গেছে। অন্যদিকে, ঝড়ে কুষ্টিয়ায় জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন উপকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের কারণে এখনও বিদ্যুৎহীন প্রায় দশ লাখ গ্রাহক। তবে উপকূলীয় ১৩ জেলায় শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ত্রাণ কার্যক্রম।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফান শক্তি কিছুটা হারিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় রূপে বুধবার দুপুরের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানে। পরে রাতে এ ঝড় প্রবেশ করে বাংলাদেশে। ঝড়ের মধ্যে প্রবল বাতাসে বহু গাছপালা ভেঙে পড়ে, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে উপকূলীয় সব জেলা। বুধবার রাতে ঝড়ের মধ্যে গাছ ভেঙে পড়ে যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় এক দম্পতি ও বাবা-ছেলেসহ পাঁচজন এবং শার্শায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়, যা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানতে পারেন বৃহস্পতিবার রাতে। এ নিয়ে জেলায় ঝড়ে ১২ জনের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটল। এর আগে বুধবার চৌগাছায় দুজন, শার্শায় দুজন ও বাঘারপাড়ায় একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়।

যশোরের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় মণিরামপুরে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর আগে জানা যায়নি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফীর আবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে আরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া শার্শায় ঝড়ের মধ্যে গাছ পড়ে ওই ইউনিয়নের জেলেপাড়ার গোপালচন্দ্র ও মহিপুরা গ্রামের মিজানুর রহমান মারা গেছেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মণ্ডল জানান।

এদিকে, সরকারি তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে খুলনায় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলীয় উপজেলা কয়রা। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি, উত্তর বেদকাশি, কয়রা সদর ও মহারাজপুর ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষ দুর্গত হয়েছেন। কয়রার ২৪টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভাঙনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে দুর্গত অবস্থায় দিনযাপন করছে।

এ ছাড়া পাইকগাছার ১০ ও বটিয়াঘাটার সাতটি ইউনিয়নের ৪০ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনার ৯টি উপজেলায় ৮০ সহস্রাধিক পরিবার আম্ফানে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে পূর্ব সুন্দরবনের ভেতরে গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন জানান, আম্ফানের আঘাতে সুন্দরবনের ঢাংমারী স্টেশন, লাউডোব, দুবলা ও মরাপশুর ক্যাম্পের জেটি, ঘরবাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা এবং বনের গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ঝড়ে কোনো জেলের নৌকাডুবি বা জেলে নিখোঁজ নেই। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে এই এলাকায় কেউ মারা যায়নি।

এ ছাড়া দেশের ১৩ জেলার মোট ৮৪টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙেছে। যার দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি বলেছেন, ‘যেকোনো দুর্যোগের প্রস্তুতিতে শুধু উপকূলীয় এলাকার জন্যই ৫ হাজার ৫৫৭ কিলোমিটার বাঁধের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু সুপার সাইক্লোন আম্ফানে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে অন্তত ৮-১০ ফুট বেশি উচ্চতায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিভিন্ন জেলার বেড়িবাঁধ-তীররক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি।’ তিনি জানান, শুক্রবার থেকে উপকূলীয় ১৩ জেলায় পুরোদমে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top