সারা দেশের আইনাঙ্গন উত্তপ্ত
আইনজীবী হত্যার জেরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি
প্রকাশিত:
২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১১:৩৫
আপডেট:
২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১১:৩৫
চট্টগ্রামে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে সব মহলে। ওই দাবিতে গতকাল বুধবার উত্তপ্ত ছিল ঢাকাসহ সারা দেশের আইনাঙ্গন। বিক্ষোভ মিছিল–সমাবেশ হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, ঢাকা আইনজীবী সমিতিসহ দেশের বিভিন্ন জেলা আইনজীবী সমিতিতেও। সুপ্রিম কোর্টে হয়েছে গায়েবানা জানাজা। এদিকে এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবারও বিভিন্ন কর্মসূচি আছে আইনজীবীদের।
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহতের প্রতিবাদ, জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচার নিশ্চিত করা এবং উগ্রপন্থী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রথমে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যাতে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা অংশ নেন। এতে বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, ইউসুফ আলী ও সাইফুর রহমান প্রমুখ।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘দেশ যখন গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আওয়ামী লীগের দোসররা নানা ষড়যন্ত্র করছে। তিনি (শেখ হাসিনা) দিল্লিতে বসে কিছু করতে না পেরে ইসকনকে লেলিয়ে দিয়েছেন। আমরা জানতে পেরেছি, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পূর্বাচলে ইসকনকে দুই বিঘা জমি বরাদ্দ দিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই বরাদ্দ বাতিল করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসকন মৌলবাদী সংগঠন। বাংলাদেশের মানুষ এ রকম মৌলবাদ–উগ্রবাদে বিশ্বাস করে না। সে জন্য পূজার সময় বাংলাদেশের মুসলমানরা মন্দির পাহারা দিয়েছে। তাই সরকারকে বলব, ইসকনকে বাতিল করা হোক। এখানে ইসকন নামে কোনো সংগঠন কাজ করতে পারবে না। ইসকনের কে কোথায় রয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। এ সময় আইনজীবী সুরক্ষা আইন করারও দাবি করেন তিনি।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন তাঁর বক্তব্য বলেন, ‘সরকারি আদেশে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক। এটি আওয়ামী ইসকন। ইসকন থাকে ৫–১০ জন। আর পেছনে থাকে আওয়ামী লীগ। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য উসকে দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, আজকে সব রাজনৈতিক দলের জাতীয় ঐক্য দরকার।’
বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘ইসকন যখন মাঠে নামে, তখনই আমরা দেখি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নেতা ওখানে দাঁড়িয়ে লাফায়। ভারত একদিকে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে আরেদিকে ইসকনকে মাঠে নামিয়েছে। এই যোগসূত্র বাংলাদেশের মানুষ বুঝে গেছে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির লিগ্যাল উইং ও বাংলাদেশ আইনজীবী কংগ্রেস পৃথকভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির ব্যানারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১ নম্বর হলরুমে আরেকটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আর সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত হয়েছে গায়েবানা জানাজা। সেখানে কয়েক শ আইনজীবী অংশ নেন।
এদিকে ইসকনকে আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থী সংগঠন উল্লেখ করে সংগঠনটি নিষিদ্ধ এবং আইনজীবী হত্যার বিচার চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন ১০ আইনজীবী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর ডাকযোগে ১০ আইনজীবীর পক্ষে আইনজীবী আল মামুন রাসেল এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশ পাঠানো ১০ আইনজীবী হলেন, মফিজুর রহমান মোস্তাফিজ, নিজাম উদ্দিন, আব্দুল হান্নান ভূঞাঁ হৃদয়, তৌহিদুল ইসলাম শান্ত, আতিকুল ইসলাম, মো. মাসুম বিল্লাহ, মো. রাসেল মাহমুদ, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাহফুজুর রহমান ও আল মোমেন।
নোটিশ বলা হয়েছে, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ বেশ কিছু রাষ্ট্রে ইসকন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান এবং তুর্কমিনিস্তান ইসকনের কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারি জারি রয়েছে। বাংলাদেশে তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে তাদের জঙ্গি কার্যক্রম বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি। ইসকনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ কার্যক্রম এখনই বন্ধ করা না গেলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাসহ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: