সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ১৬ই মে ২০২৪, ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন: উত্তরে অভিজ্ঞ আর দক্ষিণে নবীনের লড়াই


প্রকাশিত:
১১ জানুয়ারী ২০২০ ০৮:৩৪

আপডেট:
১৬ মে ২০২৪ ১২:৪১

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: ঢাকার দুই সিটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল। ঢাকা উত্তর সিটিতে উন্নয়ন ও প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের ভাবমূর্তি কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জিতে যাবেন এমনটাই আশা করছেন অনেকে। তবে তাদের বেশি নজর ঢাকা দক্ষিণে। দক্ষিণ সিটিতে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের ডেঙ্গু মোকাবেলায় ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষমতাসীনদের বেগ পেতে হবে।

ঢাকা উত্তর সিটিতে দুই মেয়রই বেশ অভিজ্ঞ। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম উপনির্বাচনে এক বছরের জন্য মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর তাবিথ আওয়াল এর আগেও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। কাজেই উত্তরের দুই প্রার্থীই মেয়র প্রার্থী হিসেবে অভিজ্ঞ। আর দক্ষিণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই প্রার্থী বদল করায় এখানে লড়াই হবে দুই নবীনের। যদিও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা-১০ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে। তবে তিনি একদম ফ্রেশ প্রার্থী।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ওপর। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঠ পর্যায়ে বেশি তৎপর থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রচার-প্রচারণার দিক থেকে ঢাকা দক্ষিণ প্রাধান্য পাচ্ছে বলেই আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

এর কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন যে, ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ দৃশ্যমান কিছু অগ্রগতি করেছে। বিশেষ করে ঢাকা উত্তরে আনিসুল হক একজন রোল মডেল হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। আনিসুল হকের রোল মডেল একমাত্র আওয়ামী লীগই বাস্তবায়ন করতে পারে। এ রকম একটি চিন্তা যদি সাধারণ ভোটারদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করানো যায় তাহলেই ঢাকা উত্তরের কাজটি সহজ হবে। এই বিবেচনা থেকে তারা ঢাকা উত্তরের চেয়ে দক্ষিণে মনোযোগ দিচ্ছে।

দক্ষিণে বেশি মনোযোগ দেওয়ার কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের ওই নেতা মনে করেন, ঢাকা দক্ষিণে গত সাড়ে চার বছরে আওয়ামী লীগের ওপর ভোটারদের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ডেঙ্গু, জলাবদ্ধতা এবং নাগরিক সমস্যাগুলো সমাধানের ক্ষেত্রে শুধু আশ্বাস এবং নানা রকম প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত মেয়রের ওপর সাধারণ মানুষের অনেক নেতিবাচক মনোভাবও তৈরি হয়েছে।

যে কারণে ঢাকা দক্ষিণের দিকে আওয়ামী লীগ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ এখানে আওয়ামী লীগের দ্বিগুণ কার্যক্রম দেখাতে হবে। প্রথমত সাঈদ খোকনের নেতিবাচক কর্মকান্ডের কৈফিয়ত দিতে হবে। দ্বিতীয়ত ফজলে নূর তাপস যে সাঈদ খোকন নন এবং তিনি যে একটি ভিন্ন চিন্তাভাবনা নিয়ে ঢাকার আধুনিকায়ন করতে চান সেই বার্তাটা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এ জন্যই গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

তবে আওয়ামী লীগের দলের একাধিক সূত্র বলছে যে, ঢাকা দক্ষিণে গুরুত্ব দেওয়ার অন্য একটি কারণ হচ্ছে তাপসের রাজনৈতিক পরিচয় এবং তার ইমেজ, সাংগঠনিক দক্ষতা ইত্যাদি কারণে ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগ একাট্টা হয়ে কাজ করছে। আর এ জন্যই ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের গুরুত্বটা দৃশ্যমান হচ্ছে।

অন্যদিকে বিএনপি গুরুত্ব দিচ্ছে ঢাকা উত্তরে। উত্তরে গুরুত্ব দেওয়ার কারণ হচ্ছে যে, তাবিথ আউয়াল এখানে পুরনো প্রার্থী এবং গত নির্বাচনে বিএনপির বিবেচনায় তাবিথ অত্যন্ত ভালো ফলাফল করেছিল। বিএনপি মনে করছে যে, এলাকায় তাবিথের একটা ভালো ইমেজ রয়েছে এবং এই এলাকায় তার একটা হোমওয়ার্ক রয়েছে। উত্তরে বিএনপির গুরুত্ব দেওয়ার কারণ হিসেবে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন যে, উত্তরে আনিসুল হক যে কাজগুলো করেছিলেন, তারপর গত সাড়ে ৯ মাসে আতিকুল ইসলাম সেই ধারাবাহিকতা পালন করতে পারেনি। কাজেই আতিকুল ইসলামকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত সুবিধাজনক এবং তার ব্যর্থতাগুলো তুলে ধরলেই সেখানে বিএনপি ইতিবাচক ফলাফল করতে পারে। এই কারণেই বিএনপি কৌশলগত কারণে বিএনপি ঢাকা উত্তরে গুরুত্ব দিচ্ছে।

আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রচারণা : ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে আজ শুক্রবার প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা। এর মধ্য দিয়ে মাঠে গড়াবে ভোটের লড়াই। ভোটগ্রহণ করা হবে ৩০ জানুয়ারি।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনি প্রচারের সুযোগ নেই। ফলে এখনও মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারে নামেননি। পোস্টার, ফেস্টুন সাঁটানো বা ভোট চেয়ে মাইকিং এসব শুরু হয়নি। তবে প্রার্থীদের অনেকে ঘরোয়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছেন। আজ শুক্রবার থেকে প্রচার শুরু হবে।

তবে নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নির্বাচনের প্রচার বা নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকায় আছেন প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা সমমর্যাদার পদে থাকা ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র। তবে তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হলে ভোট দিতে পারবেন।

তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ৩১ ডিসেম্বর। ২ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন বৃহস্পতিবার। উত্তর সিটিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আতিকুল ইসলাম ও বিএনপির পক্ষ থেকে তাবিথ আউয়ালকে মেয়র পদে মনোনীত করা হয়েছে। দক্ষিণে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ ফজলে নূর তাপসকে এবং বিএনপির পক্ষ থেকে ইশরাক হোসেনকে মনোনীত করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ঢাকার এ দুই সিটি নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর ওই তিন পদে দুই সিটিতে মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন ২ হাজার ২৬০ জন। তার মধ্যে ১ হাজার ৩৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি-জাপার মেয়র প্রার্থীসহ ৪৬ জনের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। বাতিলদের মধ্যে ২৬ জন আপিল করে তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।

২২ ডিসেম্বর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। ৩১ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। যাচাই-বাছাই শেষে এখন পর্যন্ত উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রার্থী আছেন ছয়জন। উত্তর সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম আর বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। এখানে সাধারণ কাউন্সিলর পদে এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে বৈধ প্রার্থী যথাক্রমে ৩৫৯ ও ৮৭ জন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মেয়র পদে প্রার্থী আছেন সাতজন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নৌকা নিয়ে লড়ছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের প্রার্থী ইশরাক হোসেন। এই সিটিতে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৩৪ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০০ জন প্রার্থী আছেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top