স্প্যাইডারম্যান : শৌভিক চ্যাটার্জী


প্রকাশিত:
৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:৪৫

আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ১৭:৫৭

 

ছোট্ট থেকেই বাবা ফিরতো ভরদুপুরে,রোদে পুড়ে,জলে ভিজে বা না ভিজে!
কখনো নাকি গভীর রাতেও!
আমি দেখিনি ঘুমিয়ে থাকতাম যে!

দীর্ঘকায়,কৃষ্ণবর্ণ,ছিপছিপে মানুষ টা কে ঠাকুর মনে হতো  আমার!

আমাদের একঘর সংসারে আলপিন সাঁটা ক্যালেন্ডারে আটকে থাকা কৃষ্ণ ঠাকুরকে দেখতে ছিলো বাবার মত!

আমি কখনো জানলায় উঠে,স্পাইডারম্যান-স্পাইডারম্যান খেলতাম;
বাবা ফিরতো,দেখতো,হাসতো
জানলা থেকে নামিয়ে রাখতো মেঝেয়।

অনেক রাতে,ঘুম ভাঙলে বাবার উষ্ণ করতলে ভিজে যেত আমার কপাল!

বাবার যখন জ্বর এলো।আমি তখন ছয়!
একদিন নীল পলিথিনে আষ্টেপৃষ্ঠে ঠাকুর বিসর্জন হলো বর্ষায়!
বাবা আর এলো না! 
আমি স্পাইডারম্যান-স্প্যাইডারম্যান খেলতে থাকলাম;
কীট পতঙ্গের জীবনপথ কি টানতো আমায়?

পূর্ণ নারীত্ব এসে গিয়েছে সময়ে,রয়ে গিয়েছে দারিদ্র্য!
অফিসের বীমা কুড়োতে অতিক্রম করি সীমা।

বিষাক্ত,কীট,পতঙ্গেরা শুতে ডাকে! শুইও কখনো! 
বাড়ি ফিরি! স্নান করি।
শরীর ধুয়ে নেমে যায় স্পাইডারম্যান বা ওম্যান হওয়ার ইচ্ছে,পরের দিন উঠে আসবে বলেই!

বিষাক্ত জঞ্জালাদির স্তুপে স্পাইডারম্যান খেলাকেই
আমি এখন সহবাস বলি! বলতেই হয়!

বাবাকে ঠাকুর মনে হতো।বাবা পঙ্কিল আবর্জনাভূমি বা জলাভূমি তে নেমে তা পরিষ্কার করতো।ম্যানহোল এ নেমে তা পরিস্কার করা কে ইংরাজি তে কী বা বলে?
জিজ্ঞেস করার আগেই আমার ঠাকুর বিসর্জন হয়ে যায়!
আমি সাফাইকর্মী হতে চাইনি।স্পাইডারম্যান হতে চাইতাম।
আমি কীট-পতঙ্গের জীবন পেয়েছি!কামড়ও!
বাবা নামিয়ে আনতো যদি,ভালো হত কি?

একবার বিসর্জন হয়ে গেলে,সে ঠাকুর কি আর আসে না,অন্য অবতারে?
আমি স্প্যাইডারম্যান হতে, ভুল করে চেয়েছি,
ঠাকুর,আমায় মাটিতে নামিয়ে দাও! এবার থেকে মানুষ-মানুষ খেলবো!

 

শৌভিক চ্যাটার্জী
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top