সিডনী মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ ২০২৪, ৫ই চৈত্র ১৪৩০


আনন্দালোকে যাত্রা : শাকিলা নাছরিন পাপিয়া


প্রকাশিত:
১৯ জুলাই ২০২১ ২১:৫২

আপডেট:
১৯ মার্চ ২০২৪ ১৫:৪৬

 

এক.

শীত করছে?
আমার বুকের মাঝে আয়।
কাঁদছিস কেন?
ভেবেছিলাম হারিয়ে গেছি।
ধুর বোকা হারাবি কেন? আমি আছি না?
আমার ক্ষিধে পেয়েছে, আম্মুর জ্বর। আমায় খাইয়ে দেবে কে?
আমি দেব।
বাইরে ঝড় বৃষ্টি। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আমার ভয় করছে আপা।
ভয় কী? এই তো আমি।

বড়বোন তিন, চার বছর বয়সে এভাবেই মায়ের পাশাপাশি বিকল্প মা হয়ে ছোট ভাই বোনকে আগলায়।

দুই.


-কষ্ট হচ্ছে?
- আমার পেট ব্যথা করছে।
- সিস্টার আমার ভাইয়ের পেট ব্যথা।
- ঔষধ দিয়েছি।
- বমি কমছে না।
- ঔষধ দিয়েছি।
- আমার ভাইয়ের অনেক কষ্ট হচ্ছে। ডাক্তারকে বলুন।
- সন্ধ্যার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলা যাবে না।
- এখন সকাল আটটা। রোগীর অবস্থা খারাপ। সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকবো?
এটা হাসপাতাল। একজন না থাকলে অন্যজন থাকবে। ডাক্তার কেন থাকবে না?
- এতো অস্থির হলে চলবে না। ডেঙ্গু হলে এরকমই হবে।
নির্বিকার নার্স, ডিউটি ডাক্তার।
কষ্টে কুঁকড়ে যাওয়া ভাইয়ের মাথাটা বুকের মাঝে নিয়ে শুধাই, অন্য হাসপাতালে যাবি?
টাকার কথা ভাববি না। তোর এখানে থাকতে মনে না চাইলে সবচেয়ে দামি হাসপাতালে নিয়ে যাবো।
যা আছে সব বিক্রি করে দেব। তবুও তুই ভালো হয়ে যা।

তিন.

চতুর্থ হাসপাতালে যাত্রা পথে উর্ধ্বপানে তাকাই।
হে দয়াময়, আমাদের বলার কোন জায়গা নেই। কেন এক এক করে চারটি হাসপাতাল ঘুরতে হবে?
কেন হাসপাতাল আছে ডাক্তার নেই, কেন ডাক্তার আছে চিকিৎসা নেই?
দয়া করো আমায়। একটামাত্র ভাই আমার। আমার বুক থেকে তাকে কেড়ে নিয় না।
আমার সময়টা  ধার দিয়ে হলেও  তাকে জীবন দাও দয়াময়।



চার.

ভাই, ভাই, ভা- ই---
কোথায় তুই?
আকাশের চেয়েও বিশাল শূন্যতায় চোখ রাখি
হাত বাড়াই।
আমার বুকের মাঝে বেড়ে ওঠা ছোট্ট পাখিটা
ক্রমশঃ দূর থেকে দূরে সরে।
অসীম শূন্যতায় মেঘ সরিয়ে, আকাশ সরিয়ে
খুঁজতে থাকি শৈশবের মতো।
আমি খুঁজছি, খুঁজছি, খুঁজছি
নক্ষত্রের ভিড়ে,  মেঘের দেশে, আকাশের ওপারে।

পাঁচ.


দূর্গার হাত ছেড়ে আঁচলের ফাঁক দিয়ে ফুড়ুৎ করে পালায় অপু।
আনন্দালোকের এ যাত্রায় সে একাকী। 
দূর্গার হাহাকার, ফিরে আসার আকুতি  কোন পিছু ডাক পৌঁছে না কানে।
আনন্দালোকে আঁধার আর  দুঃখের কোন স্থান নেই।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top