রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসা সংকটের মুখে
প্রকাশিত:
২৯ জুলাই ২০১৯ ০৪:২৪
আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:৪৩

অতিরিক্ত শুল্ক বৈষম্যের কারণে জাপানী রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। প্রতিটি গাড়িতে গড়ে ১২৭-১৪০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয় ক্রেতাদের।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন আমদানিকৃত গাড়ির চেয়েও বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি। ফলে গাড়ি আমদানিকারক ও ভোক্তারা সংকটের মুখে পড়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে আমদানিকৃত রিকন্ডিশন্ড গাড়ি মূলত জাপান থেকে আমদানি করা হয়। জাপান থেকে ৪০ থেকে ৪৫ প্রকার মডেলের প্রাইভেটকার ও বিভিন্ন মডেলের গাড়ি বাংলাদেশে আমদানি হয়ে থাকে। আমদানিকৃত এসব গাড়িতে কমপক্ষে প্রকৃত মূল্যের ওপর ১২৭ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ শুল্ক হার ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। যা ক্রেতাদের বহন করতে হয়। ফলে একটি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির প্রকৃত মূল্যের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বেশি মূল্য দিয়ে তা ক্রেতাতে কিনতে হয়।
উল্লেখ্য, রিকন্ডিশন্ড গাড়ি হচ্ছে স্বল্প সময় ব্যবহূত নতুন গাড়ি, যা মূলত সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি হিসেবে পরিচিত। নতুন আমদানিকৃত গাড়ির চেয়ে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি। ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও রিকন্ডিশন্ড গাড়ির আমদানিকারক-ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা হতাশ হচ্ছেন। পাশাপাশি জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসাও দিন দিন কমে যাচ্ছে।
এ খাতের সংকট প্রসঙ্গে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালক এবং বিশিষ্ট গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হকসবের কর্ণধার আবদুল হক জানান, বর্তমানে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি ব্যবসা বেশ সংকটের মুখে রয়েছে।
তিনি বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন গাড়ির চেয়েও এসব পুরনো গাড়ির শুল্কহার বেশি। পুরনো গাড়ি আমদানির ব্যবসা থেকে সরকার বছরে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এ খাতে আমদানি পর্যায় থেকে ভোক্তাদের হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। পুরনো গাড়িতে ৫ বছরের জন্য অবচয়ন সুবিধা এবং তার ৪৫-৫০ শতাংশ নির্ধারণ ও বৈষম্যহীন শুল্কনীতি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে এ বৈষম্য নিরসন করা জরুরি।
জানা গেছে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে থেকে দেশে জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি শুরু হয়। ব্যবহারে পরও বিক্রয়মূল্য বজায় থাকা, গুণগতমান, জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। আর মূল্য অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় ভোক্তাদের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পায় এসব গাড়ি।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে পুরনো গাড়ি আমদানিকারকরা বিদ্যমান শুল্ক বৈষম্য হ্রাসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু ঘোষিত বাজেটে বাজেটে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, প্রতিবছর সরকার এ খাত থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করছে। এ ছাড়া বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা-গাড়ি আমদানির কার্যক্রমে ব্যবহূত হচ্ছে। বর্তমানে এ খাতে উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ৭শ বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া কয়েক লাখ মানুষ এ খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে গাড়ির মূল্য দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে বলে জানিয়েছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: