পরিবারের সুখের জন্য যারা প্রবাসী...
প্রকাশিত:
৬ জুলাই ২০১৯ ০৩:৪৪
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ১৬:০৬

আগে যে পরিবার ৫,০০০ টাকায় সংসার চালাতো, সন্তান প্রবাসে যাবার পর ২৫,০০০/৩০,০০০ টাকায়ও তাদের সংসার যেন চলে না।
পরিচিত অনেক প্রবাসীর সাথে যখন কথা হয়, তখন তারা পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে দেশে আসতে ভয় পায়। কারণ তারা দেশে আসলেই বেকার হয়ে যায়। কোন কাজ পায় না। জীবিকার তাগিদে আমাদের দেশের প্রবাসীদের মধ্যে বড় অংশই মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করে। অধিকাংশই নির্মাণ শ্রমিক, দোকানের কর্মচারী কিংবা কায়িক শ্রম নির্ভর কাজ করে থাকে। বাংলাদেশের টাকায় মাসে ২৫,০০০ কিংবা ৩০,০০০ টাকা আয় করে। নিজের খরচটুকু রেখে এই প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠায়। ১০/১২ বছর বিদেশে অমানুষিক পরিশ্রম করে করে যখন দেশে চলে আসে, তখন যেন অনেকেই অন্ধকার দেখতে পায়। মাসে মাসে যা পাঠিয়েছে, যেন কিছুই অবশিষ্ট নেই।
৫৭ ভাগ পরিবার প্রবাস আয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ বিনিয়োগ করেন না। অর্থ খরচ করেন ভোগ্য পণ্য ব্যয়ে। বাকি ৪৩ শতাংশ পরিবারের ৭৪.৭৮ শতাংশ ব্যয় করে দালান কোঠা নির্মাণ, ফ্ল্যাট বা জমি কেনায়। খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে পরিবারের আরাম আয়েসের মাত্রায়। অথচ যে মানুষটি দিন রাত পরিশ্রম করে দেশে অর্থ প্রেরণ করছে, সে যখন দেশে আসবে সে হয়ত তার জন্য সঞ্চিত কিছুই দেখতে পাবে না। পরিবারের সুখ, সমৃদ্ধি এবং সচ্ছলতার কথা চিন্তা করে প্রবাসীরা দেশে আসারও সাহস করেন না। অথচ মন যে পরে থাকে তার প্রিয়জনদের কাছেই। যাদের স্বজন প্রবাসে অবস্থান করছে, তাদের প্রত্যেকটি পরিবারের উচিত একটু হিসেব করে খরচ করা। ছোট ছোট ব্যবসায় বিনিয়োগ করা। সেটা মুদি দোকানও হতে পারে। আর যদি তা সম্ভব না হয়, প্রবাসীদের নামে ব্যাংকে টাকাগুলো জমা রাখা। কারণ আজ যে মানষটি প্রবাসে অবস্থান করছে, সবসময় সে প্রবাসে থাকবে না। এক সময় দেশে আসবে। তার আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা পরিবারের অন্য সদস্যদের করতে হবে। কারণ সে তার সারাটা জীবন পরিবারের সদস্যদের জন্যেই ব্যয় করেছে।
গত বছর জুলাই এর মাঝামাঝি সময় অফিসিয়াল কাজ শেষ করে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরছিলাম। বিমানের ৯০ ভাগ যাত্রী ছিল আমাদের দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা। এত সহজ সরল তাদের ব্যবহার। দেশের মধ্যে তারা যাই হোক, বিদেশের মাটিতে অন্যরকম। অল্পতেই খুশি তারা। অল্প পেলেই ভালোবাসতে জানে। আমাদেরও উচিত তাদের সম্মান করা। তাদের কথা চিন্তা করা। সেটা পরিবার হোক কিংবা রাষ্ট্র, দায়িত্ব সবার।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
লেখক: বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: