মাধবীলতা আজও আছে : অমিতাভ ভট্টাচার্য
প্রকাশিত:
৩ অক্টোবর ২০২০ ২২:৩৫
আপডেট:
৩ অক্টোবর ২০২০ ২৩:২৫

শেষ তোমাকে কবে স্পর্শ করেছিলাম
তোমার মনে পড়ে, মাধবীলতা?
এক মন খারাপ করা বিকেলে,
দখিনা বাতাসের সারা জাগানো রোমাঞ্চে;
এক অঙ্গ বিহীন আলিঙ্গনে।
তারপর তারুণ্যের প্রবল জোয়ারে,
কোথায় কোথায় হারিয়ে যাইনি তা খুঁজে দেখতে গিয়ে,
উপেক্ষা করেছিলাম অবলীলায়
ঘাসের শিষের ওপরে থাকা শিশির বিন্দুটিকে।
শহরকে শিক্ষার প্রতীক মনে করে,
ঝাঁ-চকচকে কয়েকটা মলের সাথে মাল্টিপ্লেক্স,
কয়েকটা মানানসই বিল্ডিং কমপ্লেক্স
আর পিচের রাস্তা তৈরী করে,
গ্রাম আর শহরতলীকে শহুরে শিক্ষার চাদরে মুড়ে ফেলেছিলাম।
আজ আর সেই সব গ্রামে শহরের মত সন্ধেবেলা শাঁখ বাজে না;
তুলসী তলায় আজ আর কোনও গৃহবধূ সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালে না।
মা-কে দেখেছিলেম সেই কিশোর বেলায়,
প্রতি সন্ধ্যায় তুলসী-বেদীতে প্রদীপ জ্বালতে।
আজ ঘর বন্দী, ভীত আমরা প্রতিটি বিশ্ববাসী
করোনা নামে এক বর্গির ভয়ে;
আমাদেরই ঔদ্ধত্যের ফলে,
প্রকৃতির অন্তরে থাকা দীর্ঘদিনের
চাপা ক্ষোভের ভয়ে;
সামাজিক মেলামেশা তার লাগাম ছাড়া মাত্রা থেকে নেমে,
মুখ ঢেকে,দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে বেশ কিছুদিন হল।
সেই সুবাদে বন্ধ রয়েছে সব রকমের যান চলাচল।
অনেকদিন পর সন্ধ্যে বেলায় পাখীর কূজন শুনতে পেয়ে
ভাবলাম প্রকৃতির রোষ কিছুটা কমলো বুঝি;
সেই মন খারাপ করা বিকেল ফিরে এলো ভেবে,
একদিন ছাতে উঠে পাশের বাড়ীর আলসেতে দাঁড়িয়ে থাকা
মাধবীলতাকে আমি চিনতে পারলেও সে আমাকে চিনতে পারেনি।
মনে মনে বলি, গোটা বিশ্বকে এই কদিনে এতোটা বদলে দিয়েও,
তুমি রোষ মুক্ত হতে পারলে না মাধবীলতা;
আর কিসের বিনিময়ে আগের মত তোমার রঙ্গিন ফুল ফুটিয়ে
হাতছানি দিয়ে ডেকে বলবে,“আমাকে চিনতে পারো?”
অমিতাভ ভট্টাচার্য
বাগুইআটি, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত
বিষয়: অমিতাভ ভট্টাচার্য
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: