সিডনী মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ ২০২৪, ৫ই চৈত্র ১৪৩০


গল্প হলেও সত্যি : স্বপ্না ধর 


প্রকাশিত:
১৯ জুন ২০২১ ২০:২২

আপডেট:
১৯ মার্চ ২০২৪ ১৪:২৫

 

বাসাটা ছোট হলেও গোছানো-গাছানো ছিমছাম আর অনেক পরিপাটি। চারপাশের পরিবেশটাও বেশ। একটা বারান্দার একপাশ তো বাগানবিলাসের সমা রোহে সৌন্দর্যমন্ডিত। সেইসাথে বারান্দায় অজস্র ফুলের টবে বিভিন্ন ফুল উঁকি দিচ্ছে।

প্রায় দশ বছর ধরে তারা এই বাসাতেই আছে। বাসাটা একটু ছোট এবং ইদানিং বাড়িটা বিক্রির হালকা রব ওঠায় তারা অন্যত্র চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কিন্তু এই এলাকায় অনেকদিন যাবত আছে বিধায় এলাকাটা তারা ছাড়তে চাইছে না। তাই আশেপাশেই খোঁজখবর নিতে চেষ্টা করল। দুই তিনটা বাড়ি পরেই নতুন একটি বাসা পেয়ে গেল। বাসাটা বেশ বড়োই বলা চলে। বাইরে থেকে বাসাটা অতোটা সুন্দর না হলেও তাদের ফ্ল্যাটের সামনে বেশ মনোরম একটা পরিবেশ ছিল। কারণ জানালা দিয়ে সামনের ছাদটা দেখা যেত যেখানে অসংখ্য ফুলের গাছ আর ফলের গাছের সমারোহ ছিল। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। ঐ কারণেই বাসাটা তাদের অনেক পছন্দ হলো।

সকালেও ঘুম ভাঙত পাখির কিচিরমিচির ডাকে। ঐ ছাদের বয়স্ক লোকটার সাথে তাদের ছোট বাচ্চাটার অনেক ভাব হয়ে গেল। লোকটার সাথে আধো আধো বোলে সারাক্ষণ‌ই কিছু না কিছু কথা সে বলতো। সব কিছু এতো ভালো থাকার পর ও বাসাটা কেন যেন ভালো লাগতো না রাখির। কী যেন একটা তাকে সর্বদা তাড়া করে বেড়াত। জগতের বাবাকে সে এ কথাটা প্রায় ই বলতো। মাঝেমধ্যে কীসের একটা গুমরানো শব্দ যেন তার কানে আসতো। সে শব্দের উৎসের দিকে ছুটে যেত, কিন্তু আর কোন শব্দ পেত না। 

একদিন সকালবেলা। ঐ ছাদটিতে রাখি একটা ক্যাপ পরা যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। তার এক মুহূর্তের জন্য মনে হয় লোকটা বোধহয় চোর।চিৎকার দিয়ে জগতের বাবাকে সে ডাক দেয়। দু'জন ই লোকটাকে দেখে। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই যেন কোথায় হারিয়ে যায় লোকটা। আর তাকে দেখা গেল না। ছাদ থেকে নিচে নামার গেটটাও বন্ধ থাকতে দেখা যায়।

এর কিছুদিন পর সন্ধ্যাবেলার দিকে ঝপঝপ করে ছাদে ইটের টুকরা পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সবাই একসাথে শব্দটা শুনতে পেল। জগতের বাবা তার ভাগ্নেকে নিয়ে ব্যাপারটা কী হলো দেখতে ছাদে গেলেও তারা কোথাও কাউকে দেখতে পেল না। শব্দটাও বন্ধ হয়ে এলো। তাদের বিল্ডিংটার উচ্চতা সবচেয়ে বেশি ছিল। তাই অন্য কোন জায়গা থেকে ছাদে ইট পড়ার প্রশ্ন ই ওঠে না।

অজানা ভয়ে রাখির দিন কাটতে থাকে। সে বাসা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করতে থাকল। এর ভেতর হুটহাট করে ঘরের বিভিন্ন জিনিস কোন কারণ ছাড়াই ভেঙে পড়তে লাগল - পর্দার রড, ফ্যানের রেগুলেটর, জলের ট্যাপ ইত্যাদি।

বিশেষ একটা কাজে জগতের বাবার কয়েকদিনের জন্য বাইরে যাবার দরকার পড়ল। এদিকে তার ছোট বেলার এক পূর্বপরিচিত তার নম্বর জোগাড় করে প্রায়‌ই তাকে দেখার ইচ্ছা পোষণ করে। এই সুযোগেই সে দেখা করতে যায়। কারণ তার গন্তব্যস্থল এবং সেই লোকের বাসস্থান পাশাপাশি। ঐখানে সে গেলে সেই রাতে রাখি স্বপ্ন দেখে-

পাশের ঐ ছাদের সাদা আর লাল জামরুল গাছ এর মাঝখানে একটা বেঞ্চ। বেঞ্চের উপর সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটা মৃতদেহ। মুখ চেনা যায় না।

স্বপ্নটা দেখার সাথে সাথে রাখির ঘুম ভেঙে যায় এবং তার সর্বশরীর শীতল হয়ে যায়। এই সময় তার বড় বাচ্চাটা রাখিকে ডেকে বলে, 

"মা আমি খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। দুটো লম্বা কালো হাত জানালার ওপাশ থেকে আমাকে আঁকড়ে ধরে ছিল। আমাকে ছেড়ে দিয়েই হাতটা বাবাকে ধরল।"

জগতের মায়ের সারাদিনটা খুব অস্থিরতায় কাটল।জগতের বাবাকে ফোন করল কিন্তু স্বপ্নের কথাটা তাকে বলতে পারল না। 

কিছুদিন পর তার বাবা বাড়িতে ফিরে এল। তারপর থেকে কোনদিনও জগতের বাবা যে লোকের বাসায় গেছিল ঐ লোকের আর ফোন পেল না।

একদিন কথা প্রসঙ্গে রাখি জানতে পারল, এই বাড়িতে যারা আগে ছিল, তারা সব অস্বাভাবিক আর পাগল ছিল। আর একবার একজন যুবক বয়সে এখানেই আত্মহত্যা করে।

রাখি আজ বাচ্চা দুটো নিয়ে বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। সব গোছগাছ প্রায় শেষ। এর মধ্যে পাঁচ ছয় বছরের এক বাচ্চা ছেলে ঘরের মধ্যে দিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগল। সবাইকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, কেউ ছেলেটাকে চেনে না। রাখির ইচ্ছা হলো ছেলেটাকে ডেকে কিছু খেতে দেবে। কিন্তু তারপরে ছেলেটাকে আর দেখতে পেল না। যখন সে বাসা ছেড়ে চলে গেল, নিচেও খোঁজ করে ছেলেটার আর হদিস পেল না।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top