সিডনী মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১


কুরবানী দাতা যে সকল কাজ থেকে দূরে থাকবেন


প্রকাশিত:
১৬ আগস্ট ২০১৮ ০১:২০

আপডেট:
৭ মে ২০২৪ ১১:০৩

কুরবানী দাতা যে সকল কাজ থেকে দূরে থাকবেন

আরবী ‘কুরবান’ শব্দটি ফারসী বা ঊর্দূতে ‘কুরবানী’ রূপে পরিচিত হয়েছে, যার অর্থ ‘নৈকট্য’। আর ‘কুরবান’ শব্দটি ‘কুরবাতুন’ শব্দ থেকে উৎপন্ন। আরবী ‘কুরবাতুন’ এবং ‘কুরবান’ উভয় শব্দের শাব্দিক অর্থ নিকটবর্তী হওয়া, কারো নৈকট্য লাভ করা প্রভৃতি। ইসলামী পরিভাষায় ‘কুরবানী’ ঐ মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহ রাববুল আলামীনের নৈকট্য অর্জন ও তার ইবাদতের জন্য পশু যবেহ করা হয়। (মাজদুদ্দীন ফীরোযাবাদী, আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব, পৃ. ১৫৮; মুফরাদাত লি ইমাম রাগিব ৩/২৮৭; তাফসীরে কাশশাফ, ১/৩৩৩; রায়যাবী, ১/২২২।

(ক) কুরবানী দাতা নবী ইব্রাহীম (আ.) ও মুহাম্মদ (সা.)- এর আদর্শ বাস্তবায়ন করে থাকেন।

(খ) পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কুরবানী দাতা আল্লাহ রাববুল ‘আলামিনের নৈকট্য অর্জন করেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :-



 ‘আল্লাহর নিকট পৌছায় না উহার গোশত এবং রক্ত, বরং পৌছায় তোমাদের তাক্বওয়া। এ ভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়নদেরকে।’ [সূরা হজ্জ্ব:৩৭]।



(গ) পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অভাবীদের আনন্দ দান। আর এটা অন্য এক ধরনের আনন্দ যা কুরবাণীর গোশতের পরিমাণ টাকা যদি আপনি তাদের সদকা দিতেন তাতে অর্জিত হত না। কুরবানী না করে তার পরিমাণ টাকা সদকা করে দিলে কুরবানী আদায় হবে না।

কুরবানীর ফজীলত সম্পর্কে বর্ণিত কোন হাদীসই বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়; বরং এ সম্পর্কে বর্ণিত সবগুলো হাদীসই যঈফ ও জাল। তারপরও কুরবানীর সময় নিকটবর্তী হলে ব্যাপক আকারে এ হাদীসগুলোর ছড়াছড়ি দেখা যায়। বক্তা, লেখক, প্রবন্ধকার সমানভাবে ঐ যঈফ ও জাল হাদীসগুলো চর্চা করেন। কেউ সেগুলি জুম‘আর খুৎবায় মধুর সুরে পাঠ করেন, কেউ তা নিজ প্রবন্ধে পরিবেশন করে প্রবন্ধের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন। আবার কেউ বক্তৃতার মঞ্চে পাঠ করে মঞ্চ গরম করেন। আর কুরবানীর ঈদের খুৎবার সময় তো শতকরা ৯৫ ভাগ খত্বীবই ঐ হাদীসগুলোকে খুৎবার মূল পুঁজি হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। এর একমাত্র কারণ হলো চরম উদাসীনতা ও অজ্ঞতা। ইমাম মুসলিম (রাহ.)- এর ভাষায়, ‘যারা যঈফ ও জাল হাদীস জেনে শুনে (সতর্কীকরণ ছাড়াই) বলে বেড়ান তারা আলেম উপাধি পাবার চেয়ে জাহেল উপাধি পাবার অধিক হক্বদার এবং তারা সাধারণ মুসলিম সমাজকে ধোঁকাদানকারী বলে গণ্য হরে।’ (সহীহ মুসলিম শরীফের ভূমিকা দ্র.)।







সুন্নাহ দ্বারা এ কথা প্রমাণিত যে, যিলহজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে কুরবানীর পশু যবেহ না করা পর্যন্ত কুরবানীদাতার শরীরের কোন লোম বা চুল, নখ ও চর্মাদি না কাটা ওয়াজিব। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে-



 



উম্মু সালামাহ (রা.) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমাদের মাঝে যে কুরবানী করার ইচ্ছে করে সে যেন যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। ইমাম মুসলিম হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তার অন্য একটি বর্ণনায় আছে- ‘সে যেন চুল ও চামড়া থেকে কোন কিছু স্পর্শ না করে। অন্য বর্ণনায় আছে ‘কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্ব পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭৭; নাসাঈ, মিশকাত, হাদীস নং ১৪৫৯)

বলিষ্ঠ মতানুসারে এখানে এ নির্দেশ ওয়াজিবের অর্থে এবং নিষেধ, হারামের অর্থে ব্যবহার হয়েছে। কারণ, তা ব্যাপক আদেশ এবং অনির্দিষ্ট নিষেধ, যার কোন প্রত্যাহারকারীও নেই। (তাফসীর আযওয়াইল বায়ান, ৫/৬৪০; আল-মুমতি, ৭/৫২৯) তবে কেউ যদি জেনে-শুনে ইচছা করেই চুল-নখ কাটে, তবে তার জন্য জরুরী যে, সে যেন আল্লাহর নিকট ইসেত্মগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করে। আর তার জন্য কোন কাফফারা নেই। সে স্বাভাবিকভাবেই কুরবানী করবে। আবার প্রয়োজনে যেমন- নখ ফেটে বা ভেঙ্গে ঝুলতে থাকলে বা মাথায় জখমের উপর চুল থাকলে এবং ক্ষতির আশঙ্কা হলে) কেটে ফেলতে কোন দোষ নেই। কারণ, সে মুহরিম যে হজ্জ বা ওমরার জন্য ইহরাম বেধেছে তার) অপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যার জন্য অসুবিধার ক্ষেত্রে মাথা মুন্ডিত করাও বৈধ করা হয়েছে।

কুরবানীদাতা চুল ও নখ না কাটার নির্দেশে কি হিকমত রয়েছে এ বিষয়ে উলামায়ে কেরাম অনেক কথা বলেছেন। অনেকে বলেছেন, কুরবানী দাতা হজ্জ করার জন্য যারা ইহরাম অবস্থায় বয়েছেন তাদের আমলে যেন শরিক হতে পারেন, তাদের সাথে একাত্মতা রাখতে পারেন।

ইবনুল কায়্যিম (রাহ.) বলেছেন, ‘কুরবানী দাতা চুল ও নখ বড় করে তা যেন পশু কুরবানী করার সাথে সাথে নিজের কিছু অংশ আল্লাহ রাববুল ‘আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কুরবানী (ত্যাগ) করায় অভ্যস্ত হতে পারেন এ জন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’(ইবনে উসাইমীন, আহকামুল উযহিয়্যাহ, পৃ.৭৭)।

এমন কোন ব্যক্তি যার চাঁদ দেখার পর কুরবানী করার ইচ্ছা ছিল না, সে চুল বা নখ কেটে থাকলে এবং তারপর কুরবানী করার ইচছা হলে তারপর থেকেই আর তা কাটবে না।

কুরবানী করার জন্য কেউ যদি কাউকে ভার দেয় বা অসীয়ত করে, তবে সেও নখ-চুল কাটবে না। অবশ্য ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা অসী এ নিষেধের শামিল হবে না। অর্থাৎ তাদের জন্য নখ-চুল কাটা দূষণীয় নয়। অনুরূপভাবে পরিবারের অবিভাবক কুরবানী করলে এ নিষেধাজ্ঞা কেবল তার পক্ষে হবে; বাকী অন্যান্য স্ত্রী-পুত্র বা আত্মীয়দেরকে শামিল করবে না। তাদের জন্য নির্দিষ্ট কুরবানী না থাকলে তারা নিজেদের চুল-নখ কাটতে পারে। যেহেতু আল্লাহর রাসূল (সা.) নিজ বংশধরের তরফ থেকে কুরবানী করতেন অথচ তিনি তাদেরকে নখ-চুল কাটতে নিষেধ করেছেন বলে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।



 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top