সিডনী রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


উটঃ আল্লাহর সৃষ্টির এক অপার নিদর্শন : মোঃ শামছুল আলম


প্রকাশিত:
১৫ আগস্ট ২০২৩ ২১:৪০

আপডেট:
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৩১

 

‘নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তণে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে’। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৯০)
মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালা। আকাশ-বাতাস, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত, পশু-পাখি সব কিছু তিনিই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর এই সৃষ্টিরাজির মধ্যে আমাদের জন্য স্তরে স্তরে শিক্ষা রেখেছেন। এসব নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে আল্লাহর পরিচয় পাওয়া যাবে সহজেই। একই সঙ্গে তার বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য নিয়েও আমাদের ধারণা হবে যে, নিশ্চয় এসবের নিয়ন্ত্রণ কর্তা একজন রয়েছেন, যিনি সবার বড়, সবার প্রভু ।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা কি লক্ষ করে দেখে না উটের দিকে, কীভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে? আকাশের দিকে, কীভাবে তাকে উঁচু করে স্থির ধরে রাখা হয়েছে? পাহাড়ের দিকে, কীভাবে জমিনে স্থাপন করা হয়েছে? ভূপৃষ্ঠের দিকে, কীভাবে তা বিস্তৃত করা হয়েছে?’ (সুরা গাশিয়াহ : ১৭-২০)
এসব আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানুষের উদ্দেশে তার সৃষ্টি নিয়ে চারটি প্রশ্ন করেছেন। উট, আকাশ, পাহাড় ও মাটি। আমাদের উচিত এসব সৃষ্টিগুলো নিয়ে একটু চিন্তাভাবনা করা।
আর এ প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ পাক মানব সম্প্রদায়কে প্রাণীবিজ্ঞান, মহাকাশবিজ্ঞান, ভূবিজ্ঞান এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞানের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। নিঃসন্দেহে এই চারটি বিজ্ঞানে মানুষের জন্য বিরাট কল্যাণ রয়েছে।
বর্তমানে মুসলিম জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞানে অন্য সব জাতির থেকে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমরা, কুর’আনে পরিষ্কারভাবে সৃষ্টিজগত নিয়ে গবেষণা করার পরিষ্কার নির্দেশ থাকার পরেও শুধু নামাজ, রোজা করে জীবন পার করে দিচ্ছি! আরও লজ্জার ব্যাপার হলো, এই সব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমাদের অমুসলিম বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফলের মুখাপেক্ষী হতে হয়!
আজকে আলোচনা করবো উটের প্রধান কিছু বিশেষত্ব নিয়ে।
‘তারা কি উটের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কীভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে?’ (সুরা গাশিয়া: ১৭)
উট সৃষ্টিজগতের এক মহাবিস্ময়। এটি ৫৩ ডিগ্রি গরম এবং মাইনাস -১ ডিগ্রি শীতেও টিকে থাকে। মরুভূমির উত্তপ্ত বালুর ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা পা ফেলে রাখে। কোনো পানি পান না করে মাসের পর মাস চলে। মরুভূমির বড় বড় কাঁটাসহ ক্যাকটাস খেয়ে ফেলে। দেড়শ’ কেজি ওজন পিঠে নিয়ে শত মাইল হেঁটে পার হয়। উটের মতো এত অসাধারণ ডিজাইনের প্রাণী প্রাণিবিজ্ঞানীদের কাছে এক মহাবিস্ময়!
উট হচ্ছে মরুভূমির জাহাজ। এটি ১৭০-২৭০ কেজি পর্যন্ত ভর নিয়েও হাসিমুখে চলাফেরা করে। এই বিশাল, শক্তিশালী প্রাণীটির মানুষের প্রতি শান্ত, অনুগত হওয়ার কোনোই কারণ ছিল না। বরং এরকম স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রাণীর হিংস্র হওয়ার কথা, যেন কেউ তাকে ঘাঁটানোর সাহস না করে। বিবর্তনবাদীদের বানানো বহু নিয়ম ভঙ্গ করে এই প্রাণীটি কোনো কারণে নিরীহ, শান্ত, মানুষের প্রতি অনুগত হয়ে গেছে।
আল্লাহ পাক যদি উটকে মানুষের জন্য উপযোগী করে না বানাতেন, তাহলে মরুভূমিতে মানুষের পক্ষে সভ্যতা গড়ে তোলা অসম্ভব হয়ে যেত।
উটের রক্ত বিশেষভাবে তৈরি প্রচুর পরিমাণে পানি ধরে রাখার জন্য। উট যখন একবার পানি পান করা শুরু করে, তখন এটি প্রায় ১৩০ লিটার পানি, প্রায় তিনটি গাড়ির ফুয়েল ট্যাঙ্কের সমান পানি ১০ মিনিটের মধ্যে পান করে ফেলতে পারে! এই বিপুল পরিমাণ পানি অন্য কোনো প্রাণী পান করলে রক্তে মাত্রাতিরিক্ত পানি গিয়ে অভিস্রবণ চাপের কারণে রক্তের কোষ ফুলে ফেঁপে ফেটে যেত। কিন্তু উটের রক্তের কোষে এক বিশেষ আবরণ আছে যা অনেক বেশি চাপ সহ্য করতে পারে। এই বিশেষ রক্তের কারণেই উটের পক্ষে একবারে এত পানি পান করা সম্ভব হয়।
ড্রোমেডারি উটের একটা কুঁজ থাকে আর ব্যাকট্রিয়ান উটের থাকে দুটো। যখন উট ভালো করে খেতে পায় তখন এর কুঁজ চর্বিতে ভর্তি হয়ে শক্ত টানটান অবস্থায় থাকে। যখন উট অভুক্ত অবস্থায় অনেকদিন থাকে তখন চর্বির অনেকটাই শক্তি উৎপাদনে ক্ষয় হয়ে যায় আর এর কুঁজ নরম থলথলে হয়ে যায়।
উটের চোখে দুই স্তর পাপড়ি রয়েছে। যার কারণে মরুভূমিতে ধূলিঝড়ের মধ্যেও তা চোখ খোলা রাখতে পারে। এই বিশেষ পাপড়ির ব্যবস্থা সানগ্লাসের কাজ করে মরুভূমির প্রখর রোদের থেকে চোখকে রক্ষা করে এবং চোখের আদ্রতা ধরে রাখে। একইসাথে এটি বিশেষভাবে বাঁকা করা যেন তা ধুলোবালি আটকে দিতে পারে।
উটের পায়েও গরুর মতো চেরা খুর। কিন্তু উটের পায়ের তলায় নরম প্যাড আছে যা গরুর নেই। গরুর মতো উটও রোমন্থন করে বা জাবর কাটে। কিন্তু সাধারণ রোমন্থনকারীদের মতো চার কক্ষবিশিষ্ট পাকস্থলির বদলে উটের পাকস্থলি তিন কক্ষ-বিশিষ্ট। তাই অনেকে এদের ছদ্ম রোমন্থক বলেন।
শরীরের ওজনের ৩০% এরও বেশি সমান পানির হ্রাস সহ্য করতে পারে (ফ্র্যাঙ্কলিন ২০১১) অন্যদিকে বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ১৫% হ্রাস পেলেই মারা যায়।
স্তন্যপায়ীর লোহিত কণিকা গোলাকার। শুধু উটের লোহিত কণিকা ডিম্বাকৃতির, যা পানিশুন্য অবস্থায় রক্ত চলাচলে সহায়তা করে। এর আবরণীও বেশ মজবুত, যা অল্প সময়ে উট অনেক পানি পান করলে যে osmotic variation, তা সহ্য করার ক্ষমতা রাখে ও আবরণী ফেটে যায় না।
উটের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর চেয়ে পৃথক হয়। গরু এবং ছাগলের তুলনায় উটের রোগ অনেক কম।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top