সিডনী মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১


অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম আলী বানাতের মৃত্যুর ভিডিও অনলাইনে যেভাবে ভাইরাল


প্রকাশিত:
৩ জুন ২০১৮ ১০:৩৩

আপডেট:
৭ মে ২০২৪ ১৩:৪৫

অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম আলী বানাতের মৃত্যুর ভিডিও অনলাইনে  যেভাবে ভাইরাল

আলী বানাত। ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে জন্ম ও বেড়ে উঠা। মাত্র ২১ বছর বয়সে সফল ব্যবসার মালিক হয়েছিলেন। পেশায় ছিলেন ইলেক্ট্রিশিয়ান। নামকরা সিসিটিভির কোম্পানি ছিল। টাকাপয়সা দেদারসে আয় হচ্ছিলো। ফলে আধুনিক জীবনের সবকিছুই হাতের নাগালে ছিল। চেয়েছিলেন বয়স ত্রিশে যেয়ে অবসর নিবেন। জীবনকে উপভোগ করবেন। সেজন্যে দামী বাড়ি গাড়ি আসবাবপত্র ও পরিধেয় জিনিসপত্র জোগাড় করেছিলেন। অত্যন্ত লেভিশ জীবন ভোগ করছিলেন। কোন অভাবই তার ছিলোনা।



২০১৫ সালে তার জীবনে একটি মোড়ঘোরানো ঘটনা ঘটে। ডাক্তাররা তার শরীরের ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানান তার শরীরে ঘাতক ক্যান্সার বাস করছে। প্রচলিত কোন চিকিৎসায় আর কাজ হবে না। তিনি আর মাত্র ৭ মাস বাঁচবেন। Testicular cancer ধরা পড়েছে। এবং এটি তার সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ক্যান্সারটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমি পুরো ইংরেজি অংশটুকু এখানে পেস্ট করলাম (Testicular cancer is cancer that develops in the testicles, a part of the male reproductive system). তবে ডাক্তারদের বেঁধে দেয়া সময় থেকে আরও ২৫ মাস বেশি বেঁচেছেন। জীবন মৃত্যু যে বিধাতার কাছে এও তার এক প্রমাণ।



তিনিও বুঝে নিলেন যে তিনি এই মায়ার পৃথিবীতে আর বেশীদিন নেই। যে সময়টুকু পেয়েছেন তা আল্লাহ কর্তৃক যেন একটা গিফট। একটা শেষ চান্স। তৎক্ষণাৎ শুরু হল লেভিস লাইফ ছেড়ে দিয়ে সিরাতুল মুস্তাকিমের দিকে যাত্রা। ব্যবহার্য সকল দামী জিনিসপত্র বিক্রি করা। সাথে সফল ব্যবসাটিও। সকল টাকা পয়সা এক করে চলে গেলেন আফ্রিকার টোগোতে। চ্যারিটি কাজ করবেন। একটি সংগঠনও দাড় করেছেন। নাম দিয়েছেন ‘মুসলিম এরাউন্ড দা ওয়ার্ল্ড’। এর ব্যানারে টোগোতে অনেকগুলো বাড়ি, দোকান, স্কুল কলেজ মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার ইত্যাদি গড়ে তুলেন। সাথে আত্মীয় গরীব দুখীদের সাহায্য করেন। গো ফান্ড মি- এর মাধ্যমে ও নিজের সম্পদ বিক্রি করে প্রায় ২ মিলিয়ন ডলারের কাজ করেন। তার এই চ্যারিটি কার্যক্রম চলমান।



তিনি একদিন চেয়েছিলেন বয়স ত্রিশে অবসর নিবেন। বানাত মনে করেন আল্লাহ তাকে ঠিকই ত্রিশে ঐ অবসরের খবর পাঠিয়েছেন। এবং তা করেছেন লাইফ চেইঞ্জিং এক রোগ দিয়ে যা তার কাছে একটি গিফট। তিনি মনে করেন মরার সময় একটি টাকাও তার সাথে যাবে না। সুতরাং ভালো কাজ তথা আল্লাহর রাস্তায় দান বা সাদাকা করে গেলে মৃত্যুর পরে এর উপকারভোগী মানুষের দোয়ার বরকতে তার পাপ মোচন হবে। আল্লাহ তাকে তখন জান্নাতের উচ্চতম স্থানে রাখবেন, এ তার বিশ্বাস। আসলেও তাই, একজন ক্ষুধার্ত পশুকেও যদি কেউ খাওয়ায় তাহলে তার যে আরাম হবে তাও এক দোয়া। আল্লাহ তখন ঐ ক্ষুধা নিবারণকারীকে অন্যভাবে দুনিয়াতেও পুষিয়ে দেন যা আমরা অনেকসময় বুঝিনা।



এসব চ্যারিটি কাজের মাঝে একসময় বাঁধা হয়ে দাড়িয়ে ছিল অস্ট্রেলিয়ার ‘কমনওয়েলথ ব্যাংক’ যেখানে তার চ্যারিটির সব টাকা জমা ছিল। তারা কিছুদিন একাউন্ট বন্ধ রেখেছিল। এর কারণ অনেকেই মনে করেছেন মুসলিম চ্যারিটি যা কিনা অনেক সময় পশ্চিমা বিশ্বে টেররিস্ট ফান্ডিং হিসেবে গন্য করা হয়। অনেক সময় জেনেও তারা হয়রানী করার উদ্দেশ্যে তা করে থাকে। কারণ কি তা সবার জানা।গত ৩০শে মে অস্ট্রেলিয়ায় সময় মাগরিবের একটু পূর্বে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।ফেইসবুকসহ সকল সামাজিক মাধ্যমে তার মৃত্যু সংবাদ ভাইরাল হয়ে গেছে। শত কিংবা হাজার নয় লাখ লাখ লাইক, শেয়ার আর কমেন্টস্। না থেকেও তিনি রয়ে গিয়েছেন সবার মাঝে।



 



আমরা অনেকেই জানিনা কখন কার মৃত্যু হবে। তবে একদিন যে মরবো তা কিন্তু সবাই জানি। তখন আমির বাদশা ফকির মিসকিন সবাই একটি আধুলিও সাথে নিতে পারবো না। আলী বানাত তিন বছরে নিজেকে যেভাবে গুছিয়েছেন, আমরা ৪০/৫০ বছরেও তা পারছি না। আজ কাল করে সময়কে ফাঁকি দিচ্ছি। পরশু কখন জানি মৃত্যু সামনে এসে হাজির হয়। আমিও চাই এই আলী বানাতের মতো আমার ডাক্তার একদিন আমাকেও বলুক, তুমি আর কয়েকটা মাস আছো! গুছিয়ে নাও সবকিছু। তখন যদি সত্যিই কিছু করতে পারি… সাথে ছোট একটা চ্যারিটি কর্ম… না হোক সেটা বানাতের মতো।



 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top