সিডনী বুধবার, ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০শে মাঘ ১৪৩১


ম্যানচেস্টার সিটির জালে আর্সেনালের ৫ গোল


প্রকাশিত:
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৩১

আপডেট:
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৪৩

সংগৃহীত ছবি

ম্যাচ শুরু হতেই গুরুতর এক ভুল করে বসে ম্যানচেস্টার সিটি। দীর্ঘ প্রচেষ্টায় পিছিয়ে পড়ার সেই ধাক্কা সামলে নিলেও, রক্ষণ জমাট রাখতে পারেনি তারা। হাইভোল্টেজ ম্যাচে আগ্রাসী ফুটবলে লিগ চ্যাম্পিয়নদের বিধ্বস্ত করল আর্সেনাল।

এমিরেটস স্টেডিয়ামে রোববার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে ৫-১ গোলে জিতেছে গতবারের রানার্সআপরা।

মার্টিন ওডেগোরের গোলে পিছিয়ে পড়ার পর সমতা টানেন আর্লিং হলান্ড। কিন্তু সিটির উচ্ছ্বাস থেমে যায় পরমুহূর্তেই। পরের ২০ মিনিটে টমাস পার্টি, মাইলস লুইস-স্কেলি ও কাই হাভার্টজের লক্ষ্যভেদে এবং শেষ দিকে ইথান নোয়ানেরি দুর্দান্ত এক গোলে জয়ের আনন্দে মাঠ ছাড়ে আর্সেনাল।

প্রায় ১৭ বছরের মধ্যে এই প্রথম প্রিমিয়ার লিগের কোনো অ্যাওয়ে ম্যাচে ৫ গোল হজম করল সিটি। এর আগে সবশেষ তাদের এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল ২০০৮ সালের মে মাসে, মিডলসবরোর বিপক্ষে হেরেছিল ৮-১ গোলে।

আসরে প্রথম দেখায় গত সেপ্টেম্বরে দুই দলের ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল; একেবারে শেষ মুহূর্তের গোলে হার এড়িয়েছিল সিটি।

নভেম্বর-ডিসেম্বরের ছন্দপতনে শিরোপা লড়াই থেকে আগেই ছিটকে গেছে সিটি। তবে নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। টানা ছয় ম্যাচ অপরাজিত (চার জয় ও দুই ড্র) থাকার পর ফের লিগে হারের স্বাদ পেল দলটি।

অন্যদিকে, গত ২ নভেম্বরের পর আর হারেনি আর্সেনাল। ২৪ ম্যাচে ১৪ জয় ও ৮ ড্রয়ে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে তারা। ৩ পয়েন্ট কম নিয়ে তৃতীয় স্থানে নটিংহ্যাম ফরেস্ট।

আসরে সপ্তম হারের স্বাদ পাওয়া ম্যানচেস্টার সিটি ৪১ পয়েন্ট নিয়ে আছে চার নম্বরে।

শিরোপা পুনরুদ্ধারের অভিযানে দারুণ ছন্দে এগিয়ে চলা লিভারপুল ২৩ ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে।

গত দুই আসরের এক ও দুই নম্বর দলের লড়াই শুরু হতেই গড়বড় করে ফেলেন মানুয়েল আকাঞ্জি। তাতে দ্বিতীয় মিনিটেই গোল খেয়ে বসে সিটি।

সতীর্থের পাস নিজেদের বক্সের সামনে পেয়েই হারিয়ে ফেলেন সুইস ডিফেন্ডার। প্রতিপক্ষের অমন উপহার পেয়ে কোনো ভুল করেনি স্বাগতিকরা। সতীর্থের বাড়ানো বল বক্সে ধরে কাই হাভার্টজ নিজেই শট নিতে পারতেন, তবে তিনি আরও নিশ্চিত হতে খুঁজে নেন পাশে ওডেগোরকে। জোরাল শটে বাকি কাজ সারেন আর্সেনাল অধিনায়ক।

ষষ্ঠ মিনিটে ফের সিটির জালে বল জড়ান গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি। তবে সঙ্গে সঙ্গেই ওঠে লাইন্সম্যান্সের পতাকা, অফসাইডে ছিলেন মার্তিনেল্লি। এই দফায় বেঁচে যায় সিটি।

২৩তম মিনিটে গোলরক্ষকের নৈপুণ্য ও ভাগ্যের জোরে জাল অক্ষত থাকে আর্সেনালের। ইয়োশকো ভার্দিওলের হেডে বল ঝাঁপিয়ে পড়া দাভিদ রায়ার হাতে লেগে ক্রসবারে বাধা পায়।

তিন মিনিট পর আবার রক্ষণে তালগোল পাকায় সিটি এবং এরপর অবিশ্বাস্য এক সুযোগ হারায় আর্সেনাল।

এবার সিটির গোলরক্ষক স্টেফান ওর্টেগা সামনে সতীর্থ মাতেও কোভাচিচের উদ্দেশ্যে বাজে এক পাস দিয়ে বসেন, যা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি এই মিডফিল্ডার। ওখান থেকে সতীর্থের পাস বক্সে ফাঁকায় পেয়ে দেখে-শুনে যে শট নিলেন হাভার্টজ, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য! বল গড়িয়ে বাইরে চলে যেতেই হতাশায় মুখ ঢেকে ফেললেন জার্মান মিডফিল্ডার।

ডাগআউটে গুয়ার্দিওলার ভঙ্গিতেও মনে হচ্ছিল, দ্বিতীয় গোল খাওয়া থেকে এভাবে বেঁচে যাবেন, হয়তো ভাবতে পারেননি তিনি।

৪৪তম মিনিটে রায়ার আরেকটি দারুণ সেভে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্সেনাল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড সাভিনিয়োর কাছ থেকে নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে আটকান স্প্যানিশ গোলরক্ষক।

দ্বিতীয়ার্ধের দশম মিনিটে সমতা টানতে পারে সিটি। সাভিনিয়োর ক্রসে হেডে গোলটি করেন হলান্ড। দারুণ একটি মাইলফলকও স্পর্শ করেন তিনি; ক্লাব ফুটবলে এটা তার ২৫০তম গোল।

এবারের লিগে হলান্ডের মোট গোল হলো ১৯টি। তার চেয়ে দুটি বেশি করে তালিকার শীর্ষে লিভরপুলের মোহামেদ সালাহ।

তাদের সমতায় ফেরার স্বস্তি অবশ্য পরের মিনিটেই উবে যায়। এখানেও প্রতিপক্ষের দুর্ভাগ্য আর্সেনালের সৌভাগ্য বয়ে আনে। টমাস পার্টির বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট ডিফেন্ডার জন স্টোন্সের পিঠে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়।

গত সপ্তাহে উলভের বিপক্ষে ১-০ গোলে জয়ের দিনে লাল কার্ড দেখা লুইস-স্কেলির এই ম্যাচে খেলার কথাই ছিল না। নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি আরও দুই ম্যাচে। পরে ওই লাল কার্ড বাতিল হয়ে যাওয়ায় মাঠে নামলেন ১৮ বছর বয়সী ডিফেন্ডার এবং ৬২তম মিনিটে তার নৈপুণ্যেই ব্যবধান বাড়ায় আর্সেনাল।

ডেকলান রাইসের পাস ধরে বক্সে জায়গা বানিয়ে জোরাল শট নেন লুইস-স্কেলি, ওর্টেগা ঝাঁপিয়ে বলে হাত ছোঁয়ালেও রুখতে পারেননি। পোস্টে লেগে বল ঠিকানা খুঁজে পায়। সিনিয়র ফুটবলে প্রথম গোলের স্বাদ পেলেন আর্সেনালের একাডেমিতে বেড়ে ওঠা এই ইংলিশ লেফট-ব্যাক।

প্রথমার্ধে ওই বিব্রতকর ভুলের প্রায়শ্চিত্ত ৭৬তম মিনিটে দারুণ এক গোলে করলেন হাভার্টজ। মার্তিনেল্লির পাস বক্সে পেয়ে, জায়গা বানিয়ে প্রতিপক্ষের দুজনের মাঝ দিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে শট নিলেন তিনি। দূরের পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়াতেই উল্লাসে ফেটে পড়ল গ্যালারি। জয় যে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেল।

তিন মিনিট যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে সিটির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন নোয়ানেরি। ডি-বক্সের বাইরে বল পায়ে একটু আড়াআড়ি গিয়ে বাঁ পায়ের দুর্দান্ত বাঁকানো শটে দূরের পোস্ট দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন ১৭ বছর বয়সী মিডফিল্ডার। জায়গা থেকে নড়ার সুযোগ পাননি গোলরক্ষক।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top