খাজিয়ার থেকে ডালহৌসি : ডঃ গৌতম সরকার
প্রকাশিত:
২২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৩৫
আপডেট:
৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:১৫
২৭শে ডিসেম্বর সকালে আমাদের খাজিয়ার ছাড়ার কথা; ঠাকুরসাহেবের সব ভালো কিন্তু ওনার সকাল হয় একটু দেরীতে, তাই আমরা যতই বলি নটা-সাড়ে নটা নাগাদ বেরোবো, উনি ততই ওটাকে এগারোটা, সাড়ে এগারোটার দিকে ঠেলে দিতে চান৷ তখন একটু সময়ের দড়ি ধরে টানাটানি করে ওটাকে সাড়ে দশটা করতে হয়৷ তাই খাজিয়ার ছাড়তে আমাদের ওই সাড়ে দশটাই হল৷ খাজিয়ারকে শেষবারের মতো বিদায় জানিয়ে গাড়ি এগিয়ে চলল, আজকের জার্নি বেশী দূরের নয়-দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার৷ মাইল তিনেক যাবার পর রাস্তার পাশে বরফের আভাস পেলাম, যত এগোতে থাকি বরফ বাড়তে লাগল৷ এটা আমাদের কাছে অনভিপ্রেত- যদিও ঠাকুরসাব দুয়েক দিন আগে বলেছিলেন ডালহৌসিতে বরফ পড়েছে, কিন্তু প্রকৃতি আমাদের জন্য এভাবে পথের চারপাশে সফেদ সম্ভার সাজিয়ে রাখবে ভাবিনি৷ যত সময় যাচ্ছে বরফের রাজ্যে ঢুকে পড়ছি, গাড়ি থেকেই কাঁপা কাঁপা হাতে ছবি তোলার চেষ্টা করছি দেখে ঠাকুরসাব নিরস্ত করলেন৷ কিছুক্ষন পর যেখানে গাড়ি থামালেন তার আশপাশের সবুজ, কালো পিচরাস্তা সাদা বরফের প্রাচুর্য্যে ভরে গেছে৷ ছেলে-বুড়ো নির্বিশেষে শিশুর সারল্যে বরফখেলায় মেতে উঠেছে৷ চারদিকে ছবি তোলার হুড়োহুড়ি, আর সবথেকে মজার বরফের মেঝেয় অন্যদের আছাড় খেতে দেখা৷ আমার সঙ্গিনী তো ভয়ে বেশীদূর এগোলোইনা, গাড়ির মধ্যেকার ওমকেই বেশী কাম্য মনে করে গাড়িতে গিয়ে বসল৷ ঠাকুরসাব ভাবিজীর ব্যাপারে খুব যত্নবান৷ ভাবিজি যখনই ঠান্ডায় কাতর হন তখনই উনি গাড়ির ব্লোয়ার চালিয়ে দেন, অগত্যা আমি একাই বরফের রাজ্যে রাজত্ব চালাতে লাগলাম, আর এই পঞ্চাশ বছর বয়সে যখন কোনরকমে ভারসাম্য সামলাতে সামলাতে বরফের পাহাড়ে ওঠার রাস্তায় সন্তানের বয়সী ছেলে-মেয়েগুলোর অনবরত আছাড় খেয়ে পড়তে দেখে মজাই লাগছিল৷ গড়াতে গড়াতে যেখান থেকে শুরু করেছিলো সেখানে গিয়ে পৌঁছোচ্ছে, এ যেন সাপ-লুডো খেলা৷ নির্মল আনন্দে বেশ কিছুটা সময় কিছু অনাত্মীয়ের সাথে কেটে গেল৷ ওরা আমার অনেক ছবি তুলল, এমনকি ওদের সাথে গ্রুপ ফটোও উঠলো৷ তবে সব শুরুরই শেষ থাকে, তাই আমাকেও ফিরতে হল৷ বেশ কিছুদূর গিয়ে গাড়ি আবার থামলো৷ এই জায়গাটা অপেক্ষাকৃত সহজ, বরফ যথেষ্ট কিন্তু বরফ রাজ্যে প্রবেশ করা অতটা ভয়াবহ নয়, বৌদির সৌজন্যে অপেক্ষাকৃত সহজ জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে গাইড করে আমাদের বরফ রাজ্যের অনেকটা ভিতরে নিয়ে গেলেন, সঙ্গে অনেক ছবি তুললেন এমনকি ভিডিও করলেন৷
এবার প্রতীতি হল পাহাড়ে বরফপাত পরিপার্শ্ব কিভাবে চকিতে বদলে যায়৷ গাড়ির মধ্যেকার কৃত্রিম উষ্ণতায় নিজেদের সেঁকতে সেঁকতে বাইরের পৃথিবীর বরফ শীতল সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম ১৪ কিমি দূরে কালামুনি টপে৷ এখানে এসে বিষ্ময়ের চূড়ান্তে পৌঁছলাম, বছরের এই সময় অল্পবিস্তর বরফ পড়লেও এত বরফ আমরা আশা করিনি, সমস্ত জায়গা বরফে ঢাকা, আশপাশের চালাঘরগুলোর সব ছাদ বরফের চাদরে মোড়া, রাস্তায় প্রায় তিন-চার ফুট বরফ জমে আছে, তার মধ্যে মানুষ বাঁধনহীন আনন্দে মেতে উঠেছে৷ কালামুনি টপ এখান থেকে তিন কিলোমিটার, আমাদের কোনোরকম পরিকল্পনা ছিলনা যাবার, কিন্তু সমতল রাস্তা আর রাস্তার অসামান্য সৌন্দর্য্য আমাদের গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে নিয়ে চললো, অবশেষে আমরা সত্যিসত্যিই পৌঁছে গেলাম কালামুনি টপে৷ গোটা রাস্তায় না আছে কোনো দোকান না কিছু, এটা একটা স্যাংচুয়ারি, অরণ্যপ্রেমীদের স্বর্গ, পথের শেষে এক বনবাংলো আর সাথে এক রেস্টোরান্ট পাবেন৷ আমাদের কাছে একটা জলের বোতল পর্যন্ত ছিলনা৷ সবচেয়ে চিন্তার কথা আমরা এতটা চলে আসবো সেটা আমরা নিজেরাও জানতাম না ফলে ঠাকুরসাবকেও বলে আসিনি, এখন মনে হচ্ছে উনি ইতিমধ্যেই চিন্তা করতে শুরু করে দিয়েছেন, আর এখানে মোবাইলের কোনো নেটওয়ার্ক কাজ করছেনা৷ কিন্তু এসব ভাবার আগে একটা কিছু পানীয়র খুব দরকার, রাস্তা সমতল হলেও, একটানে অনেকটা এসেছি, দুজনে দুকাপ কফি নিয়ে বসলাম৷ আমাদের চোখের সামনে খোলা দিগন্ত, ছোটখাটো কোনো আগাছাও নেই যা দৃষ্টিকে ব্যাহত করতে পারে৷ অনেকক্ষণ পরে যখন গন্তব্যের প্রায় কাছাকাছি ফিরেছি, দেখি উল্টো দিক থেকে ঠাকুরসাব উদ্বিগ্ন মুখে হনহন করে হেঁটে আসছেন৷ কৃতজ্ঞতায় আর সাথে কিছুটা অপরাধবোধে মনের মধ্যে দ্বৈত্ব অনুভবের সৃষ্টি হল৷ অনেক বেলা হয়েছে, ডালহৌসি এখনো ৭-৮ কিলোমিটার দূর, তাই সবাই মিলে এখানেই খেয়ে নিলাম৷ খাবার পর পড়ন্ত বিকেলের ছায়াপথ পেরিয়ে এগিয়ে চললাম হিমালয়ের কোলে আরেক ভালোবাসা জারানো জায়গা ডালহৌসি অভিমুখে৷
ডালহৌসি পৌঁছতে সাড়ে চারটে বেজে গেল৷ রাস্তা খুব সুন্দর, শহরে ঢোকার মুখে ডালহৌসি পাবলিক স্কুল, ঝকঝকে ছবির মতো অবস্থান, শহর থেকে খুব জোর দু কিলোমিটার৷ ডালহৌসি শহরের শুরু গান্ধীচক থেকে, এখান থেকে একটা পাহাড়কে বেড় দিয়ে দুটি পথ মোটামুটি সমদূরত্বে (২কিমি ) মিলেছে সুভাষচকে, ওখান থেকে ডানদিকের পথটি সটান নেমে গেছে এক কিলোমিটার দূরে বাসস্ট্যান্ডে৷ বাসস্ট্যান্ড থেকে HPTDC-র হোটেল আধ কিলোমিটার দূরে৷ হোটেলে পৌঁছে মনটা ভালো হয়ে গেল, ঘর দেখে আনন্দ তো বাঁধনহারা৷ আমার কাছে বেড়াতে গিয়ে হোটেলের ঘরটাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে - যে ঘর তার উন্মুক্ত অন্বেষায় আপনাকে প্রকৃতির সাথে মুখোমুখি বসার অবসর তৈরী করে দেয়, সে ঘর তো ভালোবাসার ঘর, আপনাকে নতুন করে ভাবতে শেখায়, ভালোবাসতে শেখায়৷ বিছানায় শুয়ে শুয়ে দেখলাম মাথার ওপর দিয়ে ধৌলাধার পাহাড়শ্রেণী চলে গেছে৷
সত্যিই তাই, তবে আকাশ একেবারে অকৃপণ নয়, বেশ মেঘ আছে, তাই ধৌলাধার নতুন বৌয়ের মতো একটুকু মুখ দেখাছে৷ একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে সন্ধ্যে নাগাদ বেরোলাম, বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে এক কাপ করে চা খেয়ে সুভাষচকের দিকে এগোলাম৷ কিন্তু এটা যেমন সত্য, ‘প্রত্যেক সফল পুরুষের পিছনে যেমন একজন নারী আছে,' তেমনি প্রতিটি এগিয়ে যেতে চাওয়া পুরুষ মানুষকে পিছন থেকে টেনে থামানোর জন্যও একজন নারী থাকে, যেমন আমার বউ৷ একটু চড়াই উঠতে উঠতেই জিজ্ঞাসা করলেন, 'আছা আমরা কোথায় যাচ্ছি বলতো?' আমার মনে হল বলি, ‘শ্মশানে৷ মুখে বললাম, 'কেন সুভাষচক !' বুঝলাম, এইটুকু চড়াইয়েই দম বেরিয়ে গেছে, এখনো বেড়ানোর বেশ কয়েকদিন বাকি আছে, তাই কোনোমতে সেন্ট জনস চার্চ দেখে অনিচ্ছা সত্বেও মাঝরাস্তা থেকে ফিরে আসতে হল৷
পরের দিন পূব আকাশ জুড়ে রক্তিম সুর্যোদয় আমার সারা সকালটা রাঙিয়ে দিয়ে গেল, এরপরই প্রভাত ভ্রমণে বেরিয়ে পড়লাম৷ বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে বাঁ দিকের রাস্তাটা ধরলাম, তবে রাস্তার আশপাশ বেশ মলিন আর অপরিচ্ছন্ন৷ যত এগোই মলিনতা বাড়তে লাগলো, ভালো লাগলোনা তাই কিলোমিটার খানেক গিয়ে ফিরে এলাম৷ এবার বাস স্ট্যান্ড থেকে ডানদিকের রাস্তা ধরলাম, অভিজ্ঞতা একেবারে উল্টো, ছবির মতো সুন্দর, মাখন সদৃশ রাস্তা, পিকচার পোস্টকার্ড ব্যাকগ্রাউন্ড, তফাতটার কারন বুঝতে একটু সময় লাগলো; অদূরেই এক মিলিটারি ব্যারাক আছে৷ সমস্ত পাহাড়ে দেখেছি কোথাও মিলিটারি ব্যারাক থাকলে অন্ততঃপক্ষে পাঁচ কিলোমিটার আগে থেকে আপনি বুঝতে পারবেন, এদের পরিচ্ছন্নতা এবং নান্দনিকবোধ সত্যিই তারিফযোগ্য৷ কিছু স্বপ্নের রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম সেনাব্যারাকে৷ সৈনিকদের সকালের ব্যস্ততা পুরোমাত্রায় শুরু হয়ে গেছে, তার মধ্যেও আমাকে দেখে হাত তুলে, হাই- হ্যাল্লো, গুড মর্নিং করছেন, আমিও প্রত্যুত্তরে তাদের স্যালুট জানালাম৷ খুব ভালো লাগলো, সকালের ভ্রমন পরিপূর্ণ করে নটা নাগাদ হোটেলে ফিরলাম, কারন সাড়ে নটায় বেরোতে হবে চামেরা লেকের উদ্দ্যেশে৷
ব্রেকফাস্ট করে বেরোতে বেরোতে দশটা হয়ে গেল, আজ চামেরা লেক আর সাথে ওখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের ভদ্রকালী মন্দির দেখার ইচ্ছে আছে৷ আমাদের প্রাথমিক ট্যুর প্ল্যানে এই দুটো জায়গা ছিলনা, কারন পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন কিলোমিটার দূরের দ্রষ্টব্য সাধারণত সাইটসিয়িংয়ের মধ্যে পড়েনা৷ আমি দেখলাম ডালহৌসিতে কাছাকাছি দেখার মতো কিচ্ছু নেই, সাইট-সিয়িং বলে যে জায়গাগুলো দেখায় (সাতধারা, পঞ্চপুল্লা, ইত্যাদি) দেখে মনে হয় অযথা সময় নষ্ট, এর থেকে হোটেলের ব্যালকনিতে বসে ধৌলাধারের সাথে নীরব আলাপচারিতা অনেক ভালো ছিল৷ তাই আগের দিন রাতে ঠাকুরসাবকে আর্জি জানিয়ে ছিলাম আজ আমাদের ভদ্রকালী মন্দির আর চামেরা লেক ঘুরিয়ে আনার জন্য, উনি এককথায় রাজি৷ তারই ফলশ্রুতি আজকের এই ভ্রমন৷ জনান্তিকে বলে রাখি এই ট্যুরের জন্য ঠাকুরসাব এক পয়সাও অতিরিক্ত নেননি৷
যে রাস্তা ধরে আমাদের যাত্রা শুরু হল, এরকম সুন্দর রাস্তা আর পরিপার্শ্ব এই ট্যুরে এর আগে পাইনি৷ রাস্তায় চড়াই-উৎরাই নেই বললেই চলে, মাখনের মতো রাস্তা উপত্যকার আঁকাবাঁকা পথ ধরে অজানার ঠিকানায় চলেছে৷ আস্তে আস্তে প্রকৃতি বদলাতে শুরু করলো৷ দূরের পাহাড়গুলোয় একটু গোলাপী আভা, গাছপালার সবুজের মধ্যে বাদামি রঙের পালিশ৷ এখানকার সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে থেকে একসাথে সমস্ত পাহাড়কে রাঙিয়ে দিতে পারছেনা, কিন্তু যেসব জায়গায় আলো পড়ছে সেখানে অদ্ভূত এক অকাল বাসন্তী রঙ চারদিক মোহময়ী করে তুলেছে আর আশপাশের সবুজ গাছপালা সেই মায়াবী আলোর প্রতিফলনে ঝিকমিকি জ্বলছে৷ এই অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি, একটা তন্ময়তার মধ্যে কখন যে সময় কেটে গেল, চটক ভাঙলো যখন গাড়িটা হঠাৎ থেমে গেল৷ ঠাকুরসাবের ডাকে সম্বিত ফিরে গাড়ি থেকে নেমে অনেকটা ওপর থেকে পাখির চোখে চামেরা লেক দেখলাম৷ সবুজ-বাদামী প্রেক্ষাপটে স্লেট রঙা জলের ধারা আপন খেয়ালে মাইলের পর মাইল বয়ে চলেছে; আর তার স্বকীয়তা ও সম্ভ্রমের আঁচে পাহাড়ী উপত্যকার সৌন্দর্য্য কয়েকশো গুন বাড়িয়ে তুলেছে৷ আমরা লেকের বুক ছুঁয়ে এগিয়ে গেলাম৷
ভদ্রকালী এক জাগ্রত দেবী, স্থানীয় মানুষদের কাছে ‘ভালাই মাতা’ বলে বেশি পরিচিত, বিশ্বাস মাতা সকলের সব কামনা পূর্ণ করেন৷ অসাধারণ এক সুন্দর লোকেশন; এখান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি চক্ষু-চত্বরে গোটা উপত্যকা এমনকি চামেরা লেকেরও বেশ কিছুটা অংশ চোখে পড়ে৷ কিছুটা সময় দেবীদর্শন ও প্রকৃতি দর্শন করে ফিরলাম চামেরা লেকে৷ এখন দুপুর একটা বাজে, পর্যটকের ভিড় একদমই নেই তাই বোট হাউসে কাজকর্ম ধীর গতিতে চলছে, জিজ্ঞাসা করে জানা গেল বোট ছাড়তে আধা ঘন্টা দেরী৷ এবার খিদে পেতে শুরু করেছে, কিছুক্ষণ পর ভয়ংকর খিদে পাবে আর দেখেছি পথে কোনো খাবার জায়গা নেই৷ তাই চামেরা লেকের চোখভরা ও মনছোঁয়া সৌন্দর্য্য দেখে এবারের মতো নৌকোভ্রমন বিরত রেখে ফেরার পথ ধরলাম৷ তবে দুজনে প্যাডেল বোট নিতেই পারতাম, কিন্তু আমার জীবনের এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আমাকে প্রতিবার আঙ্গুল নেড়ে শাসায়; বেশ কিছু বছর আগে দার্জিলিং থেকে ফেরার সময় মিরিক হয়ে এসেছিলাম, তা ইচ্ছে হয়েছিল মিরিক লেকে বোটিং করার৷ পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলনা কিন্তু আমি আর আমার স্ত্রী ছাড়া বাকি দুজনের প্রত্যয় ছিল চূড়ান্ত৷ কিন্তু শুরুর কিছু বাদেই বুঝলাম ওরা বোট চালানোর নূন্যতম টেকনিক জানেনা; ডানদিক যেতে হলে ওরা পিছনে যায়, বাঁ দিক হলে ডাইনে, একটা সময় উল্টো পাল্টা যেতে যেতে আমাদের বোট ব্রিজের দেওয়ালে গিয়ে ফেঁসে গেল৷ এমন ফাঁসা ফাঁসল সেখান থেকে আর বের হতে পারিনা৷ আমরা তো আনকা, কিন্তু যারা এক্সপার্ট দাবী নিয়ে আমাদের এই খেলায় সামিল করেছিল তারাই সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে 'ছিছিক্কার' করল৷ সব থেকে লজ্জার, ব্রিজের ওপর কয়েকশো লোক জমে গেছে তামাশা দেখতে, সাথে বাংলা, হিন্দি, নেপালী বিভিন্ন ভাষায় আমাদের এই গাড্ডা থেকে বেরোনোর নির্দেশ বাতলে যাচ্ছে- কেউ বলে বাঁদিকে ঘোরো, কেউ বলে ডাইনে, কেউ বলে হ্যান্ডেল ডান দিকে ঘোরান কেউ বলে পিছনে, কেউ বলে বাঁয়ে; কিন্তু আমরা লজ্জা আর টেনশনে আরও ভুলভাল করছিলাম, আর বেশি করে গাড্ডার মধ্যে ঢুকছিলাম৷ আর গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো জ্বালা হচ্ছিল যখন আমাদের সঙ্গে আসা বন্ধুরা আমাদের অবস্থা দেখে সাহায্য করার পরিবর্তে ব্রিজের ওপর থেকে হ্যা হ্যা করে হাঁসছিল৷ এরপর থেকে নাক কান মলেছি- কোনোদিন বোটে চড়বোনা৷
ডঃ গৌতম সরকার
লেখক, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত
বিষয়: গৌতম সরকার
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: