সিডনী রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগের দ্বার খুলে দিয়েছে মেগাপ্রকল্প


প্রকাশিত:
৫ জানুয়ারী ২০২৪ ১৮:০৫

আপডেট:
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৫১


দেশের অর্থনীতিতে মেগাপ্রকল্পগুলো বড় ভূমিকা রাখছে। পদ্মা রেল সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেল, দোহাজারী-কক্সবাজার রেল ও রামপাল-মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো প্রকল্পগুলো বিনিয়োগের দ্বার খুলেছে। সড়ক ও রেল প্রকল্পগুলো যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করেছে। এতে বেসরকারি বিনিয়োগে নতুন সাড়া পড়ছে।


তেমনি বিদ্যুতের প্রকল্পগুলো কলকারখানাকে গতিশীল করার মাধ্যমে অর্থনীতিকে বেগবান করেছে। মেগাপ্রকল্পের ফলে উপকৃত এলাকাগুলো এখন অর্থনীতির হাবে পরিণত হচ্ছে।
পদ্মা সেতু চালুর ফলে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানীসহ উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। এতে অর্থনীতি, যোগাযোগ, উৎপাদন, শিল্পায়ন, পর্যটন ইত্যাদিতে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য ও পরিবর্তন এসেছে।


এর মধ্যে পদ্মার ওপারে বেশ কিছু শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে বলে জানা গেছে। ওই অঞ্চল থেকে আগের চেয়ে ঢাকায় পণ্য পরিবহনও বেড়েছে। কৃষকরা ভালো দামে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। ফলে তাঁরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

গত দেড় বছরে প্রায় এক হাজার ১৭৩ কোটি টাকা টোল আদায় হয়েছে বলে জানা গেছে।
মেট্রো রেলের চলাচল ঢাকার জনগণের মধ্যে বিপুল সাড়া জাগিয়েছে। বর্তমানে মেট্রো রেলে প্রতিদিন এক লাখের বেশি যাত্রী ভ্রমণ করছে। মতিঝিলে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কাজ করেন মিরপুর পীরেরবাগের বাসিন্দা ঝুমু রাবেয়া। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আগে যেখানে সাড়ে সকাল ৭টায় বের হতাম, এখন সোয়া ৯টায় বাসা থেকে বের হই।


মেট্রো রেল আমাদের জীবনকে খুব সহজ করে দিয়েছে।’
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রামের আনোয়ারার শিল্পাঞ্চল, কেইপিজেড, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসহ পার্বত্য জেলার সঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগ সহজ করেছে, যা শিল্প, বিদ্যুৎ অবকাঠামো ও পর্যটনশিল্পের বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ চালু হওয়ায় মানুষের জোয়ার নেমেছে দেশের প্রধান সমুদ্রসৈকতে।

সড়ক ও রেলপথের পাশাপাশি আকাশপথেও যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে চালু হচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। এই টার্মিনাল চালু হলে বিশ্বের নামকরা বিমান কম্পানির উড়োজাহাজগুলো এখানে চলাচল শুরু করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। রাজস্ব সংগ্রহসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই বিমানবন্দর হবে আরো একটি মাইলফলক।

বিদ্যুতের বড় চাহিদা মেটানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম এনে টেস্ট রান করা হয়েছে। পুরোদমে উৎপাদন শুরু হলে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো ঘাটতি থাকবে না বলে আশা করা যাচ্ছে। এ ছাড়া অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে চলেছে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মহেশখালী গভীর সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগ, পূর্বাচল ৩০০ ফুট প্রশস্ত এক্সপ্রেসওয়ে, যমুনা নদীতে বিকল্প রেল সেতু, খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প, আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানা ইত্যাদি প্রকল্প।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেন, এসব মেগাপ্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সাহসী ও দূরদর্শী পদক্ষেপের ফসল। দু-একটি প্রকল্প ছাড়া বেশির ভাগ প্রকল্পের রেট অব রিটার্ন ধনাত্মক বলে প্রমাণিত হয়েছে। মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল তৈরি হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা বাড়ছে, ফলে ভবিষ্যতে প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজতর হবে।

মেগাপ্রকল্পের সফলতার বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মেগাপ্রকল্পগুলো মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে, দুর্ভোগ কমিয়েছে। এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমি নিজেও অনেক খুশি ও উত্ফুল্ল। কখনো কল্পনাও করিনি ১০ থেকে ১৫ মিনিটে মিরপুর থেকে মতিঝিল বা ৩-৪ ঘণ্টায় খুলনা থেকে ঢাকা পৌঁছতে পারব, যা এখন বাস্তব। শুরুতে যে চ্যালেঞ্জ ছিল, সেগুলো আমরা জয় করেছি। আমরা সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছি। আমরা আরো বড় বড় মেগাপ্রকল্প নিতে চাই। তবে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নয়।’

এসব বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, মেগাপ্রকল্প শুধু যোগাযোগের করিডর হলেই হবে না, অর্থনৈতিক করিডরও হতে হবে। এসব এলাকায় শিল্প-কারকানা কতটা গড়ে উঠছে, এর ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কতটা বাড়ছে, সেটাও দেখার বিষয়। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় অবশ্যই মানুষের কর্মঘণ্টা কমেছে, পণ্য পরিবহন বেড়েছে, এটাও একটা ভালো দিক।

মেগাপ্রকল্পের অগ্রগতি

পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য মতে, গত অক্টোবর পর্যন্ত ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত মেগা আট প্রকল্পের গড় অগ্রগতি ৮৫.৯৩ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৭৩.৫৫ শতাংশ। প্রকল্পগুলোর আওতায় ব্যয় হয়েছে দুই লাখ ১২ হাজার ৮৯৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ছয় হাজার ২৬৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

এর মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ৭০৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।

মেট্রো রেল প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছে। এরপর গত ৪ নভেম্বর উদ্বাধন করা হয় আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শুরু থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬১.৬২ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৬৭ হাজার ১১ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ প্রকল্পটি উৎপাদনে আসতে পারে। মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (১২টি প্রকল্প যুক্ত) প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গল লাইন ডুয়াল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে আট হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি চার হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ৭৬১ কোটি টাকা।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top