সিডনী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিস্কারে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই : মাহবুবুল আলম 


প্রকাশিত:
২০ আগস্ট ২০২০ ২২:২৩

আপডেট:
২০ আগস্ট ২০২০ ২২:৫২

ছবিঃ মাহবুবুল আলম 

 

আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাবের কারণে দেশীয় পণ্যের ব্যাপারে আমাদের আগ্রহ কম। কিন্তু বিদেশি পণ্য নিন্মমানের হলেও তা নিয়ে আদিখ্যেতার যেন সীমা থাকে না। তা কেনা’র জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ি। আবার এমনও অনেকে আছেন দেশীয় পণ্যের কথা শুনলে নাক ছিটকান! কিন্তু তারা একবারও ভেবে দেখেন না যে, তাদের পছন্দের পণ্যটি বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রতি বছর শত শত কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে।
বিশ্বে যে কয়েকটি দেশের রপ্তানি আয় খুব দ্রুত বাড়ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। গড় হিসাবে এক দশক ধরে দেশের রপ্তানি আয়ে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। অগ্রসরমাণ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়, ওপরে আছে কেবল ভিয়েতনাম। বিশ্ববাণিজ্যের এ চিত্র উঠে এসেছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে। এটি গত সপ্তাহে প্রকাশ করা হয়। সব মিলিয়ে বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশ এখন ৪২ তম বড় রপ্তানিকারক দেশ, অন্যদিকে আমদানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩০তম।

সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশের মানুষ সেই সু সংবাদ পেতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম খাত তৈরি পোষাক হলেও ঔষধ খাতও কম ভূমিকা রাখছে না। যাক এ নিবন্ধের বিষয়বস্তু রপ্তানি খাত নিয়ে নয় তাই এ বিষয়ে আর কথা না বাড়িয়ে চলে যাচ্ছি মূলকথায়।
কথা হচ্ছে করোনা ভ্যাকসিন আবিস্কার নিয়ে। করোনা ভ্যাকসিন আবিস্কার নিয়ে বিশ্বে যে শীতল যুদ্ধ শুরু হয়েছে সে-যুদ্ধে কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ মোটেই পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য পরাক্রমশালি দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে প্রায় সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। এ দৌড়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের
দেশের অন্যতম ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। তাদের করোনার ভ্যাকসিন আগামী ডিসেম্বর নাগাদ বাজারে আসবে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে। সে লক্ষ্যেই কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধান ডা. আসিফ মাহমুদ। ১২ আগস্ট ২০২০ তিনি বলেন, ‘সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বর মাস নাগাদ ভ্যাকসিন বাজারজাত করতে পারবো বলে আশা করছি।’ গত ২ জুলাইয়ে প্রতিষ্ঠানটি দেশে প্রথম ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। সেদিন তারা জানায়, গত ৮ মার্চ তারা এই টিকা আবিষ্কারের কাজ শুরু করেন এবং সব পর্যায়ের কাজ শেষ করতে পারলে আগামী ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে এই টিকা বাজারজাত করা যাবে।
গ্লোবের ঘোষণা দেওয়া করোনার ভ্যাকসিনের কী অবস্থা, কাজ কতদূর এগিয়েছে সে বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলতে গিয়ে ডা. আসিফ মাহমুদ জানান, তারা এখনও অ্যানিমেল ট্রায়ালে রয়েছেন, সেটা এখনও শেষ হয়নি। অ্যানিমেল ট্রায়াল শেষ করে সেপ্টেম্বরের মধ্যে হিউম্যান ট্রায়ালের (মানুষের মধ্যে প্রয়োগ) জন্য আবেদন করবেন। হিউম্যান ট্রায়ালের তিন ধাপ শেষ করে ডিসেম্বর নাগাদ বাজারে আসবে ভ্যাকসিন। তিনি আরও জানান, অ্যানিমেল ট্রায়ালের জন্য ভ্যাকসিন দেওয়ার পর কিছু অ্যানালাইসিস রয়েছে, যার কিছু রি-এজেন্ট দরকার হয়। সব জিনিস এখনও হাতে না এলেও চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ডা. আসিফ। তিনি আশা করছেন, খুব দ্রুতই সেগুলো চলে আসবে। জানা গেছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা কেন্দ্রে প্রাণীর ওপর ট্রায়াল চলছে, বাকি কাজ চলছে তাদের ল্যাবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে ডা. আসিফ মাহমুদ বলেন- অ্যানিমেল ট্রায়ালের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। আন-অফিসিয়ালি আমরা অবশ্য কথা বলে নিয়েছি। তাদের কাছ থেকে কোনও অ্যাপ্রুভালের প্রয়োজন এখন নেই। অ্যানিমেল ট্রায়ালের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিএমআরসি এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন নেওয়া হবে।’

অথচ আমাদের দেশের কিছু দেশপ্রেমহীন মানুষ দেশে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের খবর শোনে রীতিমতো হাসাহাসি করছে, এ নিয়ে ট্রলও করছেন। এ বিষয় নিয়ে জনৈক ফেসবুক ইউজার তার প্রতিক্রিয়া
ব্যক্ত করছেন এভাবে-
"বাংলাদেশ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করার দাবী করেছে" - শুনতেই আমাদের সচেতন ফেসবুক বিশেষজ্ঞগন হাসতে হাসতে মাটিতে শুয়ে পড়ছেন। ট্রল করছেন। মজা নিচ্ছেন। অথচ দফায় দফায় ট্রায়াল দিয়ে ব্যর্থ হওয়া বিভিন্ন দেশের ভ্যাকসিন আবিষ্কার এর খবর শেয়ার দিতে দিতে টাইমলাইন ভরে ফেলেছি। নিজ দেশের প্রতি এতো অবিশ্বাস আমাদের? আমাদের দেশের হাজার হাজার মেধাবী তরুণরা বর্হিবিশ্বের বিভিন্ন টপ ক্লাস পজিশন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এ খবরটা কি আমাদের অজানা? আজ যদি ডাঃ আসিফ মাহমুদ অন্য কোনো দেশে বসে ভ্যাকসিন আবিষ্কার এর দাবী জানাতেন তাহলে কিন্তু আমরা মাথায় তুলে নাচতাম, কিন্তু এখন কি করছি?"

সর্বশেষ আপডেটে জানা গেছে কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতার শিকার না হলে আগামী ডিসেম্বরে বাজারে টিকা আনতে পারবে তারা। প্রথম ধাপে ৫০ থেকে ৭০ লাখ টিকা উৎপাদন করতে পারবে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ যতটা কৌতুহলী দেশের টিকা নিয়ে ততটা কৌতুহলী বা ঔৎসুক নয়। তারপরও নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ‘বায়োটেক’।
বায়োটেক তাদের গবেষণার বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে দ্রুতই ভ্যাকসিনটি বাজারে নিয়ে আসবে এবং এর মাধ্যমে করোনার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে তুলে ধরবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

 

মাহবুবুল আলম
কবি, কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top