রোজিনা ইসলামের মতো চোর জন্ম নিক এদেশের ঘরে ঘরে : শাকিলা নাছরিন পাপিয়া
প্রকাশিত:
২০ মে ২০২১ ১৯:৪৫
আপডেট:
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৯
একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিককে কাজ করতে গিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় সারা দেশ। নিতে হয় ছদ্মবেশ। চোর, ডাকাত, ভিক্ষুক নানা ভূমিকায় তাকে অংশ নিতে হয়। দেশের বড় বড় সত্যিকারের চোর, বদমাশের তথ্য জনসমক্ষে নিয়ে আসার জন্য জীবন বাজি রেখে তাদের চষে বেড়াতে হয় এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত।
এদেশের নারীরা দুই দশক আগেও শুধু নারী পাতায় রূপ চর্চা, রান্না, সন্তান পালনসহ নরম কোমল লেখা লিখতেন দৈনিক পত্রিকাগুলোতে। গতানুগতিক সে নিয়মের বাইরে এসে, আনুগত্যের লহ্মণ রেখা অতিক্রম করে আপন আলোয় বন্ধুর পথে হাঁটার নাম রোজিনা ইসলাম। আজ সারা দেশ উত্তাল। একটি ঘটনা একদিনে ঘটে না। ছোট ছোট ঘটনা ঘটার পর যখন কোন প্রতিকার হয় না। রাষ্ট্র, প্রশাসন, সরকার নির্বিকার থাকে তখন আসে প্রাকৃতিক প্রতিশোধ।
রোজিনা ইসলামের ঘটনা সে প্রকৃতিক প্রতিশোধ। ক্ষমতা, আর দম্ভের মূর্ত প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বিসিএসধারীরা। অতীতে আমরা দেখেছি মাছওয়ালা, সবজিওয়ালা, সাধারণ জনগণ এদের স্যার সম্বোধন না করায় অসম্মানের সম্মূখীন হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী যারা সোজা কথায় জনগণের চাকর তারা আজ মনিবের মত আচরণ করছে কেন, এ জবাব তাদের কাছে চাওয়া হয়নি।
করোনা শুরু হবার পর সারা দেশের মানুষ দরিদ্র মানুষের পাশে যার যা আছে তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমন কি ভিক্ষুক পর্যন্ত তার অর্থ সরকারি তহবিলে দান করেছে মানুষের কল্যাণের জন্য। ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের আশংকা যেখানে ছিল সেখানে সরকার এবং জনগণের যৌথ প্রচেষ্টায় কেউ না খেয়ে মারা যায়নি। মৃত্যু ভয় মানুষকে যখন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল তখন চাল চোর, তেল চোরের নতুন নতুন খবর দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করল। এ খবরগুলো দিয়ে মফস্বলের সাংবাদিকেরা সাহায্য করছিল।
চোরদের কী শাস্তি হয়েছিল জানি না। তবে, অনেক সাংবাদিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে তা আমরা দেখেছি। সাংবাদিক সংগঠনের জোরালো প্রতিবাদ আমরা দেখিনি। গতানুগতিক মানববন্ধন, নিন্দা, টকশোতে সমালোচনা এ পর্যন্তই।
"আমারে মাইরেন না, আমি আর নিউজ করবো না।"
এ কথাগুলো চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সারোয়ারের। জানি না তিনি এখন কেমন আছেন।
রোজিনা ইসলামের যে নিউজগুলোর কারণে অপরাধীরা সংঘবদ্ধঃ
১/ ক্রেস্টের স্বর্ণের ১২ আনাই মিছে!
২/ ' এখন এক কোটি দেব, পরে আরও পাবেন।'
৩/ ৩৫০ কোটি টাকার জরুরী কেনাকাটায় অনিয়ম।
৪/ পরে আছে জীবন রক্ষাকারী সামগ্রী।
ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ভিডিও।
প্রথম দিন আমরা দেখেছি রোজিনার গলা টিপে ধরা ভিডিও। তাঁকে নানাভাবে অপদস্ত করার ভিডিও।
দ্বিতীয় দিন সৃজনশীল ব্যক্তিরা তাদের মেধা খাটিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছেন সেই ভিডিও যেখানে তিনি স্বীকার করছেন তিনি ভুল করেছেন।
চোর প্রমানের জন্য সর্ব শক্তি প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে।
দস্যু বনহুর , রবিন হুড এ চরিত্রগুলো শাসকের কাছে অপরাধী কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে নয়, সেটা কি এই ভিডিও নির্মাতারা জানেন?
অতিরিক্ত সচিব জেবুন্নেসার সম্পদঃ
কানাডায় বাড়ি-- তিনটি
পূর্ব লন্ডনে বাড়ি -- একটি
ঢাকায় বাড়ি৷ --- চারটি
গাজীপুরে জমি --২১ বিঘা
এফডিআর --- ৮০ কোটি টাকা।
অতিরিক্ত সচিবের সম্পদের নমুনা এই। পূর্ণ সচিবের কী অবস্থা আল্লাহ জানেন।
এদের কোনমতেই চোর বা ডাকাত কিছু বলা যাবে না। কারণ, এরা দিন রাত একাকার করে কোন দেশের রাজধানীর নাম কী, মুদ্রার নাম কী, জনসংখ্যা কত এসব মুখস্ত করেছেন। সবাই এক নয়। যারা আদর্শ, মেধা নিয়ে আপোষ না করে স্রোতের বিপরীতে লড়ে গেছেন জীবন বাজি রেখে তাদের পরিণতিও দেশবাসী দেখেছে।
হাজী সেলিমের পুত্র যখন ফুলের মালা গলায় নিয়ে বাড়ি ফিরে তখন সততার পুরস্কার নিয়ে তিনি বদলী হন।
রোজিনা ইসলাম যদি চোর হন তাহলে এদেশের মায়েরা প্রার্থনা করবেন এমন চোর তাদের ঘরেও জন্ম নিক।
এমন চোরে পূর্ন হোক সারা দেশ। হালুয়া, রুটিতে সন্তুষ্ট সাংবাদিকতা নিপাত গিয়ে সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেলগুলো এমন চোর সাংবাদিকে ভরে উঠুক।
রোজিনা ইসলাম এদেশের মানুষের ভালোবাসায় কতোটা সিক্ত এই ঘটনা না ঘটলে তাঁর জানা হতো না। যে ভালোবাসা পায় দেশের সাধারণ মানুষের তাঁর আর কী চাই?
শেষ পর্যন্ত এটাই সত্যি, "আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন।"
শাকিলা নাছরিন পাপিয়া
শিক্ষক, কলামিস্ট ও কবি
বিষয়: শাকিলা নাছরিন পাপিয়া
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: