সিডনী মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ ১৪৩১


সুশান্ত সিং রাজপুতঃ এক তরুন প্রতিভার অপমৃত্যু : বটু কৃষ্ণ হালদার


প্রকাশিত:
৭ অক্টোবর ২০২০ ২১:১৩

আপডেট:
১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:০৯

ছবিঃ সুশান্ত সিং রাজপুত

 

মৃত্যু চিরন্তন সত্য,তাকে মেনে নেওয়া যুক্তিসঙ্গত। তবুও চোখের সামনে, প্রিয়জনের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখলে কার ভালো লাগে?তবে সম্পর্ক শুধুমাত্র রক্তে দিয়ে বিচার করলে হয় না।সমাজের বুজে এমন কিছু মৃত্যু আছে যা হৃদয় কে নাড়া দিয়ে যায়।বহু দিন ধরে সেই মৃত্যু রহস্য চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তেমনি এক রহস্যজনক মৃত্যুর নাম উদীয়মান  তরুন অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত। 

পৃথিবীর সহজাত ও শ্রেষ্ঠ সভ্যতা হল মানব সভ্যতা। সেই শ্রেষ্ঠ সভ্যতার মানুষজন স্বপ্ন দেখবে সেটাই বাস্তব। তবে মানুষের মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন দেখার বাসনা যদি না থাকে তাহলে কেউ জীবনে সাফল্য লাভ করতে পারে না। মূলকথা মানব জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি হলো স্বপ্ন। ঠিক তেমনই এক যুবক স্বপ্ন দেখেছিলেন চাঁদে পাড়ি দেওয়ার। সেই লক্ষ্য পূরণে মাত্র ১৬ বছর বয়সে মাতৃহারা এক যুবক বিহারের পূর্ণিয়া জেলার মালদিহাতে নামক স্থান থেকে অভিনেতা হওয়ার লক্ষ্যে পাড়ি দিয়েছিল স্বপ্নের নগরী মুম্বাইতে। ছেলেটির নাম সুশান্ত সিং রাজপুত।তিনি ছিলেন একজন খ্যাতিমান দক্ষ প্রতিভাবান ভারতীয় চলচ্চিত্র টেলিভিশন অভিনেতা নৃত্যশিল্পী টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব।বোন জিতু সিং রাজ্য স্তরের ক্রিকেটার। AIEEE প্রবেশিকা পরীক্ষায় দেশে সপ্তম স্থান অধিকার করেছিল মেধাবী ছেলেটি। ছিল এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ঠিকানা। দিল্লি কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়। কিন্তু অভিনেতা হওয়ার লক্ষ্য কখন যে অভিনয় করার বাসনা তার মাথায় ভর করে বসে, তা নিজেও বোধ হয় বুঝতে পারেনি। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেড়ে সে পাড়ি দেয় মুম্বাইয়ের হৃদপিণ্ড বলিউডে।প্রথমে একটা টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করেন। কিন্তু তার আগে সে একটা ফিল্মি পুরস্কারের অনুষ্ঠানে একজন ব্যাকগ্রাউন্ড নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ করেছিলেন।হিন্দি টিভি সিরিয়াল দিয়ে তাঁর অভিনয় জগতের পথ চলা শুরু হয়। "পবিত্র রিস্তা" সুশান্ত সিং রাজপুতের  জীবনে প্রথম সিরিয়াল ছিল না।

 

২০০৮ সালে স্টার প্লাস চ্যানেলে প্রচারিত টেলিভিশন ধারাবাহিক "কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল" টিভি সিরিয়ালে মধ্যে দিয়ে অভিনয় জগতে পা রাখেন। এই সিরিয়ালে তিনি প্রীত জুনেজা নামক চরিত্রে অভিনয় করেন। কিন্তু জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছায় "পবিত্র রিস্তা" সিরিয়াল। এই সিরিয়ালে মনমুগ্ধকর অভিনয় দর্শকদের কাছে আলাদা মাত্রা পায়। পবিত্র রিস্তা সিরিয়ালের জন্য বেশ কয়েকটি পুরস্কার লাভ করেন। তাঁকে পৌঁছে দেয় বলিউডের খুব কাছে। ২০১৩ সালে সুসান সিং রাজপুত বন্ধু কেন্দ্রিক নাট্য চলচ্চিত্র "কাই পো চে" তে ঈশান ভট্ট নামক চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেছিলেন। তার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা বিভাগে জি সিনে পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন গ্রহণ করেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে শাহরুখ খান ও শাহিদ কাপুর, সুশান্ত সিং রাজপুত কে স্টেজে ডেকে চরম অপমান করেন। এর পর তিনি প্রণয়ন কৌতুক ধর্মী চলচ্চিত্র "শুদ্ধ দেশী রোমান্স" সিনেমায় রঘুরাম নামক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এই সিনেমাতে প্রথম সই করেছিলেন শাহিদ কাপুর এবং শুটিংও শুরু করেছিলেন। পরে শাহিদ কাপুর নিজের নাম তুলে নেন। ডাক পড়ে পবিত্র রিস্তা সিরিয়ালের নতুন চমক সুশান্ত সিং রাজপুতের।

২০১৪ সালে বিগ বাজেটের ছবি আমির খান অভিনীত পিকে সিনেমা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এই সিনেমায় তিনি কোন পারিশ্রমিক নেন নি একথা স্বীকার করেছিলেন সিনেমার ডিরেক্টর। ২০১৫ সালে অ্যাকশন ও গোয়েন্দা ভিত্তিক চলচ্চিত্র ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সিতে গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। স্বপ্ননগরী মুম্বাইয়ের বলিউডে টিভি সিরিয়াল, ঝলক দিখলাজা স্টেজে নাচের শো থেকে শুরু করে "এম এস ধোনি দ্য আনটোল্ড স্টোরি" তাকে খ্যাতির চরম সীমায় পৌঁছে দেয়। যার জন্য তিনি প্রথমবারের মতো শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জন্য মনোনয়ন গ্রহণ করেছিলেন। ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কেদারনাথ এবং ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছিছোড়  এর মত বাণিজ্যিকভাবে সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

সুশান্ত সিং রাজপুত ছিলেন একাধিক প্রতিভাবান ব্যক্তি। আল আমিনের কাছে থেকে মার্শাল আর্ট শিখেছিলেন। বিখ্যাত অ্যাশলে  লোবোর ট্রাপের সাথে নাচেন এবং মোহিত সুরি কে রাজ _২ সিনেমা তে নাচের জন্য সহায়তা করেছিলেন। শুধু তাই নয় ছিলেন জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান। কারণ পদার্থবিজ্ঞানে ও জাতীয় স্তরে অলিম্পিয়াড বিজয়ী ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় ভারত সরকারের নীতিনির্ধারক ধারণা নীতি আয়োগ,মহিলা উদ্যোক্তা মাধ্যম প্রচার করার জন্য তার সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।

তাঁর জীবনের অবাধ বিচরণ ছিল মহাকাশ পর্যন্ত। জিনিয়াস সুশান্ত শিখেছিলেন কোডিং। কম্পিউটার গেম প্রিন্টার তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিলেন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবস্থা গেম তৈরি করতে চেয়েছিলে শুধু তাই নয়। শুধু তাই নয় পরিকল্পনায় ছিল প্রিন্টারের ডিজাইন প্ল্যানিংয়ের।যে প্রিন্টারটার ধারণা ছিল শুধুমাত্র স্ক্যান করে প্রিন্ট করতে সফল হবে। লকডাউ নে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার অনুগামীদের শুনিয়েছিলেন কম্পিউটার কোডিং শেখার কথা। তার ইনস্টাগ্রামে লেখেন_আমি কম্পিউটার গেমিং ভালোবাসি, সব সময় এর পিছনের ভাষাটা শিখতে চাইতাম। তাই শেষ কয়েক সপ্তাহ ধরে আমি কোডিং শিখেছি এবং এটা একটা দুর্দান্ত শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা। তা সত্ত্বেও এখনো শুধু সারফে সের উপর ঘোরাফেরা করছি।এর জন্য খান অ্যাডভার্টাইজমেন্ট কে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন সুশান্ত।

১৪ ই জুন ২০২০, মুম্বাইয়ের বান্দ্রা তে সুশান্ত  সিং রাজপুতের ফ্ল্যাট থেকে রহস্যজনক ভাবে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্র জগতে এক উদীয়মান তরুণ প্রতিভার মৃত্যুতে তোলপাড় ভারতবর্ষ সহ সমগ্র বিশ্ব। ইঞ্জিনিয়ারিং এ রাঙ্কিং করা ছাত্রটার চোখে মুখে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি দিয়েছিল স্বপ্ননগরী মুম্বাইতে। না, সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না।। ঠিক স্বপ্ন পূরণ হল না নয়, এক উদীয়মান তরুণ প্রতিভার গলা টিপে হত্যা করা হলো।

"এম এস ধোনি দ্য আনটোল্ড স্টোরি" বক্স অফিস হিট। অনবদ্য ও হৃদয়গ্রাহী অভিনয়ের জন্য একের পর এক সিনেমার অফার আসতে থাকে। স্বপ্ন প্রায় হাতের মুঠোয়। তবুও কেন আত্মহত্যা করল ছেলেটা আমরা কি কেউ জানতে চাইবো না? মৃত্যুর কারণ জানতে চাইছে, তাঁর ফ্যান ফলোয়ার আত্মীয়-স্বজন পরিবারবর্গ বন্ধু-বান্ধব, এমনকি আমরা যারা প্রতিনিয়ত আমাদের সন্তানের প্রতিভা নিয়ে স্বপ্ন দেখি। সমাজের একশ্রেণীর মানুষ প্রবল ভাবে সোচ্চার হয়েছেন এই রহস্য উদঘাটনের জন্য।কিন্তু যারা কোনদিন কোন কিছু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেননি, তারা ও কি এবারও প্রতিবাদ না করে এড়িয়ে যেতে পারবেন? ভেবে দেখুন, এখানে আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে। তাই সন্তানের ভবিষ্যতের সঙ্গে কখনোই আপোস করেনা কোন পিতা-মাতা।

"এক বিহারী শ পে ভারী" উক্তিটি প্রচলিত হলেও আক্ষরিক অর্থে এর তাৎপর্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা বোধহয় আমরা বেশ বুঝতে পারছি। সুশান্ত সিং রাজপুত এর মৃত্যুতে অভিনয় জগতের রঙ্গিন স্বপ্ন পূরণের প্ল্যাটফর্ম বলিউডের নোংরা ও আসল চেহারা ধীরে ধীরে সামনে আসছে। সমাজের একশ্রেণীর প্রতাপশালী ব্যক্তিগণ মুম্বাই বলিউডকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। যার ফলে উঠছে স্বজনপোষণের মত অভিযোগ। মহিলাদের ক্ষেত্রে এ অভিযোগ আরো বিস্ফোরক। তাদের কথায় একশ্রেণীর পরিচালক ও প্রযোজকদের কাছে শরীরটা বিকিয়ে দিতে পারলেই এক চান্সেই পাওয়া যাবে অভিনয়ের সুযোগ। নামমাত্র অভিনয় করেও পাওয়া যেতে পারে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড এর মত পুরস্কার।আর এসব যদি না করতে পারেন তাহলে দাঁতে দাঁত চেপে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হয়। এর ফলে বিবেক ওবেরয়, ইরফান খান, অভিষেক বচ্চন এমনকি দক্ষিণ ভারতের ভগবান রজনীকান্তের মত তুখোড় অভিনেতারা বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি বলিউডে। ঠিক তেমনি বাজিরাও মাস্তানি, বেফিক্রে, হাফ গার্লফ্রেন্ড, সড়ক_২, আশিকি_২, পানির মতো বহু সিনেমায় সই করালে ও পিছন থেকে ছুরি মেরে সুশান্ত সিং রাজপুত কে বাদ দিয়ে অন্য অভিনেতাদের দিয়ে ছবি করিয়ে নিয়েছেন। তাঁর অনবদ্য অভিনয় ঈর্ষার অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে, তা বলা বাহুল্য। সুদূর গ্রামের এক ছেলের আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন, আর মনমুগ্ধকর অভিনয় সমগ্র সিনেমা প্রেমী মানুষদেরকে প্রভাবিত করেছিল সেটাই মেনে নিতে পারেনি, যুগ যুগ ধরে বলিউড ইন্ডাস্ট্রি কে নিজেদের হাতে ক্ষমতা কায়েম করা কিছু নামজাদা অভিনেতা ও প্রোডাকশন হাউস। তারা ভয় পাচ্ছিলেন এই ভেবে, স্বল্প কয়েকটা সিনেমায় অভিনয় করা ছেলেটা অনেকগুলো পুরস্কার লাভ করে ফেলেছি ইতিমধ্যে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ভবিষ্যতে তাদের পায়ের তলার থেকে শক্ত মাটি টা সরে যেতে পারে। তার জন্য দায়ী যশরাজ প্রোডাকশন, ধর্মা প্রোডাকশন, সহ বহু নামকরা প্রযোজনা সংস্থা, এবং এদের সাথে যোগসূত্রের সাজিশ পাওয়া যাচ্ছে করণ জহর, সলমন খান, মহেশ ভাট সহ বহু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম। বিশেষ করে এই ঘটনায় উঠে আসছে মহেশ ভাট ও অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীর নাম। এই মহেশ ভাটের নামে আগেই অভিযোগ জানিয়ে ছিলেন মৃত অভিনেত্রী জিয়া খানের মা। জিয়া খানের মাকে মহেশ ভাট বলেছিলেন "চুপ থাক না হলে, তোকেও ইনজেকশন দিয়ে শুইয়ে দেব"। এই মহেশ ভাট তিনি নিজের মেয়ে পূজা ভাট কে বিয়ে করার কথা বলেছিলেন প্রকাশ্যে। আর এই ঘটনা  মহেশ ভাটের নোংরা চরিত্রের পরিচয় বহন করে। ইতিমধ্যে ধর্ষকের তালিকায়  উঠে আসছে মহেশ ভাট, সলমান খান, সোহেল খান, আরবাজ খানসহ শত্রুঘ্ন সিনহার নাম। ভাবতে পারছেন বর্তমান সমাজের যারা আইডল তাদের মধ্যে অনেকেই ধর্ষক। দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মহিলাদের সঙ্গে এমন নোংরা ও দুর্ব্যবহার করা মুখোশধারী মানুষ গুলো আর যাই হোক, শিল্প সাহিত্য জগতের হতে পারেনা।

শিল্প কলা নোংরামো করার জায়গা নয়। কিন্তু দীর্ঘকাল যাবৎ এরাই ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে আসছে, আবার বহু নামী  প্রযোজক-পরিচালকের হাত ধরেই এখানে ড্রাগ এর সাপ্লাই হয়, চলে ড্রাগের পার্টি, এদের মত লোকেদের সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়া জগতের যোগ সাজিস রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে এটা বলিউড নাকি গ্যাংস্টারদের আড্ডাখানা? কথায় আছে সূর্যকে যেমন কালো কাপড়ে ঢাকা যায় না, ঠিক তেমনি মিথ্যা আড়াল থাকে না। এক প্রতিভার অপমৃত্যু হয়ে,ঝাঁ-চকচকে রুপোলি পর্দার পিছনের নোংরা ও কালো চেহারাটা বেরিয়ে এসেছে। বলতে গেলে মুখের আড়ালে মুখোশের পর্দা খুলতে শুরু করেছে। বহু দেশ বিরোধী কার্যকলাপের সাথে বলিউড কিন্তু জড়িয়ে আছে তার প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে।সুশান্ত সিং রাজপুত তিনি আত্মহত্যা করে বাঁচিয়ে দিয়ে গেলেন হাজার হাজার প্রতিভার ভবিষ্যতকে।তাঁর মৃত্যুর ফলে ধীরে ধীরে ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে আসছে। সিনেমা থেকে প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটা জ্বলন্ত ইস্যু থাকে। জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে মানুষ বিনোদ নের উপর অনেকটা নির্ভর করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে সিনেমা জীবনের সব নয়। তাই যতদিন মানুষ বেঁচে থাকবে, যতদিন প্রতিভা বেঁচে থাকবে,ততদিন তিনি সবার অন্তরে থেকে যাবেন। 

বলিউডের এই আগুনের ছোঁয়া এবার টালিগঞ্জ। বাংলা সিনেমা জগতের বিখ্যাত অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রের বিস্ফোরক বক্তব্যে টালিগঞ্জের নামিদামি অভিনেতা, পরিচালক সহ প্রযোজকদের চোখের ঘুম উড়ে গেছে। কথাটা কি তিনি নেহাত মিথ্যা বলেছেন। শ্রীলেখা মিত্রের বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়ে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় যে বক্তব্য প্রকাশ্যে বলেছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। একটা পুরুষ অভিনেতা দালাল বা চামচা গিরি করে অভিনয়ের সুযোগ পেতে পারেন, কিন্তু একটা মহিলার পক্ষে শরীর দিয়ে অভিনয়ের সুযোগ নেওয়াটা সবার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করতে বিহার সরকার বলিউডকে ব্যান্ড করে দিয়েছে। তবে বাংলা কেন নয়? এই বাংলায় সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, ঋতুপর্ণ ঘোষ যে ইন্ডাস্ট্রিতে বসে সিনেমা বানিয়েছেন সেগুলো কিন্তু বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, ও উচ্চস্তরের।বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে কৌশিক গাঙ্গুলী, গৌতম ঘোষ, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিব প্রসাদ, নন্দিতা সাহারা  স্বল্প বাজেটে দারুন ছবি করছেন। কিন্তু আমরা যদি বাঙালি হয়ে বাংলা সিনেমা না দেখি তাহলে এই ইন্ড্রাস্ট্রি কিভাবে বড় হবে? মনে রাখতে হবে বাংলা ভাষার সংখ্যা সমগ্র বিশ্বে পঞ্চম, হিন্দির স্থান চতুর্থ। কিন্তু মাতৃভাষা নিরিখে দেখতে গেলে বাংলা ভাষা আগে, পঞ্চম স্থানে হিন্দি। আবার তামিল, তেলেগু ছবি ইন্ডাস্ট্রি গুলোর দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় এরা সংখ্যাতে বাঙ্গালীদের থেকে অনেক কম। তবুও এদের ভাষায় ২৫০ কোটি টাকার বাজেটের ছবি হচ্ছে। কারণ তারা নিজেদের ভাষার সিনেমাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে আসছে যুগের পর যুগ। বাঙ্গালীদের মত আবেগে গা ভাসায় না। কারণ আবেগ দিয়ে কখনো বাস্তব জীবন চলে না। তাই সিদ্ধান্তটা নিজেদেরকেই নিতে হবে। কারণ পকেটের পয়সা খরচ করে বাঙালিরা গ্যাংস্টারদের রাজত্বকে আরো ফাঁপিয়ে ফুলিয়ে তুলবে কিন্তু হিন্দিভাষীরা কখনো পয়সা খরচ করে বাংলা সিনেমা দেখেনা। তাই আমি আপনি বাংলা সিনেমা দেখলে আগামী দিনে এই বাংলাতে বাহুবলির থেকেও বেশি বাজেটের ছবি হবে এমন প্রত্যাশা করা যায়। শুধু তাই নয় বলিউডে বহু অবাঙালিদের কর্মসংস্থান হয়। তাই আগামী দিনে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি বড় রূপ নিলে তাতে লাভ কিন্তু বাঙ্গালীদের।

 

সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর দুই মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর গ্রেফতার হন তার বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী। প্রশ্ন, শুধু রিয়া চক্রবর্তী কেন গ্রেফতার হলো?একটা মহিলার পক্ষে কি এতবড় একটা পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব? এর পেছনে অনেক গোপন রহস্য লুকিয়ে আছে। রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে অনেক বড় বড় খিলাড়ি রাও এতে জড়িত। সত্য একদিন সামনে আসবে। রাঘব-বোয়ালরাও 'আইনের জালে জড়িত হবে এমনটা আস্থা রাখা যায় দেশের আইনের উপরে। কারণ ভারতবর্ষের আইন এখনো বিকিয়ে যায়নি। অপরাধীরা সাজা পাবে। একদিন ভেঙে যাবে বলিউডের উপর কায়েম করা কুক্ষিগত হাত।সব থেকে আশ্চর্যজনক বিষয় হল,পশ্চিমবাংলার বুদ্ধিজীবী, যারা কথায় কথায় মোমবাতির মিছিল নিয়ে দৌড়ায়, তারা সম্পূর্ণ নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। বাংলার মানুষদের উচিত শুধু বলিউড নয়, বাংলার এই সমস্ত বিষাক্ত বুদ্ধিজীবী  কীটদের যত তাড়াতাড়ি বর্জন করবে, ততই বাংলার জনগণের পক্ষে মঙ্গলজনক।

 

বটু কৃষ্ণ হালদার
দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top