সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীন : মু: মাহবুবুর রহমান


প্রকাশিত:
২১ জানুয়ারী ২০২১ ১৮:৫৬

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৪০

 

চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠকের পর চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারী) রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে চীনের উদ্যোগে ত্রিপক্ষীয় ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের একথা জানান।  

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে ভার্চুয়াল এ ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার লুও ঝাওহুই ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব হাও দো সোয়ান। ত্রিপক্ষীয় এ বৈঠকে আশার আলো দেখছে বাংলাদেশ আর বৈঠক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে চীন।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, “এখন অনেক ফ্যাক্টরস আছে, এসব ফ্যাক্টরস মাথায় রেখে, ইতোপূর্বে যেহেতু দুইটা তারিখ দিয়েও আমরা সফল হতে পারিনি, এখন সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে কীভাবে সফল হওয়া যায়, সেই চেষ্টাই থাকবে আমাদের।”

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “দ্বিপক্ষীয় যে চুক্তি আছে, তা যদি অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়, সেখানে ১০ লাখের বেশিমানুষকে নিয়ে যেতে বছরের পর বছর লেগে যাবে। গত তিন বছরে ৯০ হাজার নতুন বাচ্চাও জন্মগ্রহণ করেছে। সুতরাং এই টোটাল নম্বরটা বাড়তে থাকবে, অনেক জটিলতা আসতে থাকবে। প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করার বিকল্প নাই।”

বৈঠকে ছয়টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানান পরারাষ্ট্র সচিব। সিদ্ধান্তগুলো হলো –

১. আসছে ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ-মিয়ানমার-চীন ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
২. এরপরে এই তিন দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
৩. আর এ বছর মার্চ মাস নাগাদ হবে তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক।
৪. এসব বৈঠকের পর আবারও মিয়ানমার প্রতিনিধিদল আসবে বাংলাদেশে, তাদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে। 
৫. এরপর বাংলাদেশের প্রস্তাব অনুযায়ী, গ্রাম বা অঞ্চলভিত্তিক ভাগ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কথা রয়েছে। তবে মিয়ানমার বলছে, যে ৪২ হাজার রোহিঙ্গা তারা চিহ্নিত করেছেন, তাদের দিয়ে প্রত্যাবসান কার্যক্রম শুরু করা হবে। আগামী বৈঠকগুলোতে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
৬. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে- বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোকে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করা হবে।

এ পর্যন্ত ছয় দফায় মোট ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ সরকার, যার মধ্যে মাত্র ৪২ হাজারের ভেরিফিকেশন করেছে মিয়ানমার। এ বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “ভেরিফিকেশেনর যে ইস্যুটা আছে, সেটা যাতে আরও ত্বরান্বিত হয়, সেটা বলেছি। এটা সাইড বাই সাইড চলতে থাকে।”

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গঠনমূলক অংশগ্রহণে চীনের দিক থেকে বক্তব্য এলেও মিয়ানমার এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেনি বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “চীনের আগ্রহ ছিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাধ্যমে প্রত্যাবাসন যেন এগিয়ে যায় এবং আমরা সে বিশ্বাসে তাদের সঙ্গে গিয়েছি।“ চীনের পাশাপাশি জাপান, ভারত, আসিয়ান, জাতিসংঘ যদি এই প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হয় তাহলে তারাও সহযোগিতা করতে পারে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।

এদিকে ঢাকার চীনা দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বার্তায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে চীন। চীনা দূতাবাস জানিয়েছে, বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার লুও ঝাওহুই অংশ নেন। বৈঠকে লুও ঝাওহুই বলেন, ২০১৭ সাল থেকে চীন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কাজ করছে। চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে এ সংকট দ্বিপক্ষীয়ভাবেই সমাধানে জোর দিয়ে আসছে।

এর আগে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি সর্বশেষ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দৃশ্যত কোনো অর্জন নেই। বিশেষ করে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কূটনীতিতে প্রকৃতপক্ষে কোনো অগ্রগতিই হয়নি।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে সরকারি হিসাবেই সাড়ে এগারো লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। মিয়ানমার সরকারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থার অভাবের কারণে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং ২০১৯ সালের আগস্টে দুবার প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরই মাঝে ২০২০ এর ডিসেম্বর থেকে কিছু রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাষানচরে স্থানান্তর শুরু হয়েছে। ভাসানচরে বর্তমানে সাড়ে তিন হাজারের কিছু বেশি রোহিঙ্গা রয়েছেন।

এদিকে মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারী) নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ভাসানচরে নতুন থানা উদ্বোধন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ভাসানচর ও এর আশেপাশের এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার  জন্য নোয়াখালী জেলার দশম এই থানা গঠিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ভাসানচর থেকে হেলিকপ্টারযোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কক্সবাজারে উখিয়ার কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা শিবিরে যান। সেখানে ৩৬টি শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

 

মু: মাহবুবুর রহমান 
নিউজিল্যান্ডের মেসি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top