সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


পশ্চিমবঙ্গে প্রথম বিরোধী দলের মর্যাদা পেল বিজেপি; তবুও অস্বস্তিতে


প্রকাশিত:
১০ জুন ২০২১ ২০:৪৬

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ২২:২৪

 

প্রভাত ফেরী: রাজনৈতিক ইতিহাসে এই প্রথম বিরোধী দলের মর্যাদা পশ্চিমবঙ্গের পেয়েছে বিজেপি। তবুও একাধিক সমস্যায় জর্জরিত রাজ্য বিজেপি। একুশের নির্বাচনে আশানুরূপ ফল না মেলায় ইতোমধ্যেই দলের মধ্যে চাপা অসন্তোষ শুরু হয়েছে। গেরুয়া শিবিরে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে দলের কিছু নেতার পরস্পরবিরোধী বয়ান ও সেই সাথে বিজেপি ছেড়ে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসে ফেরার ইঙ্গিত।

বিধানসভার নির্বাচনের আগেই তৃণমূলে ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক পড়েছিল। একাধিক মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, জেলা ও ব্লকস্তরের নেতা-নেত্রীদের বিজেপিতে যোগ দিতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের পরই চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। বিজেপি ছেড়ে ফের পুরনো দলে ফিরতে চেয়ে পা বাড়িয়ে রেখেছেন সাবেক বিধায়ক সোনালী গুহ, সাবেক বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস, সরলা মুর্মু, বাচ্চু হাঁসদা সহ নেতা-নেত্রীরা।

রাজ্য বিজেপির দুই শীর্ষ নেতা রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের মধ্যে মনোমালিন্য দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী দিলীপ ও মুকুলের মধ্যে সম্পর্ক এখন মোটেও ভাল নয়। এমনকি গত মঙ্গলবার কলকাতার হেস্টিংস’এ দলের কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে আসেন নি মুকুল। বাকী নেতাদের মতো মুকুলকে ঘিরেও একটা জল্পনা তেরি হয়েছে। কারণ কয়েকদিন আগেই কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার স্ত্রী কৃষ্ণা রায়কে দেখতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। তারপর থেকেই জল্পনা ছড়িয়েছে তবে কি পুরনো দলেই ফের ফিরে যেতে চাইছেন মুকুল। যদিও প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে এখনও কোন মন্তব্য করেন নি মুকুল।  

স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি অস্বস্তিতে রাজ্য বিজেপি। এর ওপর রয়েছে দল ভাঙানোর ভয়। নির্বাচনের আগে যেভাবে তৃণমূল ভাঙিয়ে বিজেপিতে টানার একটা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ, সেই ভয় এবার তাড়া করে বেড়াচ্ছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেও। দলের বহু সাংসদ ও বিধায়কই নাকি তৃণমূলের সাথে গোপনে গোপনে যোগাযোগ রাখছেন। শোনা যাচ্ছে তৃণমূল নেত্রীর সবুজ সঙ্কেত পেলেই সেইসব দলবদলুরা ফের পুরনো দলে ফিরে আসতে পারেন। 

নির্বাচনের ঠিক আগেই দল বদল করেছিলেন ডোম জুড়ের বিধায়ক রাজীব। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে ওই কেন্দ্র থেকেই তিনি প্রার্থীও হয়েছিলেন কিন্তু ২০১৬ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটে জেতা রাজীব সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের ৪০ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত হন। এরপরই হঠাৎ করে অন্তরালে চলে যান তিনি। এরই মাঝে নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা সাবেক সেচ ও বনমন্ত্রী রাজীব ব্যনার্জির এক ফেসবুক পোস্ট ঘিরে সোরগোল পড়ে গেছে।

সেখানে তিনি লিখিছেন ‘মানুষের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে কথায় কথায় দিল্লি আর ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালোভাবে নেবে না। আমাদের সকলের উচিত, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ‘কোভিড’ ও ‘ইয়াস’- এই দুই দুর্যোগে বিপর্যস্ত বাংলার মানুষের পাশে থাকা।’ রাজনৈতিক মহল মনে করছে তৃণমূলেই ফিরতে চাইছেন তিনি। 

তবে রাজীব-ই নন, এই ইস্যুতে নাম উঠে আসছে রাজারহাট-গোপালপুরের তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। গত ২০১৯ সালে বিজেপিতে নাম লেখানো সব্যসাচী এবারের নির্বাচনে জিততে পারেন নি। এরপরই মমতা ব্যনার্জির গুণগান করতে শুরু করেছেন তিনি। মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপির বৈঠকে উপস্থিত থেকে সাবেক বিধায়ক সব্যসাচী হিন্দিভাষী নেতাদের দাপটেই সদ্য সমাপ্ত বিধানসভার নির্বাচনে দলের এই ভরাডুবি। তাছাড়া মমতার যোগ্য প্রতিপক্ষ হিসাবে দল কাউকে তৈরি করতে পারে নি।  

এছাড়াও রয়েছে নির্বাচন শেষে রাজ্য জুড়েই ভোট পরবর্তী সহিংসতা, জেলায় জেলায় বহু বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা ঘরছাড়া, অনেকেই এখনও নিজেদের ঘরে ফিরতে পারেন নি। কিন্তু রাজ্য বিজেপির তরফে এই ঘরছাড়াদের পাশে থাকতে বা ঘরে ফেরাতে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে দেখা যায় নি। ফলে অনেক জায়গায় ওই সব বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা প্রাণের ভয়ে বাড়ি ফিরেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। আর এই কারণে কিছু জায়গায় নিচুতলায় বিজেপির সংগঠনের ধাক্কা খেয়েছে।

এরই মধ্যে বুধবার দুপুরের দিকে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে প্রায় ৪০ মিনিট বৈঠক করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। সূত্রে খবর ভোট-পরবর্তী সহিংসতার পাশাপাশি নির্বাচনে ভাল ফল না হওয়ার কারণ, আগামী দিনে দল কিভাবে এগোবে তার রণকৌশল, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা- এসব নিয়েই মূলত আলোচনা হয়।

এর আগে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জয়প্রকাশ নাড্ডার সাথেও সাক্ষাত করেন শুভেন্দু। পরে গণমাধ্যমের সামনে তিনি বলেন ‘বাংলায় ৩৫৬ ধারার অধীনে রাষ্ট্রপতি শাসন লাগু করতে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রয়োজন তার থেকে খারাপ অবস্থা জারি রয়েছে।’ শুভেন্দুর ওই মন্তব্যের পরই ৩৫৬ ধারার বিরুদ্ধে সরব হয়ে ফেসবুক পোস্ট করেন আরেক সাবেক তৃণমূলী রাজীব। 

এদিকে শুভেন্দুর পাশাপাশি দলের তিন সাংসদ অর্জুন সিং, সৌমিত্র খাঁ ও নিশীথ প্রামাণিককেও জরুরী ভিত্তিতে বুধবার দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে। যদিও জরুরী তলবের কারণ এখনও জানা যায় নি।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top