সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১


ভারতে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেই ইডি হেফাজতে


প্রকাশিত:
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:০৪

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৪১

 

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে কথিত দুর্নীতির মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) বুধবার দীর্ঘক্ষণ জেরা করার পর তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ইডি সোরেনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।


এদিকে বুধবার রাত প্রায় সাড়ে ৮টার দিকে রাজ্যপালের সাথে দেখা করতে গিয়ে সরকার পক্ষের বিধায়করা জানান, পরিবহন মন্ত্রী চম্পাই সোরেনকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তারা বেছে নিচ্ছেন।

পদত্যাগী মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনও তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।


প্রথমে হেমন্ত সোরেনের স্ত্রী কল্পনা সোরেনের নাম পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আলোচনায় উঠে এলেও বুধবার সন্ধ্যা থেকে হেমন্ত সোরেনের মন্ত্রিসভার বর্ষীয়ান সদস্য চম্পাই সোরেনও যে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন, সেটাও জানা গেছে।

কয়েক মাস পরের লোকসভা নির্বাচনে যে বড় রাজ্যগুলোতে বিজেপি-বিরোধী হাওয়া কাজ করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তার মধ্যে ঝাড়খণ্ড অন্যতম।

সে জন্যই কি সেখানকার বিজেপি-বিরোধী সরকারকে হেনস্থা করা হচ্ছে? এ প্রশ্ন তুলছে বিরোধী দলগুলো।

ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে বুধবার দুপুর থেকে জেরা করতে শুরু করে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত সংস্থা ইডি।


রাঁচি থেকে বিবিসির সহযোগী সংবাদদাতা রভি প্রকাশ জানান, বুধবার দুপুর ২টার দিকে বেশ কয়েকটি গাড়িতে চেপে ইডি কর্মকর্তারা মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে পৌঁছান।

রাজ্য পুলিশই তাদের ভেতরে নিয়ে যায়, তবে কেন্দ্রীয় দলের সাথে আসা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে ঢুকতে দেয়া হয়নি।

সোরেনকে জেরা চলাকালীনই তার দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন রাঁচির রাস্তায়।

সরকারের তিন শীর্ষ কর্মকর্তা আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার ওপরে নজর রাখছেন, নামানো হয়েছে প্রায় এক হাজার অতিরিক্ত পুলিশ কর্মী।


বেশ কয়েকটি এলাকায় যেন বিক্ষোভ না হতে পারে, সেজন্য ১৪৪ ধারাও জারি করা হয়েছে।


হেমন্ত সোরেনকে এর আগেও একবার জেরা করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তবে তারা আগে একাধিকবার জেরা করার জন্য সমন পাঠালেও সোরেন হাজিরা দেননি।

এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লির বাসভবনেও তল্লাশি চালায় ইডি।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে ওই তল্লাশিতে একটি দামি গাড়ি সহ ৩৬ লাখ ভারতীয় রুপিও পেয়েছে ইডি।

ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচির প্রায় পাঁচ একর জমি কেনাবেচায় দুর্নীতি হয়েছে বলেই কেন্দ্রীয় তদন্ত অ্যাজেন্সির সন্দেহ। ওই জমিটি সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন।

ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা এবং বিজেপি-বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করছে, লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ যখন ঘোষণা হতে চলেছে, তার আগেই ঝাড়খণ্ডের সরকারকে অস্থিতিশীল করে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সংসদ সদস্য মহুয়া মাঝি সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘দেখতেই পাচ্ছেন যে কিভাবে কেন্দ্রীয় সরকার আর বিজেপি চক্রান্ত করছে বিরোধী দলীয় সরকারগুলোকে ফেলে দিয়ে বা একটা অস্থিরতা তৈরি করে, যেন তারা নিজেদের সরকার গড়তে পারে।’

ভোট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের যে বড় চারটি রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী হাওয়া কিছুটা কাজ করতে পারে, তারই অন্যতম হল ঝাড়খণ্ড।


অন্য রাজ্যগুলো হলো মহারাষ্ট্র, বিহার আর পশ্চিমবঙ্গ।

উত্তর ভারতের অন্য রাজ্যগুলোতে বিজেপি যে খুবই ভালো অবস্থায় রয়েছে, সেটাও সাম্প্রতিক রাজ্য নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে।

নির্বাচন বিশ্লেষক সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী বলেন, ‘দক্ষিণ ভারতে বিজেপির পায়ের তলায় শক্ত জমি নেই। উত্তর ভারতের হিন্দি বলয়ের রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থানের সাম্প্রতিক ফলই বলে দিচ্ছে সেখানে বিজেপি ভালো অবস্থানে আছে। উত্তরপ্রদেশ তো আছেই তাদের গড়। আবার রাম মন্দির উদ্বোধন করে দেয়ার পর হিন্দি বলয়ে আরো কিছুটা ভিত শক্ত হয়েছে বিজেপির। তার মানে বড় রাজ্যের মধ্যে বিজেপি-বিরোধীদের অবস্থান শক্ত রয়েছে মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড আর বিহারে। এর মধ্যে বিহারে তো তারা নিতিশ কুমারের সহায়তায় সরকারে চলে এলো। মহারাষ্ট্রেও তারা ক্ষমতায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘তাই বাকি ছিল ঝাড়খণ্ড। সেখানেও যদি একটা অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে হেমন্ত সোরেনের মতো নেতাদের তা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তারা অতটা ভাবতে পারবেন না। সেটাই লাভ হবে বিজেপির।’

ঝাড়খণ্ডে সরকার ফেলা সহজ হবে না
মহারাষ্ট্রে শিবসেনার দল ভাঙ্গিয়ে যেভাবে সরকার ফেলে দিয়েছিল বিজেপি, বা বিহারে কয়েক দিন আগে যেভাবে নিতিশ কুমারকে শিবির বদল করিয়ে কংগ্রেস-লালু প্রসাদ যাদবের হাত ছাড়িয়ে পদ্ম শিবিরে নিয়ে এসেছে তারা, ঝাড়খণ্ডে সরকার ফেলে দেয়া কিন্তু অত সহজ হবে না বলে মনে করেন বিবিসির সহযোগী সংবাদদাতা রভি প্রকাশ।

তার কথায়, ‘মহারাষ্ট্রে শিবসেনার বড় সংখ্যক বিধায়ক ভাঙ্গিয়ে আনতে পেরেছিল বিজেপি। বিহারেও সরকার আর বিরোধী দু’পক্ষের মধ্যে বিধায়ক সংখ্যার পার্থক্য এতটাই কম ছিল যে নিতিশ কুমারকে শিবির বদলাতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু ঝাড়খণ্ডে পরিস্থিতি আলাদা। এখানে বিধানসভায় আসন সংখ্যা ৮১, সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য ৪১টা আসন দরকার কোনো দলের। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নিজেরই বিধায়ক আছেন ২৯ জন। কংগ্রেস আর রাষ্ট্রীয় জনতা দল মিলিয়ে সরকার পক্ষে রয়েছেন ৪৯ জন। অন্যদিকে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ২৬। তাই সরকার ফেলাটা অত সহজ হবে না।’

স্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী করার জল্পনা
সরকার না পড়লেও হেমন্ত সোরেন মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারবেন কি-না, তাকে ইডি গ্রেফতার করে নেবে কি-না, এমন একটা জল্পনা চলছিলই ঝাড়খণ্ডে।

সোরেন গত কয়েক দিন প্রকাশ্যে আসেননি। তারপরেই বিজেপি আওয়াজ তোলে যে হেমন্ত সোরেন নিখোঁজ হয়ে গেছেন।

অবশ্য তিনি মঙ্গলবার রাঁচি ফিরে এসেই নিজের দলের ও সহযোগী দুই দল- কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দলের বিধায়কদের সাথে বৈঠক করেন।

এরই মধ্যে জল্পনা শুরু হয় যে বুধবার জেরার শেষে যদি সোরেন গ্রেফতার হয়ে যান, তাহলে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন?

রাঁচি থেকে বিবিসির সহযোগী সংবাদদাতা রভি প্রকাশ জানান, এটা নিয়ে সব থেকে বেশি আলোচনায় উঠে এসেছিল সোরেনের স্ত্রী কল্পনা সোরেনের নাম।

তিনি বলেন, ‘হঠাৎই স্থানীয় গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। অথচ কল্পনা সোরেন কখনোই রাজনীতির পরিসরে ছিলেন না। দলীয়ভাবে এখনো তাকে কোনো রাজনৈতিক দায়িত্বও দেয়া হয়নি। তার নিজের একটা স্কুল আছে, ব্যবসাও রয়েছে ঝাড়খণ্ডে। কিছু দিন আগে এক বিধায়কের ইস্তফা দেয়ার পর থেকেই আলোচনা শুরু হয়েছিল যে ওই আসন থেকে কি তাহলে কল্পনা সোরেনকে জিতিয়ে আনার জন্যই আসনটি ফাঁকা করা হলো?’

তিনি আরো বলেন, ‘কারণ, যদি মিসেস সোরেনকে মুখ্যমন্ত্রী হতে হয়, তাহলে তাকে কোনো একটা আসন থেকে জিতে বিধানসভার সদস্য হতে হবে।’

তবে শেষ পর্যন্ত দেখা গেল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সর্বোচ্চ নেতা মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়ার জন্য স্ত্রীর বদলে দলেরই প্রবীণ এক নেতার ওপর ভরসা রাখলেন।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top