৩ দিনের রিমান্ডে ইভ্যালি’র চেয়ারম্যান-এমডি
প্রকাশিত:
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:০৪
আপডেট:
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৩:৪৪

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালতে তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরআগে গুলশান থানায় প্রতারণার অভিযোগে করা এক মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশার থানার উপ-পরিদর্শক ওয়াহিদুল ইসলাম। অপরদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিটন তাদের রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আসামিদের বিরুদ্ধে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিন দুপুর ২টার দিকে তাদের আদালতে হাজির করে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে আসামিদের আদালতে তোলা হয়।
এরআগে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো: আসাদুজ্জামান জানান, আদালতের কাছে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ইভ্যালি প্রসঙ্গে আরও বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।
গতকাল (১৬ সেপ্টেম্বর) বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে আরিফ বাকের নামে এক ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন।
ইভ্যালি বিক্রির পরিকল্পনা ছিল রাসেলের
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল। এরপর দায়সহ কোনো প্রতিষ্ঠিত বিদেশি কোম্পানির কাছে ইভ্যালি বিক্রি করে লভ্যাংশ নিতে চেয়েছিলেন তিনি। এ পরিকল্পনা মাফিক বিভিন্ন দেশও ভ্রমণ করেন এমডি রাসেল।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, একটি বিদেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফার এর আলোকে ইভ্যালির ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির কাছে কোম্পানি শেয়ারের অফার দিয়ে প্রলুব্ধ করে দায় চাপানোও ছিল পরিকল্পনার অংশ। এছাড়া তিন বছর পূর্ণ হলে শেয়ার মার্কেটে অন্তর্ভুক্ত হয়ে দায় চাপানোর পরিকল্পনা নেন রাসেল। দায় মেটাতে বিভিন্ন অজুহাতে সময় বাড়ানোর আবেদনও একটি অপকৌশল মাত্র। সর্বশেষ তিনি দায় মেটাতে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনা করেছিলেন।
খন্দকার আল মঈন আরো বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির দেনা দাঁড়ায় ৪০৩ কোটি টাকা; তাদের চলতি সম্পদ ছিল ৬৫ কোটি টাকা, বিভিন্ন পণ্য বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম নেয়া ২১৪ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন গ্রাহক ও কোম্পানির কাছে বকেয়া প্রায় ১৯০ কোটি টাকা। নানা সংস্থার সূত্রে প্রকাশিত বিপুল পরিমাণ দায়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে রাসেল দম্পতি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
প্রতিষ্ঠানটির আরো দায়-দেনা রয়েছে জানিয়ে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, দায়ের সর্বমোট পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার বেশি। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে লোকসানি কোম্পানি, কোনো ব্যবসায়িক লাভ করতে পারেনি। গ্রাহকের অর্থ দিয়েই যাবতীয় ব্যয় ও খরচ নির্বাহ করা হতো। ফলে দেনা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার রাসেল আরো জানান, ইভ্যালি ছাড়াও তার আরও কয়েকটি ব্যবসায়িক প্লাটফর্ম রয়েছে। এর মধ্যে ই-ফুড, ই-খাতা, ই-বাজার ইত্যাদি দিয়েই ইভ্যালির ব্যবসায়িক কাঠামো শুরু হয়েছিল। তার ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি ছিল তৈরিকারক ও গ্রাহক চেইন বা নেটওয়ার্ক থেকে বিপুল অর্থ তুলে নেয়া। তিনি বিশাল অফার, ছাড়ের ছড়াছড়ি আর ক্যাশব্যাকের অফার দিয়ে সাধারণ জনগণকে প্রলুব্ধ করতেন, যাতে দ্রুততম সময়ে ক্রেতা বৃদ্ধি করা যায়।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, ইভ্যালির গ্রাহক সংখ্যা ৪৪ লাখেরও বেশি। তিনি বিভিন্ন লোভনীয় অফারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে এত সংখ্যক গ্রাহক সৃষ্টি করেছেন। ইভ্যালির বিভিন্ন লোভনীয় অফারগুলো হলো- সাইক্লোন অফার বাজার মূল্যের অর্ধেক মূল্যে পণ্য বিক্রি, ক্যাশব্যাক অফার (মূল্যের ৫০-১৫০% ক্যাশব্যাক অফার) আর্থকুয়েক অফার প্রায়োরিটি স্টোর, ক্যাশ অন ডেলিভারি। এছাড়া বিভিন্ন উৎসবেও ছিল জমজমাট অফার; যেমন- বৈশাখী কিংবা ঈদ অফার ইত্যাদি।
বিক্রি বাড়ায় গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত চাহিদাও বাড়তে থাকে। সেক্ষেত্রে মোবাইল, টিভি, ফ্রিজ, এসি, মোটরবাইক, গাড়ি, গৃহস্থালি, প্রসাধনী, প্যাকেজ ট্যুর, হোটেল বুকিং, জুয়েলারী, স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী ও ফার্নিচার পণ্যগুলো বেছে নেওয়া হয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় রাসেল দম্পতি। এসব পণ্যের মূল্য ছাড়ের ফলে গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। এতে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির বিশাল আকারে দায় তৈরি হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ইভ্যালির ব্যবসায়িক অপকৌশল ছিল, নতুন গ্রাহকের ওপর দায় চাপিয়ে পুরোনো গ্রাহক ও সরবরাহকারীর দায়ের আংশিক করে পরিশোধ করা। অর্থাৎ দায় ট্রান্সফারের মাধ্যমে দুরভিসন্ধিমূলক অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছিলেন রাসেল।
তিনি জানান, রাসেল ও তার স্ত্রীর ইভ্যালি প্রতিষ্ঠান চলতো পরিবার নিয়ন্ত্রিত পরিকল্পিত ব্যবসায়িক গঠনতন্ত্রে। একক সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বেচ্ছাচারিতা দেখিয়েছেন তারা। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি ছিল। ফলে ক্রমান্বয়ে প্রতিষ্ঠানের দায় বাড়তে বাড়তে বর্তমানে প্রায় অচলাবস্থায় উপনীত হয়েছে।
বিষয়: ই-কমার্স
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: