সিডনী রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

চিয়ার্স : আল মামুন মাহবুব আলম


প্রকাশিত:
৫ নভেম্বর ২০২০ ২১:১৯

আপডেট:
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০২:৫৫

 

জোব্বার আমাকে পুরো টাকাই দিলো। ব্যাটা জানে,কথা আর কাজে আমার কোন ফারাক নাই।

নটুর মুণ্ডু‚ এখন ধড় থেকে পুরোই আলাদা। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটে এসে সফেদ পাঞ্জাবি-পাজামা তো ভিজলোই,এ তো আর ঠেকানোর মত সহজ কোন কাজ-কারবার নয়। অথচ আমার পিরানের সবকিছু  আবার সাদা ধবধবে হওয়া চাই-ই চাই। কামকাজে একটা পবিত্র পবিত্র ভাব থাকে।

 এর মধ্যে আবার বাঁ চোখের ভিতরে কি করে যেন একটা কিছু ঢুকেও গেলো! দু-এক ফোঁটা রক্তই হবে মনে হয়। ভ্রূ ল্যাপ্টানো ভেজা আর গরম গরম ঠেকছে। তাজা রক্ত গরমই হয়। চোখ অতি সংবেদনশীল অঙ্গ। মস্তিষ্কেরে সাথে ডাইরেক্ট যোগাযোগ। কেউ কেউ বলেন, এটি মস্তিষ্কেরই অ্ংশ বিশেষ। আমার অতসব ভাবাভাবির কি এমন দরকার? আমার দরকার টাকা,যা জোব্বার পুরাই এডভান্স করে গেছে। অন্যদের মত ভুজুংভাজুং করেনি। কেউ কেউ কাজ করায়,আর পেমেন্টের সময় আবার খচর-মচর শুরু করে। জোব্বারের বেলা আর খেলার ধরণ-ধারণই আলাদা। চিন্তার আগেই কাজে, আর কাজের আগেই কিস্তিমাৎ!

কেউ নাকি প্রকৃতিস্থ অবস্থায় মানুষ খুন করতে পারে না। কই যে পায় এসব কথাবার্তা মানুষ আল্লা মালুম। নন-প্রফেশনালরা এমন ভাবে, আমার ধারণা এমনই। প্রফেশনালিজম হলো একটা আর্ট! এর স্কিলনেস ডেভেলপ করা তো আর কোন চাট্টিকানি কথা নয়। আর তাই এসব কাজ কোন যদু-মদু-কদুর দ্বারা অসম্ভব!

 

 কাজটা সারলাম, ঘরে আসলাম, গোসল দিলাম। মাংস রান্না করলাম। তৃপ্তির ঢেকুর উঠে এলো খাবার পরে। ভাবলাম চস্পার সাথে আজ এক গেম মেরে দিয়ে এসে ঘুমাই। শালির যা গতর! মাগি ও পাড়ার সোলেমানের সাথে আজ খেলায় মেতেছে। গঞ্জেই যাবো। ওখানে কি আর গিলিগিলির অভাব? শালির চম্পা, ঢলানি মাগি, আসিস এবার!

 

শোয়ার আগে আকাশ দেখার একটু সখ জাগলো। চোখ জানালায় পড়তেই দেখি, নটু!

নটু হাসি হাসি মুখে বলে উঠলো, "সব টাকা হাতে আসছে না ? চ' মাল টেনে আসি।"

 

চোখ কচলে নিলাম।  গায়ে চিমটি নয়,একেবারে খামচে চামড়া তুলে আনলাম । খামচা তো নয়, যেন নখ ঢুকিয়ে দিলাম মাংসের ফাঁক গলে একেবারে হাড়ে। হাড় উপড়ে চোখের সামনে মেলে ধরলে যদি ঘোর লাগাটা কাটে! কিন্তু এ আমি কি দেখছি? নটুর 'মষ্যাকালা' সমস্ত শরীরে হঠাৎ লাল রঙের আভা! আর ক্রমশঃ লালে লাল হয়ে আরো গভীর হতে থাকলো, তবে খুব ধীরে ধীরে! এরপর আবার তা বাদামি হলো! শরীরের আকার বদলে একটা চিকনা কাটিং ধড় হল। রঙ ততক্ষণে বদলে হলো সবুজ। মেটামরফসিস নাকি!

 

শেষমেশ এসে ফিনফিনে এক বাঁশপাতারি সাপ হলো। চিরিক চিরিক করে জিব বের করলো! মাথাটা জানালা দিয়ে গলিয়ে ঘরের ভিতরে শরীর টেনে নিতে থাকল সাপটা। ক্রমশ প্যাঁচানো শরীর ইচ্ছে মতন ভয় ধরানো এক খেলা দেখানোর ঢঙে আরো পেঁচিয়ে ঘরে ঢুকতে থাকলো । জানালা থেকে ঝপ করে লাফিয়ে নামল মেঝেতে । শরীর এঁকেবেঁকে আমার দিকে এগোতে থাকলো । মুখ থেকে শব্দ আসছে,স্পষ্ট, "হিস হিস হিস!"

 দু’ বার পরপর জিব বের করলো। তারপরে আবার,আরো বার কতক । সাপের নাকি শ্রবণেন্দ্রিয় নাই । জিব দিয়ে সে কাজটি সারে ও। ওর জিব নীল। আহ! নটু কি এখন লোকান্তরে গিয়েই বিষধর সাপ হয়ে গেলো? এতো দেখছি আমার দিকেই এগোয়। আ-মর জ্বালা ! বিছানার পাশের টেবিলে এক বোতল বিলিতি জিনিষ,আর এক কার্টুন অরিজিনাল বিলিতি বেনসন রাখা। বিলিতি বেনসন টানার খুব সখ ছিল বহু দিনের। আল্লার রহমত, জোব্বারের তা পূরণ করার সুযোগ মিলায়ে দিল ! আল্লা কাকে যে কি করে কখন রহমত দেয়,তা বলে কার সাধ্যি আছে? আচ্ছা, বাঁশপাতারি কি অই বেনসন টানারও সুযোগ নিতে চায়? শ্লা! এতো দেখি এবার পালংকে উঠে আসে পায়া বেয়ে বেয়ে।

ও কি নটু? নাকি সাপ? নটু কি সাপ হয়ে গেল! ওর শরীর থেকে দুটো হাত বেরিয়ে এলো। পাঁচটা করে আংগুল প্রতিটি হাতে। আমার মাথার কাছে রাখা ডাবল ব্ল্যাক লেবেলের ছিপি খুললো। দুটো গেলাশে জিনিষ ঢাললো। পানির লেবেলও টায়ে টায়ে সই। এবার একটু বরফের কুচি দিলো ওতে। ফিশ ফ্রাই, চানাচুর চিবোতে চিবোতে বললো, "তোকে  যা দিয়েছে,আমাকে তার ডাবল দিয়েছে।

 ঃতুই মরিস নি বলছিস!

ঃ না। ধড় থেকে মুন্ড‚ আলাদা হলেই কি মানুষ মরে?

 

”তুই আমার সাথে মাল খাবি? মাংস-মাছ ফ্রাইও খাবি?” গলায় আর অত জোর নাই, তা এখন আমার কাছে  স্পষ্ট। কেমন যেন ভেজা কম্বলের মতো চুপসানো লাগছে নিজেকে। মাঘের শীতে মরা ঘন কুয়াশার মত ধোঁয়াটে। অথচ একি! পিলে চমকানি শিহরনের এক খেলা খেলে যাচ্ছে সমস্ত শরীর বেয়ে। কলজেটা কেঁপে উঠলো।

 

"নীল তোর প্রিয় রঙের একটি। তুই এট্টু পরেই বিছানায় গাঢ় নীল হয়ে পড়ে থাকবি। জ্যান্ত নয়, মৃৎ।  প্রাণহীন দেহ নিয়ে,” নটু হিসহিসিয়ে উঠলো,"জোব্বারের রিসোর্টের টয়লেটে থাকবে তোর ধড়। আর মাথা থাকবে চল্লিশ মাইল দূরে বিলের কচুরি পানার নীচে । পচে গলে যাওয়া দুর্গন্ধে মানুষ অসহনীয় অবস্থায় নেহায়েত কিছু একটা সন্দেহ করবে। থানায় কেউ সহজে যায় ? জোব্বাররা যায়! মোখলেসও যায়। খবর কেউ না কেউ দিবে। লাশপচা গন্ধ। অসহ্য! খবর পেয়ে থানা পুলিশ শুরু হবে। পুলিশ মুণ্ডু পাবে। ধড়ের সাথে মিলিয়ে বলতে পারবে, এটা হলো গেন্দা ফকিরের বজ্জাত ব্যাটা, চম্পার থুথু ছেটানো মরদ, চান্দু ফকির!”

আমার মাথা পরিস্কার ঝকঝকে হয়ে আসছে। পোস্টমর্টেমে গতানুগতিক রিপোর্ট পত্রিকায় আসবে। নটুর বউকে নিয়ে জোব্বার খেলে দেশের বাইরে বেচে দেবে। এটিই ওর মূল পেশা। এ সবাই জানে, সবাই বোঝে। আর আমি বুঝলাম না!

নটু বললো “খামোখা,সময় নষ্ট করে কি লাভ আর? নে,আয়,চিয়ার্স৷”

দুটো গ্লাশে ঠোকঠুকি হলো! চিয়ার্স শব্দ সমস্ত ঘরময় শোনা যেতে থাকলো। সাথে হা হা হাসি আর হিস হিস শব্দ। আমার শরীর থেকে নীলচে আভা ঘরময় ছড়াচ্ছে।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top