একজন রুহির বিয়ে : অমিতা মজুমদার


প্রকাশিত:
২৪ নভেম্বর ২০২০ ২১:১২

আপডেট:
২৪ নভেম্বর ২০২০ ২১:২৫

 

আজ রুহির বিয়ে।খুব জাঁকজমকের সাথেই বিয়ে হচ্ছে। হবেই বা না কেন ? রুহি যেমন দেখতে সুন্দরী তায় সিকদার বাড়ির একমাত্র মেয়ে। এ পরিবারে ছেলে সদস্য অনেক, কিন্তু রুহি একমাত্র মেয়ে। সেই রুহির অনার্স শেষ হতেই বিয়ে ঠিক হয়। রুহিও আপত্তি করেনি। কারণ পড়াশুনা, ক্যারিয়ার এসব নিয়ে রুহি কখনো ভাবেনি বা তাকে ভাবতে হয়নি। না চাইতেই সবকিছু পেয়ে এসেছে সে। তাই যখন ছোট চাচীর বোনের দেবর হাসিবের সাথে বিয়ে পাকা হয় সে অমত করেনি। ছেলে বিদেশে থাকে, ব্যবসা করে,দেখতে সুন্দর। কথাবার্তা আগেই হয়, রুহির সাথেও বেশ কয়েকবার ভিডিওতে কথা হয়েছে। তাই সে-রকম অপরিচিতও নয়।


ছেলে বিদেশ থেকে প্রচুর উপহার সামগ্রী এনেছে। সবাইকে সে দুহাত ভরে দিচ্ছে এটা সেটা। টাকা দিচ্ছে যেখানে একশত টাকা লাগে সেখানে পাঁচশত টাকার নোট বের করে দেয়। তাই তার আগে পিছে লোকের অভাব হয় না। বেশ মহা ধুমধামে বিয়ে হয়ে যায়। সকলে মেয়ে-জামাইকে আশীর্বাদ করে প্রাণখুলে। জামাইয়ের সাথে পুরুষ সদস্যরা আলিঙ্গন করে, করমর্দন করে রীতি অনুযায়ী।


পাশাপাশি গ্রামে বাড়ি হওয়ায় বিকেলে রুহি শ্বশুরবাড়ি যায়। সেখানেও বেশ হৈচৈ করে রাত এগারোটা বেজে যায়। প্রবাসীর বাড়ি তাই গ্রামে হলেও নাগরিক সুযোগ সুবিধা সবই সেখানে আছে। একসময় রুহিকে বাসর ঘরে পাঠানো হয়। হাসিব ঘরে আসে। এসে রুহিকে খুব সুন্দর একটা হীরের আংটি দেয়। তারপর দু-চারটে কথা বলে ওরা হারিয়ে যায় নিজেদের মধ্যে।


পরদিন রুহির বৌভাতের অনুষ্ঠান হবে। একটু বড় করেই আয়োজন করেছে হাসিব। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা তার প্রবাস জীবনের বন্ধু বান্ধব, স্কুল কলেজের সহপাঠী এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ বিশাল আয়োজন। নতুন শ্বশুরবাড়ি বনেদি পরিবার বলে তাদের এলাকার সব গণ্যমান্য লোক সহ তাদের আত্মীয়স্বজনদের বলছে। কোথায় তাদের আদরের মেয়েকে দিলো সেটাও সবাই দেখুক।


এছাড়া হাসিবের একটা সুপ্ত ইচ্ছা আছে যা এখনো প্রকাশ করেনি। আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার। তাই ঢাকা থেকে কিছু উপরমহলের লোকজনকেও ডেকেছে। সব মিলিয়ে এলাহি কারবার বলা যায়।


সন্ধ্যা নাগাদ প্রায় সবার খাওয়া দাওয়া শেষে অতিথিরাও বিদায় নিয়েছে। এমন সময় হাসিবের কেমন শরীরটা খারাপ লাগে। দু-একটা হাঁচি দেয়, তারপর একটু সর্দি কাশি মতো। জ্বর-জ্বরও লাগে। শরীরটা কেমন ম্যাজম্যাজ করে। নতুন বউ রুহিকে শাশুড়ি বলে ছেলেকে একটু সেবা যত্ন করতে।

শেষরাতে হাসিবের কেমন শ্বাস কষ্ট হয়, রুহি বাইরে এসে শাশুড়িকে জানায়। শাশুড়ি সর্ষের তেল গরম করে এনে রুহিকে বলে বুকে মালিশ করতে।

ভোর হতে না হতে হাসিবের শরীর কেমন শান্ত হয়ে যায়। একসময় রুহি দেখে হাসিবের শরীর বরফের মতো ঠান্ডা।

একে একে রুহি, আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সকলেই হাসিবের ঋণ শোধ করতে শুরু করলো। কেউ উপহারের, কেউ টাকার, কেউ বিদেশী সিগারেটের, কেউবা সেই মহাভোজের। গগনবিদারী কান্নার আওয়াজে ভারী হয়ে ওঠে রুহি আর হাসিবের গ্রামসহ চারপাশের গ্রামগুলোর বাতাস। সে হাহাকার ছড়িয়ে যায় দূর-দূরান্ত থেকে আগত অতিথি অভ্যাগতের অন্দরমহলেও। 

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে

সমাপ্ত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top