সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১

ভুবন : পরমার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়


প্রকাশিত:
২৮ নভেম্বর ২০২০ ২২:০৯

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৫৭

 

নদীটির একদম পাড়ে,
বাসা তার, ত্রিভুবন পাঁড়ে।
ছোট তার তরীখানি করে,
সারাদিন পারাপার করে,
তরি তরকারি নিয়ে ভরে,
হাটুরে মানুষ চলে ঘরে,
হাট বসে শনি বুধবারে,
আর বাকি পাঁচদিন ধরে,
আমাদের নবীগঞ্জ থেকে,
পাট আসে নবীন সদরে।
নদীটির একদম পাড়ে,
বাস করে ত্রিভুবন পাঁড়ে।

ত্রিভুবনকে যেদিন প্রথম দেখি, সেদিনটার কথা স্পষ্ট মনে আছে, নবীন সদরে আমাদের সাহাপুর হাই স্কুলের সামনের মাঠের বড় তালগাছটায় সেদিন বাজ পড়েছিল, সকাল থেকেই ওদিন বৃষ্টি পড়ছিল আর টিফিনের পরে ঐ কান্ড। অতবড় তালগাছটাকে দেখে মনে হচ্ছিল বিরাট একটা কাকতাড়ুয়া বুঝি পুরো সদরটাকেই পাহারা দিচ্ছে। ছুটির পরে বাড়ি ফিরছি, বৃষ্টি ততক্ষণে ধরে গেছে, খেয়া পার হয়ে নবীগঞ্জে আমার বাড়ি। দেখলাম গোপালদাদুর সঙ্গে একটা ছেলে আমাদেরই বয়সী বা আর একটু বড় হবে, এক ঝাঁক কোঁকড়া কোঁকড়া চুল আর বড় বড় বিষণ্ণ চোখে যেন অপার বিস্ময় নিয়ে আমাকেই দেখছে। ঠিক আমাকেই নয়, আমার স্কুল ইউনিফর্ম, স্কুল ব্যাগের দিকেই যেন নজর। চোখে চোখ পড়তেই ফিক করে হেসে ফেললো আর আলগোছে আমাদের বন্ধুত্বটা শুরু হয়ে গেল। গোপালদাদু দাঁড় টানতে টানতেই বলল, বিশু এই হল আমার নাতি ত্রিভুবন পাঁড়ে, পাটনা শহরে বাড়ি, তবে থাকত কলকাতায়, ওর বাবা একটা কাজে বাইরে গেছে তাই এখন থেকে এখানেই থাকবে, আমার তো বয়স হয়েছে, খেয়া পারাপারের কাজে আমায় সাহায্য করবে। আমি গোপাল দাদুকে জিগ্গ্যেস করলাম ও স্কুলে যাবে না ? আমার মনে হল ও যেন স্কুলে যেতে চায়, সেই জন্যই আমার স্কুল ইউনিফর্ম আর ব্যাগের দিকে তাকিয়ে আছে। গোপালদাদু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, গেলে যাবে, আমাদের ঘরে কি আর পড়াশুনো হয়! জানতাম গোপালদাদুর মেয়ে তিলু পিসীর বিয়ে হয়েছিল পাটনা শহরের এক ট্রাক ড্রাইভারের সঙ্গে, তখন আমরা জন্মাইনি, তবে এই বিয়েটা ছোট্ট এই সদরে জবর খবর ছিল, ত্রিভুবনের বাবার বাড়ি পাটনা শহরে হলেও, থাকতো বিহারের অনেক অধিবাসীর মতো কলকাতাতেই, ঠিকঠাক বলতে গেলে ব্যারাকপুরে আর ট্রাক নিয়ে আসতো নবীন সদরে গুদাম থেকে পাট নিয়ে যেতে, নবীগঞ্জ পাট চাষের জন্য বিখ্যাত আর সেই পাট খেয়া পার হয়ে চলে আসে নবীন সদরের মহাজনদের গুদামে, সেখান থেকে চালান হয় বিভিন্ন শহরে। নবীন সদরে খুব বড় হাট বসে বুধ আর শনিবারে, সেখানেই কোনো একদিন তিলু পিসীর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় ট্রাক ড্রাইভার লছমন পাঁড়ের, তারপর থেকে পাঁড়েজীর ঘনঘন নবীন সদরে আগমন, তিলু পিসীর সঙ্গে প্রণয় এবং বিবাহ। এইসব ক্ষেত্রে সাধারণত বিয়েটা পালিয়ে গিয়ে হয় কিন্তু গোপালদাদু তার আদরের একমাত্র মেয়ের পছন্দ মেনে নিয়েছিলেন, তিলুপিসীর মা, তিলুপিসী হওয়ার পর আর সন্তান সম্ভবা হননি, কারণ কিছু একটা অসুখে তার আর মা হওয়া সম্ভব হয়নি। একমাত্র মেয়েকে দাদু একটু বেশিই ভালোবাসতেন এবং সেইসময় এই নবীন সদরে বেশ একটা তোলপাড় তুলে অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে তিলু পিসীর বিয়ে হয়েছিল একজন ভিন রাজ্যের ভিন্ন ভাষার মানুষের সঙ্গে। গোপালদাদুদের তখন সমাজে কিছু গঞ্জনাও সহ্য করতে হয়েছিল, এত খবর পেয়েছিলাম আমাদের স্কুলের ডেপোঁ ছেলে রাজেনের থেকে, ওকে রাজেনদাই বলা উচিত, বয়সে আমাদের থেকে সাত আট বছরের বড়, ফেল করে করে শেষে এখন আমাদের সঙ্গে ক্লাস টেনে পড়ে। রাজেনকে নবীন সদরের বিবিসি বলাই ভালো, সব খবর ওর নখ দর্পণে। রাজেনই পরের দিন স্কুলে খবর নিয়ে এল, তিলুপিসী ছেলেকে নিয়ে ফিরে এসেছে, লছমন পাঁড়েকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, সে এখন জেল খাটছে। বুঝলাম এইজন্যই গোপালদাদু বলেছিল ত্রিভুবনের বাবা কোনো একটা কাজে বাইরে গেছে। চোখের সামনে ত্রিভুবনের বিষণ্ণ চোখদুটো ভেসে উঠলো।

 

ত্রিভুবন আস্তে আস্তে তার নামের, ‘ত্রি’ খসিয়ে ভুবন হয়ে গেল আর  কবে যেন আমার ভুবন ভরে ওর বিষণ্ণ চোখ দুটি নিয়ে জড়িয়ে ধরল। সকাল বিকেল স্কুল যাওয়া আসার পথে ভুবনের নৌকো করে যাতায়াত করি, নদীতে আরো দুটো নৌকো ছিল, কিন্তু ভুবন আসার পর থেকে ওর নৌকো ছাড়া উঠতাম না, আর ও ঠিক আমার স্কুল যাতায়াতের সময়ে অপেক্ষা করত। নৌকোয় আরও লোকজন থাকত, নবীন সদর বেশ জমজমাট জায়গা, হাটের দিনে ভিড় বেশি হত, অন্যান্য দিনেও পাটের সময়ে পাটের গাঁটরি নিয়ে চাষীরা বা অন্য সময়ে অন্যান্য জিনিস নিয়েও যাত্রী ভালই হত।

কথা প্রায় হতই না, শুধু পাশাপাশি বসে খেয়াটুকু পার। আমাদের যত গল্প হত রবিবার, সেদিন খেয়াতে লোকজন কম থাকত, গোপালদাদু একাই সামলে নিত।  কখনও আমি চলে আসতাম নবীন সদরে কখনও ও চলে যেত নবীগঞ্জে। ভুবন কিন্তু কোনওদিন আমাদের বাড়িতে যেত না, যেতে বললেও এড়িয়ে যেত, বুঝতাম ওর বাবার প্রসঙ্গ যদি ওঠে সেই ভয় পায়। আমরা নদীর ধার ধরে হেঁটে দূরে কোথাও যেখানে পারে লোকজন নেই, সেখানে গিয়ে বসে থাকতাম। ভুবনের বাবা বিহারী হলেও মার সৌজন্যে আর কলকাতায় বড় হওয়ার সুবাদে পরিষ্কার বাংলা বলতে পারত, তবে ও কথাই বলত খুব কম। যা বলার আমিই বলতাম, অনেকসময় কোনও কথাই হত না, শুধু ঘন্টার পর ঘন্টা পাশাপাশি বসে নদী আর দূর আকাশের দিকে চেয়ে থাকতাম। ভুবনকে বলেছিলাম এখানে স্কুলে ভর্তি হয়ে যেতে, ও বলল দাদুর বয়স হয়েছে একা সামলাতে পারে না, আমি স্কুলে গেলে কীকরে চলবে! হয়তো বাবার প্রসঙ্গ উঠবে, সেটাও স্কুলে না যাবার কারণ বলে আমার মনে হল। কানাঘুষোয় শুনতাম ভুবনের বাবা খুন করে জেলে গেছে, কিন্তু আমি কোনওদিন ওর বাবা কেন জেল খাটছে জানতে চাইনি, আর সেইজন্যই ভুবন বোধহয় আমাকে বন্ধু মনে করত।

 

সেবার কার্তিক মাসে ভুবনের এক কাকা এসে ভুবনকে ছটপুজো উপলক্ষ্যে পাটনা নিয়ে গেল। যাওয়ার সময় ভুবন বলে গেল এক সপ্তাহ বাদেই ফিরে আসব রে বিশু, তোর জন্য ছট পুজোর ঠেকুয়া নিয়ে আসবো। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল, এক সপ্তাহ ভুবনের সঙ্গে দেখা হবে না, ভাবাই যায় না। এক সপ্তাহ নয়, ভুবন ফিরলো দশদিন বাদে, সেদিনটা ছিল রবিবার, বিকেলের দিকে ভুবন এসে আমাকে বাড়ির বাইরে থেকে ডাকল। দুজনে নদীর পার ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটা ফাঁকা জায়গায় গিয়ে বসলাম। ভুবন একটা ঠোঙা করে কয়েকটা ঠেকুয়া এনেছিল, আমাকে দিয়ে বলল খা, মুখে দিয়ে দেখলাম দারুণ স্বাদ। সেটা বলব বলে ভুবনের দিকে মুখ তুলে দেখি, ওর দুচোখ জলে টলমল করছে। আমি তো অবাক, ভুবনকে আগে কখনও কাঁদতে দেখিনি। ওর পিঠে হাত রাখলাম, কিরে পাটনা থেকে ফিরে মন খারাপ ? ও বললো, না তোর জন্য মন খারাপ। বিশু আমার আর এখানে থাকা হবে না, আমি পাটনা চলে যাচ্ছি। সেরকমই ঠিক  হয়েছে। কাকারা আমাকে এখানে রাখতে চায় না, এখানে আমার পড়াশুনো হবে না আর আমি এখানে থাকলে ওনাদের সম্মান থাকছে না। আমি আমার জিনিসপত্র নিতে এসেছি, কালকেই ছোট কাকার সঙ্গে পাটনা রওনা দিতে হবে। মা এখানেই থাকবে, আমি আসবো রে মাঝে মাঝে, তখন দেখা হবে। আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা সরলো না, বুঝলাম আমাদের দুজনের চোখই জলে ভেসে যাচ্ছে, কেউ কারো দিকে তাকাতে পারছি না। ভুবনই নীরবতা ভেঙ্গে বললো, বিশু আমার বাবা খুন করেনি। আমি বললাম চুপ কর, ওসব শুনতে চাই না। ও বলল, সেটা জানি, কিন্তু আমি বলতে চাই।

আজ না বললে, আর কোনওদিন বলা হবে না।

 

বিশু বলতে থাকল, “ব্যারাকপুরে আমরা যে ভাড়া বাড়িতে থাকতাম, সেটা হঠাৎ বিক্রী হয়ে গেলে আমরা বাধ্য হয়ে একটা অন্য বাড়ির একতলায় দুটো ঘর নিয়ে উঠে যাই। আমার বাবা ট্রাক ড্রাইভার, প্রায়ই রাতে বাড়ি থাকে না। বাড়িওলার ছেলে তাপসের নজর পড়ল আমার মায়ের ওপরে। বাবা বাড়িতে না থাকলেই শুরু হত নানা ছুতোয় আমাদের ঘরে আসা। কখনও বৌদি এক কাপ চা খাওয়ান, কখনও সিগারেট ধরাব দেশলাইটা দিন, এলে আর উঠতে চাইত না। মা আমাকে ডেকে নিত, বলতো এখানে বসে পড়ো। তাপস নির্লজ্জর মতন  হাসত আর বলত বৌদি বড়দের মধ্যে ছোটদের থাকা ভালো নয়। আমি অত ছোট ছিলাম না, ক্লাস নাইনে পড়ি, সবই বুঝতাম। বাবা বললেন কয়েকদিন সাবধানে থাকো আমি ঘর দেখছি, পেলেই উঠে যাব। বাড়িওলার সঙ্গেও কথা বললেন, সে তো এই মারে কি সেই মারে। বলল তোমার বউএর চরিত্র খারাপ, আমার ভালো ছেলেটাকে ফোঁসলাচ্ছে। এইসব ট্রাক ড্রাইভার ট্রাইভারকে এইজন্য বাড়ি ভাড়া দিতে নেই, না পোষালে কেটে পড়ো। একজন ট্রাক ড্রাইভারের পক্ষে সত্যিই ভদ্র পরিবেশে ঘর পাওয়া সোজা নয়। মানুষের ধারণা ট্রাক ড্রাইভার মানেই মাতাল আর গুন্ডা প্রকৃতির, যদিও আমি বাবাকে কোনওদিন এক ফোঁটা মদ খেতে দেখিনি।

 

সেদিন সন্ধ্যাবেলায় গেছি টিউশন পড়তে পাশের পাড়ায় অঙ্ক স্যারের বাড়ি, খানিকক্ষণ বাদে আকাশ কালো করে মেঘ ডাকতে লাগল, স্যার বললেন গতিক সুবিধার মনে হচ্ছে না, সবাই বাড়ি চলে যা। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে ঘরে ঢুকতে গিয়েই শুনতে পেলাম মায়ের চাপা গোঙানি, ঘরে ঢুকে দেখি তাপস জানোয়ারটা মায়ের মুখ চেপে ধরেছে, শাড়িটা খুলে মেঝেতে লোটাচ্ছে। আমি ঝাঁপিয়ে পড়ে জানোয়ারটাকে কিল চড় মারতে থাকলাম, কিন্তু ও একটা জোয়ান ছেলে, এক ঝটকায় আমাকে ফেলে দিয়ে গলা চেপে ধরল, আমার দম বন্ধ হবার যোগাড়, তারপরে শুনলাম ফটাস করে একটা আওয়াজ, জানোয়ারটার হাত আমার গলা থেকে আলগা হয়ে গেল আর কাত হয়ে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল, একদম নড়ল না। দেখলাম মা দরজার খিলটা হাতে করে দাঁড়িয়ে আছে, ঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। গরম রক্তের ফোঁটা আমার চোখে মুখেও ছিটকে লেগেছে। আমরা মা, ছেলে নির্বাক বসে রইলাম একটা লাশকে সামনে রেখে। সেদিন বাবার ট্রাক খারাপ হয়ে যাওয়ায় গ্যারেজে সারাতে দিয়ে খানিক বাদে বাড়ি ফিরে এলেন। সব দেখে শুনে বললেন খুনটা আমি করেছি, খিলের বাড়িটা আমি মেরেছি, তোমরা নয়। মা রাজি হচ্ছিলেন না, বাবা বললেন ছেলে নিয়ে পাটনা চলে যাও, কোনও কথা আর বলবে না। বাবা থানায় গিয়ে সারেন্ডার করলেন। বাড়িওলা সেই রাতে আমাদের বার করে দিলেন, আমার বাবা যার ট্রাক চালাতেন সেই বৃদ্ধ তেওয়ারি দাদু আমাদের আশ্রয় দিলেন। তারপর আমার মেজ কাকা এসে আমাদের পাটনা নিয়ে যান, ঠাকুমার গঞ্জনায় মা ওখানে টিঁকতে পারলেন না, ঠাকুমা বলতেন এই বঙ্গালি ডাইনিটার জন্য আমার ছেলে জেলে গেছে, তাও তো ওনারা আসল ঘটনা জানেন না। আমরা বাধ্য হয়ে এখানে চলে আসি। বাবা এতদিন জেলে ছিলেন কিন্তু সবে দিন তিনেক আগে আমরা রায় জানতে পেরেছি, বাবার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে। কাকারা তাই আর আমাকে এখানে থাকতে দিতে রাজি নন। মা কাকাদের কথায় মত দিয়েছে, কিন্তু আমি জানি মা আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না। আমার তিন কাকাই বাবার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন, পাটনা থেকে কলকাতা দৌড়েছেন বাবার কেসের তদ্বির করতে, কিন্তু বাঁচাতে পারেননি। বাবা কোর্টে বলেছিলেন স্ত্রীর সম্মান বাঁচাতে খুন করেছেন। বিপক্ষের উকিল বলেছেন আমার মা চরিত্রহীন, সেই তাপসকে ফুঁসলেছিল, ওরা অনেক সাক্ষী যোগাড় করেছিল, বাবার ফাঁসি হয়নি তাই অনেক। লোকে যখন আমার বাবাকে খুনী বলে, তখন আমার বড়ো কষ্ট হয়, বাবা আমাকে আর মাকে বাঁচাতে সব দায় মাথা পেতে নিয়েছেন। বিশু এখন তোকে সব বলতে পেরে বেশ হালকা লাগছে, কি জানি আর দেখা হবে কি না, আমার কথা মনে রাখিস।” আমি বললাম, কেন দেখা হবে না, তুই তো মাঝে মাঝে আসবি, তখন দেখা হবে, ওকে খেয়াঘাট অবধি এগিয়ে দিলাম,  হাত ধরাধরি করে পথটুকু ধীরে ধীরে নীরবে পাড়ি দিলাম।

 

পরের দিন সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য একটু তাড়াতাড়ি বেরোলাম, একবার ভুবনের সঙ্গে দেখা করে যাব, দুপুরেই ও কাকার সঙ্গে পাটনা যাওয়ার জন্য রওনা দেবে। গোপালদাদুর বাড়ি নবীন সদরের খেয়াঘাট থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত। খেয়াঘাটে নেমে দেখি ভুবনদের বাড়ির সামনে লোক ভেঙ্গে পড়েছে। কী একটা অজানা আশঙ্কায় বুক কেঁপে উঠল, এত লোক কেন এখানে! দেখি ভিড় ঠেলে রাজেন এগিয়ে এসে আমার কাঁধে হাত রাখল, বিশু ওদিকে যেতে হবে না, আমার সঙ্গে আয়, কাল রাতে তিলু পিসী আর ভুবন বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। ছেলেটা বড়ো ভাল ছিল রে, বলে বখাটে রাজেন আমাকে ফেলে এগিয়ে যায়, আমি খেয়াঘাটে পাষাণের মতন একলা দাঁড়িয়ে থাকি নিথর, চোখে জল আসে না।

 

পরমার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top