সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

দ্যা প্রফেট (তৃতীয় অনুচ্ছেদ) : কাহলীল জীবরান 


প্রকাশিত:
৯ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:৪৯

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫:৫০

ছবিঃ কাহলীল জীবরান এবং অনুবাদক রোজীনা পারভীন বনানী 

 

মূল: কাহলীল জীবরান 
অনুবাদ: রোজীনা পারভীন বনানী 

পর্ব পাঁচ

তারপর একজন বৃদ্ধ, একটি পান্থশালার মালিক বললেন, আমাদের আহার এবং পান করা সম্বন্ধে বলুন।

তখন তিনি বললেন: ভাল হতো যদি তোমরা পৃথিবীর সৌরভ নিয়ে এবং যেভাবে উন্মুক্ত বাতাসে একটা গাছ আলো থেকে শক্তি নিয়ে বাঁচে, সেভাবে বাঁচতে পারতে। কিন্তু খাদ্যের জন্য তোমাদের কে অবশ্যই হত্যা করতে হয় এবং তৃষ্ণা মেটানোর জন্য সদ্যপ্রসূত শিশুর মায়ের দুধ তোমাকে ছিনিয়ে নিতে হয়, তাই স্বরণ রেখো এই কাজ যেন উপাসনায় পরিণত হয়।

এও স্বরণ রেখো তোমাদের খাবার টেবিল যেন পরিণত হয় একটা বেদীতে যেখানে ক্ষেতের এবং বাগানের খাঁটি এবং নিষ্পাপ জিনিসগুলো আত্মত্যাগ করেছে মানুষের ভিতরকার খাঁটি এবং আরও নিষ্পাপ স্বত্তাকে জাগাবে বলে। যখন তুমি বন্যপশুকে শিকার করবে তখন হৃদয়ের ভিতর তাকে বলো:

যে শক্তি তোমাকে হত্যা করেছে, সেই একই শক্তির দ্বারা আমি হত হচ্ছি; এবং এইভাবে আমিও একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবো।

 

“যে আইন তোমাকে আমার হাতে অর্পণ করেছে সেই আইনই আমাকে আরো শক্তিশালী হাতে অর্পণ করবে। তোমার এবং আমার রক্ত সেই প্রাণরস যা স্বর্গীয় বৃক্ষকে প্রাণবন্ত করে।”

 

তুমি একটা আপেলকে যখন দাঁত দিয়ে পিষবে, তখন তোমার হৃদয়ের ভিতর তাকে বলো:

 

“তোমার বীজ বেঁচে থাকবে আমার শরীরের ভিতর, তোমার ভবিষ্যতের কুঁড়ি আমার হৃদয়ে প্রস্ফুটিত হবে,

এবং তোমার সৌরভই হবে আমার নিঃশ্বাস, “এবং সব ঋতুতেই আমরা দুজন একত্রে আনন্দিত হব।”

 

শরৎকালে তুমি যখন মদ তৈরির জন্য তোমার ক্ষেত থেকে দ্রাক্ষা আহরণ কর, তখন তোমার হৃদয়ে বলো:

“আমিও একটা দ্রাক্ষাক্ষেত, এবং মদ তৈরীর জন্য আমার ফলকেও আহরণ করা হবে, সদ্য তৈরি মদের মত আমাকেও শাশ্বত পাত্রে রাখা হবে।”

 

শীতকালে, যখন সেই মদ পান করবে, তখন তোমার হৃদয়ে প্রত্যেক পেয়ালার জন্য থাকবে সুমধুর সংগীত এবং সেই সংগীত হবে শরৎকাল, এবং দ্রাক্ষাক্ষেত এবং মদের কারখানার স্মৃতি বিজড়িত।।

পর্ব ছয়ঃ

তারপর একজন চাষী বললেন, আমাদের বলুন কাজ কি?

তিনি উত্তরে বললেন: পৃথিবী এবং পৃথিবীর আত্মার সাথে একত্রে পদচারণা করার জন্য তোমরা কাজ কর। একজন অলস ব্যক্তি যে কোন ঋতুতে আগন্তুকে পরিণত হয়, এবং অসীমের দিকে ধাবিত জীবনের মর্যাদাপূর্ণ এবং গর্বিত মিছিল থেকে বের হয়ে আসে। কাজের সময় তুমি হয়ে যাও একটা বাঁশি যার হৃদয় থেকে সময়ের ঘন্টাধ্বনি সুমধুর সংগীতের মত বাজে। যখন সবকিছু একত্রে  একটি সুরের সৃষ্টি করে, তখন তোমার ভিতরের কোন জিনিষটি বোবা এবং নিঃশব্দ বাঁশির নলে পরিণত হয়? তোমরা সর্বদা বল কাজ একটা অভিশাপ এবং পরিশ্রম একটা দুর্ভাগ্য।

কিন্তু আমি তোমাদেরকে বলছি কাজের সময় তোমরা পৃথিবীর দূরতম স্বপ্নের একটা অংশকেই পূরণ কর, জন্মলগ্ন থেকেই যে স্বপ্নকে তোমার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং তোমরা যেন সত্যিকার ভাবে জীবনকে ভালবাসতে পার সেই জন্য তোমাদেরকে পরিশ্রমের ভিতর রাখা হয়েছে, যে পরিশ্রম জীবনের অন্তরতম গোপনীয়তার সাথে ঘনিষ্ঠ সেই পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবনকে ভালবাস।

কিন্তু তুমি যদি নিদারুণ কষ্টে জন্ম এবং যন্ত্রণা এবং দৈহিক ক্ষুধাকে কপাল নির্দিষ্ট একটি অভিশাপ হিসেবে উল্লেখ কর, তার উত্তরে আমি বলব তোমার কপালের লিখন তোমার পরিশ্রমের ঘাম মুছে দেবে।

তোমাদেরকে এও বলা হয়েছে যে জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন, এবং তোমাদের ক্লান্তিকর অবস্থায় তোমরা ক্লান্তজনের কথার প্রতিধ্বনি কর।

 

আমি বলি অনুপ্রেরণা ব্যতীত জীবন কার্যতভাবেই অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং জ্ঞান ব্যতীত সমস্ত অনুপ্রেরণাই অন্ধ।

 

কাজ ব্যতীত সমস্ত জ্ঞানই নিস্ফল এবং ভালবাসা ব্যতীত সমস্ত কাজই মূল্যহীন। যখন তোমরা ভালবেসে কাজ কর তখন তোমরা তোমাদের অধীন হও এবং একে অন্যের এবং ঈশ্বরের।

 

ভালবেসে কাজ করা কি?

 

ভালবেসে কাজ করা হলো হৃদয় থেকে সুতা টেনে কাপড় বয়ন করা, যেন তোমার প্রিয়জন সেই কাপড় পরিধান করবে। আদর এবং স্নেহ দিয়ে গৃহ নির্মাণ, যেন তোমার প্রিয়জন সেই গৃহে বাস করবে। কোমলতার সাথে বীজ বপন এবং আনন্দের সাথে ফসল কাটা, যেন তোমার প্রিয়জন তার ফল ভোগ করবে। ভালবেসে কাজ করা হলো তোমার আত্মার নিঃশ্বাসের সংগে তোমার প্রচলিত সমস্ত রীতির তত্ত্বাবধায়ন এবং এটা মনে রাখা যে সমস্ত আর্শীবাদধন্য মৃতদের আত্মারা তোমার নিকটে দাঁড়িয়ে তোমাকে লক্ষ্য করছে।

 

প্রায়শই তোমাদের বলতে শুনি যেন ঘুমের ঘোরে বলছ, “যে মার্বেল পাথর বসানোর কাজ করে এবং পাথরের ভিতর নিজের আত্মার প্রতিকৃতি দেখতে পায়, সেই মহৎ যে মাটিতে চাষ করে তার চেয়ে।”

 

“এবং যে আমাদের পায়ের জন্য জুতা তৈরি করেছে তারচেয়ে যে আকাশের রংধনুকে মানুষের কাপড়ে অঙ্কিত করেছে সেই উন্নত।”

 

কিন্তু আমি বলি, ঘুমন্ত অবস্থায় নয় বরং দুপুরবেলায় পূর্ণ জাগ্রত অবস্থায়, বাতাস কখনোই সবচেয়ে ক্ষুদ্র তৃণের চেয়ে বিশাল ওক গাছের সাথে আরও মধুর স্বরে কথা বলে না। একাকী সেই সবচেয়ে মহৎ যে তার নিজস্ব ভালবাসা দিয়ে বাতাসের স্বরকে সুমধুর সংগীতে পরিণত করেছে।

 

কাজই ভালবাসাকে দৃশ্যমান করে।

 

যদি তুমি ভালবেসে কাজ না করে শুধুমাত্র ঘৃণার সংগে কর,তাহলে কাজকে পরিত্যাগ করাই তোমার জন্য ভাল এবং তখন মন্দিরের দরজায় গিয়ে বস এবং যারা আনন্দের সাথে কাজ করে তাদের কাছ থেকে ভিক্ষা নাও।

কারণ যদি তুমি অবহেলার সংগে রুটি সেঁক,তুমি একটা রুটি পুড়িয়ে ফেললে তাতে যে তিক্ত স্বাদের সৃষ্টি হবে তা দিয়ে মানুষের কেবল অর্ধেক ক্ষুধার নিবৃত্তি সম্ভব।

 

তুমি যদি ঘৃণার সংগে আঙুর পেষণ কর, তোমার সেই ঘৃণা মদের ভিতর বিষ তৈরী করবে এবং যদি তুমি সুরকে ভাল না বেসে গান গাও, যদিও তা দেবদূতের মত, তোমার সেই গান দিন ও রাত্রির স্বর থেকে মানুষের কানকে আচ্ছাদিত করবে।।

চলবে

 

রোজীনা পারভীন বনানী 
ঝিনাইদহ, বাংলাদেশ

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top