স্বামী বিবেকানন্দ : শিবব্রত গুহ
প্রকাশিত:
১৩ জানুয়ারী ২০২১ ২১:৩৫
আপডেট:
১৪ মার্চ ২০২৫ ১৪:০৯
"মানুষের সেবা করা হচ্ছে ঈশ্বরের সেবা করা।"
উপরোক্ত কথাটি কে বলেছিলেন জানেন আপনারা? তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন আমাদের সবার প্রিয় বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ। যাঁর কথা শুনলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায়। তিনি আমাদের দেশ ও জাতির গর্ব। আমরা গর্বিত, যে, আমাদের দেশ ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।
১২ ই জানুয়ারী ছিল স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন। ১৮৬৩ সালের ১২ ই জানুয়ারী, আমাদের কোলকাতা শহরে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। তখন ছিল ব্রিটিশ ভারত। ভারতবাসীর ছিল না কোন স্বাধীনতা, তারা ছিল পরাধীনতার শৃঙখলে আবদ্ধ। ছোট বেলা থেকেই স্বামীজী ছিলেন খুবই সাহসী। ভয়কে তিনি করেছিলেন জয়। তাঁর গুরু ছিলেন পরম পুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ। স্বামীজীকে সঠিক ভাবে চিনতে পেরেছিলেন একমাত্র শ্রীরামকৃষ্ণ দেব। স্বামীজী ছিলেন তাঁর আদর্শ শিষ্য।
তিনি সারাজীবন ধরে তাঁর গুরু শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের যাবতীয় আদেশ ও নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গেছেন। তিনি ছিলেন একজন যথার্থ দেশপ্রেমিক। দেশই ছিল তাঁর ধ্যান - জ্ঞান। ভারত বাসী ছিল গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে। তাদের সেই ঘুম ভাঙলো স্বামী বিবেকানন্দের উদাত্ত আহবানে।
দেশ ও দেশবাসীর সর্বাঙ্গীণ উন্নতির জন্য, স্বামীজী আমৃত্যু চেষ্টা করে গেছেন। অশোকানন্দ, বিরজানন্দ, পরমানন্দ, অভয়ানন্দ প্রভৃতি ছিলেন তাঁর শিষ্যবৃন্দ। তবে, তাঁর প্রিয় শিষ্যা ছিলেন ভগিনী নিবেদিতা। তিনি ছিলেন একজন মহিয়সী নারী।
স্বামীজী বিশ্বাস করতেন বিশ্ব - মানবতায়। তাঁকে বিশ্ব - মানবতার প্রতীক বলা যেতে পারে। তাঁর জীবন দর্শন ও বানীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন নেতাজী সুভাসচন্দ্র বোস, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাঘা যতীন, এমা কাভ, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
স্বামী বিবেকানন্দ অনেক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তার মধ্যে রাজযোগ, জ্ঞানযোগ, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, বর্তমান ভারত, মদীয় আচার্যদেব ইত্যাদি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
"বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর? / জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। " - স্বামীজীর একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় উক্তি। সত্যিই, তিনি ছিলেন জীবপ্রেমী। তিনি বিশ্ব মানব সমাজের কাছে এক নতুন আদর্শ স্থাপন করলেন। তা কি জানেন? তা হল শিবজ্ঞানে জীবসেবার মহান আদর্শ।
স্বামীজী ভবিষ্যৎ ভারত নিয়ে অনেক পরিকল্পনা করেছিলেন। তাঁর জীবনী ও বানী আজও দেশের যুব সমাজকে উদ্দীপিত করে থাকে। স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনটি সারা ভারতে পালিত হয়ে থাকে " জাতীয় যুব দিবস " - হিসাবে। তিনি একাধারে ছিলেন একজন মহান হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক ও দার্শনিক। তিনি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে, ভারতীয় যোগ দর্শন ও বেদান্ত দর্শনের প্রচারে বিরাট ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন সংকল্পে অটল।
তাঁকে কেউ কখনো তাঁর সংকল্প থেকে বিচ্যুত করতে পারে নি। তিনি আমেরিকার শিকাগো শহরে, বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় যোগদান করেছিলেন। সেখানে তাঁর মধুর ভাষণে, আমেরিকাবাসী মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১৮৯৭ সালের ১ লা মে, স্বামীজী ধর্ম প্রচারের জন্য " রামকৃষ্ণ মঠ " ও সামাজিক কাজের জন্য "রামকৃষ্ণ মিশন" - প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
স্বামী বিবেকানন্দ আজ আমাদের মধ্যে নেই ঠিকই, কিন্তু তাঁর জীবন ও বানী আজও আমাদের পথ দেখিয়ে চলেছে আর ভবিষ্যতেও চলবে।
( তথ্য সংগৃহীত )
শিবব্রত গুহ
কলকাতা
বিষয়: শিবব্রত গুহ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: