সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব দশ) - কাজী মাহমুদুর রহমান


প্রকাশিত:
২০ মার্চ ২০২১ ২০:১৩

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ১৭:১৮

 

একদা তাইমুর হাসান তাহার পিতা ফজলুল হাসানের অতি পুরাতন টিনের তোরঙ্গ ঘাটিয়া একটি জীর্ণ ডায়েরি উদ্ধার করিয়াছিল। সে ডায়েরিটি গোপনে পাঠ করিয়াছিল তাহার পিতা ও মাতার প্রথম পরিচয়, প্রণয় ও পরিণয় জানিবার বালকসূলভ অদম্য কৌতূহলে। ফজলুল হাসানের তেমন একটা ডায়েরি লিখিবার অভ্যাস ছিল না। ডায়েরির কয়েকটি বিবর্ণ হলুদ পাতায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সময়ের কিছু কথা লিখা ছিল যাহার কিছু অংশ অস্পষ্ট, শীতের ঝরা পাতার মতোই মৃত। ডায়েরির পাতাগুলি কোথাও কোথাও ছেঁড়া। কিন্তু লেখাগুলি আদৌ কোথাও কাটা-ছেঁড়া নহে। কারণ, কল্পিত কাহিনি লিখিতে গেলেই তাহাকে বর্ষার নদীর বন্যা স্রোতের মতো বাধা-বন্ধনহীন গতিতে বহিতে দেওয়া যায় না। লেখককে তাহার ভাবনা-চিন্তার বেগ-আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করিতে হয়, নানান চড়াই উৎরাই অতিক্রম করিবার কৌশল অবলম্বন করিতে হয়, চরিত্রসমূহের আচার-আচরণ কাহিনির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য করিয়া তুলিতে তাহা ভিন্ন ভিন্ন রংএ রঞ্জিত করিতে হয়, সংযোজন ও সংশোধন করিতে হয়। কিন্তু ফজলুল হাসানের স্মৃতি কথায় কোনো কাটা ছেঁড়া নাই, কষ্ট কল্পিত ঘটনা পরিলক্ষিত হয় নাই। তিনি যতটুকু লিখিয়াছেন তাহা হইতেছে।

‘আমার এই ডায়েরি লিখন অর্থহীন। কারণ, আমি কোনো মহৎ ব্যক্তি নই, আমার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নাই, বীর বিক্রম বা বীর প্রতীক পদক নাই যাহা আমার ভবিষ্যত প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করিতে পারে, তাহাদের গর্বের কারণ হইতে পারে। এই ডায়েরির কিছু কথা শুধু আমার যৌবনকালের সেই দিশাহীন একাত্তরের অন্ধকার সময়ের, আমার পলাতক জীবনের কয়েকটি দিনের ... জয়ীতার সঙ্গে আমার পথ কিংবা এক নদীতটে পরিচয়ের কথা, নীরব ভালোবাসার কথা ... (অস্পষ্ট)।

সেই ১৯৭১ এ আমি ছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শেষ বর্ষের ছাত্র। অনার্সে প্রথম শ্রেণি পাইয়াছিলাম। আশা ছিল মাস্টার্সেও প্রথম হইতে পারিলে বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রভাষকের চাকরি পাইতে পারি তাহার পর ভাগ্য প্রসন্ন হইলে একটা কমনওয়েলথ স্কলারশিপ ... (অস্পষ্ট)।

আমি তেমন একটা ধর্মমনষ্ক নই, বিজ্ঞানমনষ্ক ...। আমি কোনো রাজনৈতিক দল বা ছাত্র সংগঠনের সক্রিয় কর্মী নই। তবে আমার পিতার প্রভাবেই সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে কিছুটা আগ্রহ ছিল ... (অস্পষ্ট)।... সাতই মার্চ রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) ময়দানে লক্ষ জনতার সাথে আমি স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনিতে যাই। কী যে ছিল সেই অগ্নিঝরা তেজদীপ্ত ভাষণ।

‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না ... আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি ... তা হলে তোমরা প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল ... তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড় ... এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ...’

সাতই মার্চের এই অগ্নিক্ষরা ভাষণের পর দেশব্যাপী হরতাল, অবরোধ আরো প্রবল ... সমুদ্রের গোর্কির মতো ... সকল ছাত্র, শ্রমিক, মেহনতি জনতা, বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ ... (অস্পষ্ট) শ্লোগানে, শ্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত ... (অস্পষ্ট) ... সমস্বরে আমরা গান গাহিতে থাকি, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি ...

এখন সকলের প্রাণের দাবি আর পশ্চিমা সামরিক শাসনের অধীনতা নয়, চাই স্বাধীনতা। আকাশে বাতাসে জয় বাংলা বাংলার জয় ... ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হইতে থাকে। গৃহে গৃহে, পথে পথে, মানুষের হাতে হাতে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল সবুজের পতাকা স্বপ্নের পাখির মতো উড়িতে থাকে।

 

পঁচিশে মার্চ সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা সবাই স্বাধীনতার প্রত্যাশায় স্বপ্নে বিভোর।

সহসা স্বপ্ন ভাঙিয়া যায় পঁচিশে মার্চের সেই কালরাত্রিতে ওঁৎ পাতিয়া থাকা পাকি হানাদার বাহিনীর অতর্কিত হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞে। তাহাদের নারকীয় অগ্নুৎসবে। চারিদিকে তখন মুষলধারায় গুলির শব্দ ... শুধু লাশ আর লাশ ... হায়েনাদের হিংস্র উল্লাস।

আমি পলাতক। প্রাণভয়ে ভীত পলায়নপর জনস্রোতের সাথে ভাসিতে ভাসিতে আমি কীভাবে যে বিধ্বস্ত জনপদ খুলনায় পৌঁছাইয়াছিলাম তাহা এখন আর স্মরণ নাই, বর্ণনাও সম্ভব নয়।

খালিশপুরের পাকিস্তানপ্রেমিক দাঙ্গাবাজ বিহারীদের দখলে আমাদের বাড়ি ... আমার পিতা, মাতা, বোন জহুরা নিখোঁজ ... সম্ভবত তাহারা নিহত। আমি এখন নিঃসহায়, স্বপ্নহীন, বোধহীন। আমি এখন কি করিব, কোথায় যাইব?  খুলনায় যাহারা আমার পরিচিত ... আত্মীয়-স্বজন তাহারা কেহ পলাতক, কেহ নিহত। উপায়ন্তর না দেখিয়া শান্তিধামে খুলনা বি এল কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের আমার এক প্রবীণ, প্রিয় অবাঙালী শিক্ষক সাদত আলীর সঙ্গে দেখা করিতে গেলাম। তিনি আমাকে দেখিয়া চমকিয়া উঠিলেন, বলিলেন, আরে বেটা তু আভিতক জিন্দা হ্যায়?

আমি বলিলাম, স্যার আমি তো মরেই গেছি। নতুন করে আর কি মরব? আমার বাবা, মা, বোন কেউ বেঁচে নেই, বাড়িটা দখল হয়ে গেছে। আমার পেটে ভাত নেই, পকেটে একটা টাকাও নেই। আমাকে মারতে হলে আপনিই মারুন অথবা আর্মিদের কাছে ধরিয়ে দিন।

সাদত আলী দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলিয়া উঠিলেন, বেটা, তু একী বলছিস? আমি বিহারী না আছে, বাঙালি না আছে- আমি একটা নাদান আদমি- এ বোনলেস হিউম্যান বিয়িং। আমি তুদেরকে ফিজিক্স পড়িয়েছি নট টু টিচ রিলিজিয়ন, নট টু ডু দিস কম্যুনাল রায়োট। আমি তুদেরকে পড়িয়েছি সায়েন্স টু নো দ্য ইউনিভার্সাল ট্রুথ, টু নো দ্য গর্ড’স লাভ অ্যান্ড হিজ ক্রিয়েশন। আ অ্যাম স্যরি বেটা, ভেরি স্যরি হোয়াট ইজ হ্যাপেনিং, হোয়াট ইজ গোয়িং অন নাউ।

আমি ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত স্বরে বলিলাম, স্যার আমার বড় ক্ষিদে। বহুত ভুখা  হু মায়।

স্যার তাহার স্ত্রীকে আমার জন্যে দ্রুত রুটি, ডিম, সবজিভাজি দিতে নির্দেশ দিলেন। কয়েকদিন অনাহারের পর তাহা যেন অমৃত। আমি খাওয়া নয় যেন গ্রোগাসে গিলিতে লাগিলাম। আহারের মধ্যেই স্যার সতর্ক মৃদুস্বরে বলিলেন, বেটা হাসান, আব মেরা হাল বহুত নাজুক। হামি না এধার না ওধার আছে। একটা ফারসি বয়েত আওড়ে বললেন, ‘করেঁ কেয়া কেহ দিলভি তো মজবুর হ্যায়, জমিন সখত হ্যায়, আসঁমা দূর হ্যায়’। বেটা, প্রথমেই বলেছি তু ভাগ্ যা। কেইসে ভাগোগে মুঝে নেহি মালুম। কিসিকো মাত বোল না তু এহা আয়াথা, খানা পিনা কিয়া থা। ইউ নো রবিউল? ওয়ান্স ইয়োর গুড ফ্রেন্ড রবিউল?

রবিউলের নাম শুনিয়া আমি বোকার মতো তাকাইয়া রহিলাম স্যারের দিকে। স্যার তাহার ক্ষোভ আর ঘৃণার সহিত বলিলেন, নাও হি ইজ এ টেরর। কর্ণেল শামসএর জানি দোস্ত। টুটপাড়ার এক হিন্দু জুয়েলারির পুরা পরিবার খতম করে সেই মাকানটা দখল করিসে। ও আভি পিস কমিটি করে, রেজাকার কমান্ডারি করে। লুটপাট করে, আওরত সাপ্লাই করে। হোয়াট এ শেম! নাউ টেল মি হোয়াট ডু ইউ লাইক টু ডু? ফ্লাই অ্যাওয়ে? অর জয়েন হিম?

আমি বলিলাম, স্যার আ অ্যাম গোইং টু মিট হিম।

স্যার ভ্রুকুঞ্চিত করিলেন, গোইং টু মিট হিম! হোয়াই?

আমি বলিলাম, টু টেক সেফ্ শেল্টার।

স্যারের রুষ্ট কণ্ঠ, আফটার দ্যাট?

আমি শান্ত কণ্ঠে বলিলাম, বিফোর আই ডাই আই উইল কিল হিম।

স্যার হতাশভাবে মাথা ঝাঁকুনি দিলেন, আই ডোন্ট থিংক সো। হি ইজ ভেরি ক্লেভার। এ কানিং  ফক্স। তুম যো নেহি সাকোঙ্গে ওহ মাত করো। ইট্স বেটার ইউ ফ্লাই অ্যাওয়ে।

স্যার আমার পকেটে কিছু টাকা গুঁজিয়া দিয়া বলিলেন, ভাগনেকে লিয়ে ইয়ে থোড়াসা রুপিয়া। আগর তুম এহি রহ যাও তো আই ওয়ার্ন ইউ নেভার ট্রাই টু মিট মি এগেইন। নাউ খুদা হাফিজ।

আমার এই মুহূর্তে ভাগিবার বা পলায়নের ইচ্ছা নাই। মধ্য দুপুরের তপ্ত আগুনে আমি টুটপাড়ার পথে। রবিউলের সঙ্গে আমার সাক্ষাত ও বোঝা- পোড়া প্রয়োজন। ও ছিল মাদ্রাসায় পড়াশুনা করা ছাত্র। একই পাড়ার বাল্য বন্ধু। কলেজেও একদা ইসলামী ছাত্রসংঘ করিত। গোপনে নকশাল করিত। ওর বাবা ছিল বি এল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দপ্তরি। খুবই অভাবের সংসার। ক্ষুধায় কাতর হইলে আমাদের বাড়িতে আসিয়া প্রায়ই ভাত খাইত। বি এল কলেজে বি কম পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময় টাকা ছিল না বলিয়া আমার আব্বার নিকট কাঁদিয়া পড়িয়াছিল। আব্বা তাহাকে দুইশত টাকা দিয়া সাহায্য করিয়াছিলেন। সে ছিল আমার বাল্য বন্ধু, একই পাড়ার ছেলে। তাহার দরিদ্রাবস্থায় আমি তাহাকে বহু দয়া-দাক্ষিণ্য দিয়াছি। আজ আমার সংকটে সে কি আমার পাশে দাঁড়াইবে না? আমাকে আশ্রয় দিবে না?

রবিউলের দখলকৃত বাড়িটটি চিনিতে কষ্ট হইল না। খুলনার বিশিষ্ট স্বর্ণ ব্যবসায়ী মনোরঞ্জন হালদারের সুদৃশ্য দ্বিতল বাড়ি। রবিউল ছিল মনোরঞ্জন হালদারের কর্মচারী। ব্যবসার যাবতীয় হিসাবপত্র দেখাশুনা করিত। সুযোগ সন্ধানী রবিউল ছাব্বিশে মার্চের পর প্রথম ধাক্কাতেই মনোরঞ্জন হালদারকে সপরিবারে হানাদার বাহিনী দ্বারা নিপাত করিয়াছে। এখন এই বাড়িটাই রবিউলের সার্বক্ষণিক অফিসকক্ষ, বিশ্রামকক্ষ, গোপন নির্যাতন ও বিচার কক্ষ, বিভিন্ন স্থান হইতে ধৃত কিশোরী, তরুণী, গৃহবধূদের উপভোগের কক্ষ। বাড়ির প্রবেশ পথে সার্বক্ষণিক অবাঙালি সশস্ত্র পাহারাদার যাহারা রবিউলের অত্যন্ত অনুগত, বিশ্বস্ত রাজাকার।

আমি যথারীতি পরিচয় প্রদান, দেহ তল্লাশি ও অনুমতি প্রাপ্তির পর রবিউলের সাক্ষাত পাইলাম। রবিউলের এখন অন্যরূপ, অন্য চেহারা। পরিধানে বাদামীরঙা পশ্চিম পাকিস্তানী স্টাইলের লম্বা ঢোলা পাঞ্জাবি, চুড়িদার শেরওয়ানি, মাথায় টুপি, মুখে দাড়ি। মুখ ভর্তি চর্বিত পানের রস। সে খুলনা ছাত্র শিবিরের সভাপতি। রাজাকার কমান্ডার। টেবিলের উপর পিস্তল, কাতুজ ভর্তি বেল্ট আর বুলেট প্রুফ জ্যাকেট। রবিউল আমাকে এই হতচ্ছাড়া অবস্থায় দেখিয়া বিস্মিত। সে উঠিয়া আসিয়া আমাকে সহাস্যে আলিঙ্গন করিল। খুলনার ভাষাতে উচ্ছসিত কণ্ঠে বলিল, আরে দোস্ তুই! আমি তো ভাবতিই পারি নেই তুই এতো গ-গোলের মধ্যি খুলনায় আসতি পারবি! কী মহা আশ্চর্য! বস্ বস্। কবে খুলনা আলি?

- আজ সকালে।

- কনে উঠিছিস?

- কোথাও না। আমি সারাদিন পথে পথে। আমার আব্বা, মা, জহুরার কোনো খোঁজ নেই। বাড়িটা দখল করে নিছে বিহারীরা। রবি, তুই থাকতি আমার এমন সর্বনাশ হয়ে গেল! তুই একটুও জানলি নে, দেখলি নে?

রবি অত্যন্ত আফসোসের কণ্ঠে বলিল, ফজলুরে, এই শালা আওয়ামী বানচোদগের জন্যি যে মহাপ্রলয় ঘটে গেল- তার মধ্যি কিডা মরল, কিডা বাঁচল তা কি আমার জানা বা দ্যাখার সাধ্যি ছিল? ওই খালিশপুর হচ্ছে শালা বিহারীগের পাকিস্তান। শালা আমিই ওই এরিয়াতে ঢুকতি সাহস পাইনে। অ্যাহন চাচা, চাচীজান, বোন জহুরার আত্মার মাগফেরাত করা ছাড়া আর করার কিছু নেই। ধৈর্য্য ধর দোস্। নিশ্চয় আল্লা ধৈর্য্যশীলদের সঙ্গে আছেন।

আমার হাহাকার, বুক ভাঙিয়া কান্না নাই, নাই, আমার কেউ নাইরে ... আমি এখন কোথায় যাই ... কার কাছে দাঁড়াই?

রবি আমাকে তাহার বক্ষে চাপিয়া সান্ত¦না দানের কণ্ঠে বলিল, উপরে আল্লা, নিচে আমি আছিরে। তুই কাঁদিসনে দোস্। তুই আমার কাছে ছুটে যখন আয়েছিস তহন আর চিন্তা করতি হবিনে। তুই শান্ত হ। আজকেরতে তোর সব দায়িত্ব আমার। তুই আপাতত আমার এই বাড়িতি থাক। এই নিচের তালাতেই তোর জন্যি একটা রুম ঠিক করে দিতি কয়ে দিচ্ছি। খাওয়া দাওয়া কর, রেস্ট কর। আর যদি সব দুঃখ ভুলতি মউজ করতি চাস তারও ব্যবস্থা আছে।

আমি যেন বোকার মতো প্রশ্ন করিলাম, মউজ! কিসের মউজ?

রবি হাসিয়া উঠিল। রহস্যময় কণ্ঠে বলিল, দোস্, আমরা হলাম খুল্লের  মানুষ। সব কথা কি খুলে বলতি হয়? কিছু কথা বুঝে নিতি হয়। যাক গে আমার এখন সার্কিট হাউজ যাতি হবি। কর্ণেল শামস এর সঙ্গে জরুরি মিটিং আছে। কাল তোরে নিয়ে কর্ণেল স্যারের সঙ্গে আলাপ পরিচয় করায়ে দেব। উনি ভেরি মাইডিয়ার কিসিমির মানুষ। তোর জন্যি একটা সিকিউরিটি লেটার নিতি হবি ওনার কাছতে। অ্যান্ড আফটার দ্যাট আমার প্লান হচ্ছে তোরে আমাগের শান্তি কমিটির মিডিয়া পাবলিক রিলেশন অফিসার বানানো।

আমি বাধা দিয়া বললাম, রবি তুইতো জানিস আমার এখন মানসিক অবস্থা কী? সব জেনে শুনে তুই ক্যান আমারে এইসব ঝামেলায় জড়াচ্ছিস?

রবি বলিল, জড়াচ্ছি, জড়াতি হবি টু প্রুভ দ্যাট ইউ আর রিয়েল পাকিস্তানী। তুইও আমার মতো সূঁচ হয়ে ঢুকবি ফাল হয়ে বেরুবি। তোগের ঐ বাড়িটা উদ্ধার করতি হবি না?

আমি বলিলাম, বাড়ির চাইতে এখন আমার বেশি দরকার তোর মতো বন্ধুর সাহায্য, কিছু টাকা। আমার হাত এখন একেবারে শূন্য।

রবি তাহার টেবিলের ড্রয়ার খুলিল। বাঁহাত ভরিয়া এক গোছা টাকা বাহির করিয়া আমার হাতে গুঁজিয়া দিল। বলিল, এই নে। হেয়ার মানি ইজ নট এ প্রবলেম, নো প্রবলেম ফর ডব্লিউ, ডব্লিউ-হা হা হা ...

আমি বিস্মিত দৃষ্টিতে একবার হাতের টাকা আর একবার রবির মুখের দিকে তাকাইতে থাকি। রবি আমার বোকা ভাব লক্ষ করিয়া রসিকতার ভঙ্গিতে বলিল, বুঝলি না? আরে এক ডব্লিউ হল ওয়াইন, আর এক ডব্লিউ মানে ওমেন।

আমার যে আর একটা ডব্লিউ দরকার? দিবি?

- কোন ডব্লিউ? রবিউলের প্রশ্ন।

- ডব্লিউ ই এ পি ও এন মানে উইপন। দিতি পারবি? মুহূর্তে রবির মুখভাব পাল্টাইয়া গেল। তাহার হাত অজান্তেই যেন ঝট করিয়া চলিয়া গেল টেবিলের উপর তাহার পিস্তলের উপর।

আমি হাসিয়া বলিলাম, আরে আমি তোর এই ডব্লিউ তো চাচ্ছি না। আমারে একটা আলাদা ডব্লিউ দিবি। ঐ ডব্লিউ দিয়ে আমি একটা একটা করে সেই সব আল-বালদের খুঁজব আর মারব যারা আমাদের দেশ আর জাতির এই ধ্বংস আর দুর্দশার জন্যে দায়ী।

রবি এইবার সোল্লাসে হাসিয়া উঠিয়া টেবিল চাপড়াইয়া বলিল, এই তো খাঁটি পাকিস্তানীর মতো কথা কইছিস! চিয়ার, চিয়ার। পাকিস্তান-জিন্দাবাদ। কর্ণেল স্যার আমারে কয়ে গেছেন এই দেশে থাকবি শুধু মোমিন মোসলমান। হেয়ার নো প্লেস ফর মালাউনস, নো প্লেস ফর অ্যান্টি পাকিস্তানী আল-বাল আওয়ামী লীগারস।

চলবে

 

লাইফ অব এ রিকশা পেইন্টার (পর্ব এক)
লাইফ অব এ রিকশা পেইন্টার (পর্ব দুই)
লাইফ অব এ রিকশা পেইন্টার (পর্ব তিন)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব চার)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব পাঁচ)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব ছয়)
লাইফ অব এ রিকশা পেইন্টার (পর্ব সাত)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব আট)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব নয়)

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top