সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

 প্রেমবাজি : ড. ময়ূরী মিত্র


প্রকাশিত:
১৭ জুন ২০২১ ২০:৩৫

আপডেট:
১৯ জুন ২০২১ ১৭:৩১

ছবিঃ ময়ুরী মিত্র

 

প্রেমে পড়লাম আমি। ক্লাশ টুয়েলভ নাগাদই মাথাখারাপ করা প্রেমে পড়ে গেলাম আমার স্বামীর। তখন অবিশ্যি সে স্বামী হয়নি। হবে এমন আশাও তৈরি হয়নি। তখন কেবল ভেবেছিলাম পুরুষটিকে আয়ত্ত করতে হবে। একদম বশ মানা মেনি হয়ে যাবে। থাকবে আমার দুই আঙুলের ফাঁকে কিংবা নখের ময়লায়। জীবনের এক একটা কাল আসে যখন আমি তাকে কত ভালোবাসছি এ প্রশ্নের চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়ায় সে পুরুষ আমারই আছে তো? অহরহ দিনের মধ্যে চব্বিশ ঘন্টা আমাকেই জপে তো? আমার ক্ষেত্রে প্রেমিককে নিয়ে এই বারোমেসে বাতিক আরো বেড়েছিল আমার এই সাদামাটা চেহারাটার জন্য। ফুলবড়ি নাকখানি সর্বদাই তখন কুঁচকে থাকত আমার। নিত্যি নতুন সাজ দিতাম আর জীবনভোর কী করে সে মানুষকে আটকাবো তার ফন্দি বানাতাম।

সেবার পুজোয় শারদীয় মেলা থেকে প্রেমিক দিলেন এক সেট নানা রঙের কাঁচের চুড়ি। পরের দিন অষ্টমী। ঠিক হলো রঙ মিলিয়ে চুড়িগুলো পরে মেলায় আসবো। অষ্টমী কাঁপিয়ে বৃষ্টি এল। ঝরছে তো ঝরছে। রাস্তায় যত জল জমছে আমার পুরুষের কাছে পৌঁছোনো তত কঠিন হচ্ছে। ভেতর আকুল হচ্ছে তত তত। হাঁটু অব্দি সালোয়ারের গুঁটিয়ে এবং সব চুড়িগুলো পরে গেলাম মেলায়। গিয়ে দেখি এক পরমাসুন্দরীর সাথে গল্প করছেন আমার প্রেমিক।

কোনোরকম মাথা না খাটিয়েই হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করেছি। ওগো কী তীব্রই না ছিল সে কান্না ! এক একটা করে চুড়ি ভেঙে ভেঙে ফেলছি মাঠভর্তি কাদায়। প্রেমিক আর প্রেমিকের বান্ধবী থ। আরো বাড়লো বৃষ্টি। উগ্র মন আরো খানিক ভিজল। মাথা এবার ঠান্ডা। এবার বায়না কাদায় গাঁথা ভাঙা চুড়িগুলোই মেরামত করে দিতে হবে আমায়। তাই দিয়েছিলেন প্রেমিক। কালীপুজোর রাতেই সারাই করা চুড়ির সার গুছিয়ে দিয়েছিলেন আমার দুহাতে। অবাক হয়ে দেখি তাড়াহুড়োয় কিংবা প্রেমিকার হৃদয় হারানোর টেনশনে প্রেমিক গুলিয়ে ফেলেছেন ভাঙা চুড়ির রং। আধখানা লাল চুড়িতে জুড়ে দিয়েছেন আরেকটা চুড়ির সবুজ। কোনটা আবার সবুজে নীলে ময়ূররঙা। 

ফেভিকলের মাখন গাঁথুনিতে এক রঙে বনবন ঘুরছে আরেকটা কোনো রঙ। সেদিন আমার হেমন্তের হোলি। অকাল হোলির সন্ধ্যাকাশে উড়ন্ত ছুঁচোবাজি। সে বছর বাজিওয়ালাদের নয়া আবিষ্কার। বড় বড় চোখে দেখে মরছিল রংবাজ প্রেমিকা। টুকরো রঙ বেশি ঝলসায় ! 

 

ময়ুরী মিত্র
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top