সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ব বই দিবস: বই হোক নিত্যসঙ্গী  : এস ডি সুব্রত


প্রকাশিত:
২৭ এপ্রিল ২০২২ ০১:৪২

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ১৮:১৭

 

বর্তমানে  তথ্য প্রযুক্তি প্রসারের ফলে মানুষ অনেকটা বইপড়া প্রবনতা ছেড়ে ইন্টারনেট ও ফেসবুকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ছাত্র ও তরুন সমাজ। ফেসবুকের ও ইন্টারনেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ছাত্র তরুন প্রজন্মকে বাঁচাতে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে অবশ্যই। ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস। এই দিবসের পুরো নাম হল ‘ওয়ার্ল্ড বুক অ্যান্ড কপিরাইট ডে’, যেটি ‘বিশ্ব বই দিবস’ নামেও পরিচিত। বই দিবসের মূল ধারণাটি আন্তর্জাতিক প্রকাশক সমিতি প্রথম প্রকাশ করে। পরে স্পেন ইউনেস্কোতে বই দিবস পালনের প্রস্তাব করে। ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর প্রতিবছরের ২৩ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্ব বই দিবস’  হিসাবে মনোনীত হয়। ইউনেস্কোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিবসটি পালন করা হয়ে  ও আসছে। বই দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো, বই পড়া, বই ছাপানো, বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণ করা ইত্যাদি বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং বইপড়ার প্রতি সবার আগ্রহ বাড়ানো‌। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল আরও বেশি লোককে পড়তে এবং লিখতে উত্সাহিত করা। সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও চিন্তার ক্ষেত্রে যারা বড় অবদান রেখেছেন, তাদের জ্ঞানকে ধরে রাখার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বই। প্রতিবছরের এই দিনে, বিশ্বের শতাধিক দেশে বিভিন্ন উদযাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিবস পালিত হয়। বিশ্ব বই দিবসের মূল ধারণাটি আসে স্পেনের লেখক ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেসের কাছ থেকে। ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল মারা যান স্পেনের আরেক বিখ্যাত লেখক মিগেল দে থের্ভান্তেস। আন্দ্রেস ছিলেন তার ভাবশিষ্য। নিজের প্রিয় লেখককে স্মরণীয় করে রাখতেই ১৯২৩ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে আন্দ্রেস স্পেনে পালন করা শুরু করেন বিশ্ব বই দিবস। এরপর দাবি ওঠে প্রতিবছরই দিবসটি পালন করার। অবশ্য সে দাবি তখন উপেক্ষা করা হয়েছিল। স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়। ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে বিশ্ব বই দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং পালন করতে শুরু করে। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১৯৭২ সালে  ইউনেস্কো বিশ্বের কাছে ‘একটি পাঠকসমাজ গড়ে তোলার’ আহ্বান জানায়। আহ্বানে সমাজের সকল সদস্যের বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।  বই পাঠকে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ করে তোলার আহ্বান জানায় ইউনেস্কো। ১৯৯৫ সালে, আন্তর্জাতিক প্রকাশক সমিতির ‘বিশ্ব বই দিবস’ ধারণাটি সামনে রেখে, স্প্যানিশ সরকার ইউনেস্কোর কাছে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব জমা দেয়। পরে, রাশিয়া মনে করে যে, ‘বিশ্ব বই দিবস’-এর সাথে কপিরাইটের ধারণাটিও যুক্ত করা উচিত। স্পেন কাতালোনিয়ায় ‘সেন্ট জর্জ ডে’ দ্বারাও অনুপ্রাণিত হয়েছিল। লাইব্রেরি ম্যাগাজিন অনুসারে, ওয়ার্ল্ড বুক ডে-র সূচনা স্পেনের কাতালোনিয়ায় এক কিংবদন্তি থেকে হয়েছিল। কিংবদন্তিটি এমন: এক সুন্দর রাজকন্যা ড্রাগনের দ্বারা পাহাড়ে বন্দি ছিল। যোদ্ধা জর্জ একাই ড্রাগনকে পরাস্ত করে রাজকন্যাকে বাঁচিয়েছিলেন; রাজকন্যা জর্জকে উপহার দিয়েছিলেন  একটি বই। তখন থেকে বই সাহস এবং শক্তির প্রতীক হয়ে ওঠে। একসময় স্পেনে ২৩ এপ্রিল ‘সেন্ট জর্জ ডে’ হিসেবে পালন শুরু হয়। উৎসব চলাকালীন কাতালোনিয়ার বাসিন্দারা নিজেদের মধ্যে বই ও গোলাপ বিনিময় করে।১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল হচ্ছে  স্পেনের বিখ্যাত লেখক সার্ভেন্টেস, বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক শেক্সপিয়র এবং পেরুভিয়ান লেখক ইনকা গার্সাজারো দে লা ভেগার মৃত্যুবার্ষিকী। বিশ্ব বই দিবস ঘোষণার সঙ্গে এর যোগসূত্র আছে বলেও বলা হয়।  ‘বিশ্ব বই দিবস’ পালনের উদ্দেশ্য, বই পড়তে সবাইকে উত্সাহ দেওয়া। আবার পাশাপাশি, মেধাস্বত্ব রক্ষার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া।

প্রতিবছর বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি পালন করে। শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে বই পড়ার রয়েছে নানা বিধ উপকারিতা। উনারা ব্যাখ্যা করেছেন কেধ নিয়মিত বই পড়া দরকার। মানসিক উদ্দীপনা বাড়াতে-স্থবির মনের উদ্দীপনা বাড়াতে বইয়ের চেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারেনা। মানসিক চিন্তায় থাকলে ভালো একটি বই পড়লে অবসাদ কমে যায়।

বই পড়া জ্ঞানের ভাণ্ডার প্রসারিত করে। বই পড়ার মাধ্যমেই নতুন শব্দভাণ্ডারে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারা যায়। স্মরণশক্তি বাড়াতে দারুন এক কার্যকরী ভূমিকা রাখে বই পড়া। বই পড়ার মাধ্যমে যেকোনো একটা বিষয়ে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা অথবা দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। শুধু যে আপনি ভালো বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা অর্জন করবেন তা না। ভালো বই পাঠ চিন্তার উৎকর্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। বই পড়লে শুদ্ধ করে, সুন্দর শব্দ চয়নে লিখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

মানসিক প্রশান্তি বাড়াতে বই এর চেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারেনা। নির্জনতায় এবং বিষন্নতায় নিজের মতো করে শব্দহীন বিনোদন এবং নিজের সুন্দর একটি আবহ তৈরী করতে বই পড়ার বিকল্প নেই । ২৩ শে এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য তারিখ। বহু বিশিষ্ট লেখকও এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সুতরাং, এই দিনটিতে লেখকদের শ্রদ্ধা জানানো একটি স্বাভাবিক পছন্দ ছিল। এটি এমন একদিন যখন চিত্রকর, লেখক এবং প্রকাশকরা একত্রিত হয়ে উদযাপন করেন। আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, এটি এমন একটি দিন যা বই পড়া, শেখার এবং ভাগ করে নেওয়ার আনন্দ উদযাপন করে। বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। বই পড়ে লাভ আছে কোন লোকসান নেই। বই মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। বই হোক মানুষের নিত্য সঙ্গী। একটি ভালো বই আমাদের জীবনের অনেক কিছুতেই ইতিবাচক প্রভাব এনে দিতে পারে। বই আমাদের একাকীত্বের সবচেয়ে ভালো সঙ্গী।  সঙ্গে যদি একটা ভাল  বই থাকে তাহলে আর কখনোই একাকীত্ব ছুঁতে পারে না আমাদের। বইয়ের মধ্যে ডুবে গিয়ে সহজেই একাকীত্ব আর বিষন্নতা দূর করা যায়।

 

এস ডি সুব্রত
কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top