সালেহা ভাবীর যাপন : শাহিদা মিলকি


প্রকাশিত:
১৬ মে ২০২২ ২২:০৭

আপডেট:
১৪ মার্চ ২০২৫ ২৩:৩০

ছবিঃ শাহিদা মিলকি

 

সালেহা ভাবী প্রতি বছর এই একটা সময়ের অপেক্ষায় থাকে। একান্ত নিজের মতো করে কিছু সিধান্ত নিতে পারে নিজের অর্জিত পয়সায়। নিজের মতো করে কিছু ভালো কাজ করে তৃপ্ত হয়। এই সময়টার কথা ভাবতেই যেন মোলায়েম স্নিগ্ধ ভালো লাগা মনটা ছুঁয়ে যায় ।কাছের মানুষের মুখে হাসি আর আনন্দ দেখে বুকটা ভরে উঠে।
সেই কোন ছোট বেলায় নিজের অজান্তে একটা সুন্দর গোছানো জীবনের স্বপ্ন দেখেছে সালেহা ভাবী। কিন্তু কাযর্ত তা তার কপালে জুটেনি। তার জীবন যাপন দেখলেই বোঝা যায়। একটা পরিপাটি পরিবেশে নিজের ভেতরে আলাদা একটা ভালোবাসায় পূর্ণ পরিচ্ছন্ন একটা মানুষের ছবি লালন করে এসেছে সালেহা ভাবী। অল্পতেই তুষ্ট, অল্পতেই মুখে হাসি, যে কোন অবস্থানের মানুষ হোক না কেন চট করে মানুষকে আপন করে নেবার দক্ষতা তার আছে। কি শশুর বাড়ি কি বাপের বাড়ি কি কমস্থল বা বন্ধু মহলে সব জায়াগায় সালেহা ভাবী যেন সবার চোখেরমনি। না কোনদিন সে কারুর সাথে কোন বৈষয়িক বিষয়ে কোনরকম প্রতিযোগিতা করেনি। স্ত্রীর জন্য যে আলাদা কোন পয়সা খরচ করতে হয় না বা কোন চাপে থাকতে হয় না এব্যপারে কর্তা শওকত সাহেব বেশ গর্ব করে আত্মীয় পরিজনের সাথে কথা বলে। সঙ্গপ্রিয় মানুষ সালেহা ভাবীর সঙ্গটাই যেন সবা্ই সবসময় অনুভব করে তৃপ্ত হয়। কিন্তু তার ভেতরে আর এক ক্রন্দসী নারীর বয়ে চলার খোঁজ কেউ রাখে না। এমন কি যার জন্য এই ভিন্ন পরিবেশে যাপন আলোরপথ চলা সেই মানুষটিও না।
রমজান মাসের ক‘টা দিন তাকে বেশ প্রফুল্ল দেখা যায়। গরীব আত্মীয় স্বজনসহ, কাজের সহকারীদের সবরকমের খোঁজ খবর প্রতিদিনের ইফতার সাহরী চিনি সেমাই কাপড় নানানরকম সহযোতিার চোখ যেন তার থাকতেই হবে। এর ব্যাতয় হলেই মনটা খাপার হয়ে যায়। কাউকে কিছু বলতে পারে না একা একা চোখের জল ফেলে। আর বলবেই বা কাকে। এই মানুষটির সাথে তো তার কোনদিন কোন বিষয়ে মতের মিলের থিতু হতে পারলো না। সালেহা ভাবী যদি থাকে পুবে মানুষটি থাকবে পশ্চিমে। এরকম একটি মানুষ যার ষাথে কোনদিন কারুর টু কথাটি হয়নি, শুধুমাত্র একজনের সাথে কোনদিন মতের মিল করতে পারলো না। এই আফসোস রাতের আঁধারে সালেহা ভাবীকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। একই মশারীর নীচে দীর্ঘ ত্রিশ বছর বসবাস করেও যেন দু‘জন দুই মেরুর বাসিন্দা।
সেই ভোর সকাল থেকে রাত বারোটা কমস্থলসহ নৈমিত্তিক কাজকর্ম সেরে তারপর অবসর। সবাই যে যার মতো ‍ঘুমিয়ে। সে খেলো কিনা ।তার শরীর মনের কোন প্রয়োজনে দেখ ভাল করবার মতো কেউ নেই। র্নিঘুম নির্জনে একা একা সালেহা ভাবীর দিনরাত্রির যাপনকথা, ভলোবাসাহীন সময়ের কল্পকথা মনের অজান্ত মনের অলিন্দে বাসা বাঁধে।
এমনি এক সালেহাকে কিনা আজ এভাবে অপমানের, অসম্মানের তীক্ষ্ম শব্দশরের আঘাতে জজিরিত হতে হলো। সেরকম কিছু মনে না হলেও, এরপরেও যেন আজ প্রচন্ড অভিমান হচ্ছে পাশে শুয়ে থাকা লোকটির উপর। সে তো ইচ্ছা করলে তার সমমযার্দায় তাকে সংসারে রাখতে পারতো ।সংসারে স্বাধীনভাবে চলার অধিকার দিতে পারতো। কিন্তু লোকটি কোনদিন চেষ্টাও করেনি এই অভিমানের ডালিতে ভালোবাসার সৌরভ ছড়াতে। যেন শরীর আর শ্রম দেবার জন্য মেয়ে মানুষকে সংসারে আসতে হয় বা আনা হয়।
সন্তান লালন পালন থেকে শুরু করে তাদের মানুষের মতো মানুষ করা, বিয়েশাদি সবটাতেই সালেহা ভাবীর বিচক্ষণতাকে অস্বিকার করলে নিজেকে অকৃতজ্ঞ প্রমাণ করা হবে। এসবের কি কোন মূল্য নেই। আর আজ ছোট্ট একটা মেয়ে তাকে অপমান করলো। যে কিনা বাড়ি বিাড়ি য়ে কাপড় বিক্রি করে।
“পড়ে আছেন তো কমদামী কাপড় ,আপনি কাপড়ের দাম বুঝবেন খি” ।
জোছনার জন্য ঈদের পোষাক কেনার সময় মিথিলার মায়ের এই কথাটি যেন হজম করতে পারছে না সালেহা ভাবী। যেন সারা জীবনে শওকতের দেয়া অবহেলার রশি তাকে আরো টাইট করে বাঁধছে। মধ্যো রাতে পাশের মানুষটার নাকের শব্দ আর না পাওয়ার ফিসফিসানীর শব্দ একাকার হয় সালেহা ভাবীর মোচড়ানো ভালোবাসার বালিযাড়ি। আর কতোদিন এমন নিষ্ঠুর মানুষটার পাশে একা একা বয়ে নিবে রাত্রিদিনের এই জোয়াল। স্নিগ্ধ আকাশের তারার হিসেব মিললেও, এই জোয়ালের কোন হিসেব মেলাতে পারে না সালেহা ভাবী।

 

শাহিদা মিলকি
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক,গল্পকার ও সংবাদ পাঠক (বেতার)



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top