সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

প্রশিক্ষণ : শাহনাজ পারভীন


প্রকাশিত:
১৪ জুলাই ২০২২ ০১:৪৫

আপডেট:
১৪ জুলাই ২০২২ ০২:০২

ছবি: শাহনাজ পারভীন

 

শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার বিশ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের চিঠিটা তানিশা যখন হাতে পেলো তখন সে একটু খুশিই হয়েছিলো। অবশ্য চিঠিটা যে আচমকাই ওর হাতে এসেছে তা কিন্তু নয়। তানিশা বেশ আগে থেকেই জানতো, অচিরেই তার হাতে এমন একটি চিঠি আসবে। সে মোতাবেক মনে মনে ভেবে রেখেছিলো সবকিছু- নীরবে, নিঃশব্দে।

আসলে সুন্দর এই পৃথিবীতে প্রকৃতির মতো মানুষও এক অনন্ত সুন্দর মনোরাজ্যে গভীর গোপন নীরবতা ধারণ করে। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে, দুঃখ, কষ্ট শোষণ করে, আনন্দ কোলাহল উপভোগ করে। সেই আবার রোদে শুকায়, বৃষ্টিতে ভেজে মাটির গভীরতায়, শেকড়ের টানে। তা আমরা কেউ দেখি, কেউ দেখি না। মানুষও বৃক্ষের সমান বয়সী, না কি তার চেয়ে কিছু কম, কিছু বেশি তা নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। জলের মতো মানুষের মনও স্পর্শ করে অনাদি অনন্ত। জলের কাছে দীক্ষা নেয়, আমরা কেউ হেরে যেতে আসি নি। শুধু জিতে যাওয়া আমাদের স্বভাব।

তবে কি জানেন তো, জলের মতো চলতে শিখতে হয়, থামলেন তো আপনার পথও আটকে গেলো নর্দমার নিন্দিত পাঁকে। এমনভাবে চলতে থাকা এই সমাজের কিছু গুণী মানুষের সাথে বিশটা দিন একসাথে থাকা যাবে ভাবতেই তানিশার এক অন্য রকম ভালো লাগায় মন ভরে যাচ্ছিলো। প্রতিদিনের একই গদবাঁধা রুটিনে মনে মনে হাঁপিয়ে উঠছিলো সে। তাই এর মধ্যে একটু অন্য রকম থ্রিলার বা ঝড় চাইছিলো। সত্যি সত্যি তার চাওয়ার বলয়ে ঝড় উঠছিলো ভেতরে ভেতরে। আসলে তাকে ঝড়ই বলা যায়। ঝড় যেমন আকাশ কাঁপিয়ে দাপিয়ে বেড়ায়, ডাল ভাঙে, মরা পাতা ঝরিয়ে নিয়ে যায় দূরে, আবার হেসে ওঠে নির্ভেজাল প্রকৃতি, এটা ঠিক তেমনই। প্রিন্সিপাল তানিশার সহকর্মী সুবোধ কুমার কয়েক মাস আগে ট্রেনিংয়ে এসে তার অনুমতি সাপেক্ষে অধ্যক্ষদের প্রশিক্ষণের জন্য তানিশার নামটা লিখিয়ে গিয়েছিলেন।
নতুন অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করে এমন একটি প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে তানিশা তাকে কথা দিয়েছিলো। এজন্য সুবোধ সাহেবকে দেওয়া কথা তানিশার মনের ওপর বারবার চাপ ফেলছিলো। এরই মধ্যে এইচএসটিটিআই, খুলনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রশিক্ষণের ব্যাপারে কয়েকবার কথা হয় তার।
শেষ মুহূর্তে প্রশিক্ষণের চিঠিটা যখন তানিশার হাতে আসলো, তখন কলেজে ঝড় ওঠে। প্রিয় সহকর্মীর অনেকেই এই সময়ে তার প্রশিক্ষণে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছিলেন না। তাদের ভাষায়, আপনি গেলে আমরা মাওরা হয়ে যাবো। আমাদের ভালো লাগবে না। এতদিন! অবশ্য আবার কেউ কেউ প্রশিক্ষণে যাওয়াটাকে স্বাগত জানিয়ে বলছিলো- যান ম্যাম, এ সুযোগ সব সময় আসে না। প্রশিক্ষণ মানেই এক ধরনের থ্রীল, আড্ডা, খারাপ লাগবে না আপনার। ভালোই লাগবে। সবকিছু নতুন করে আপগ্রেড নিয়ে আসতে পারবেন। আপনার জানা জিনিষ তবুও...।
ভাবতে ভালোই লাগছিলো তানিশার। মাত্র এই কয়টা দিনেই তারা আমাকে এতটা আপন করে নিয়েছেন। আমার ভালো-মন্দ, খারাপ লাগা, ভালো লাগা। বাসা থেকেও স্বামী, সন্তান কেউ রাজি হচ্ছিলো না। এই গরমে! তুমি ওসব বাদ দাও শীতকাল হলে দেখো। তারা জানেই তো, আমি গৃহপ্রিয় অবোধ বালিকা! হোষ্টেলে থাকতে পারবো না। প্রতিদিন জার্নিতে অনেক কষ্ট হবে আমার।
কিন্তু ওই যে কথা দিয়েছিলাম-আবারও ভাবনায় আসে তানিশার।
সব কিছু ছাড়িয়ে কথা দেয়া কথা রাখতে সে মরিয়া হয়ে ওঠে। দেখি না, মাত্র তো বিশটা দিন। ঠিকই দেখতে দেখতে চলে যাবে।
প্রথম সপ্তাহে শুধু আঙুল গুনে গুনে দিনগুলো পার করছিল। কয়দিন গেলো, আর কয়দিন বাকি? তারপর এমন কী হলো! কী এমন হয়ে গেলো যে দিনগুলো উড়াল ডানায় ঝড় হয়ে উড়ে উড়ে চলতে লাগলো! কী এমন প্রতিক্ষায় দিন কাটে, রাত কাটে! কে তার প্রতীক্ষার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে যায়? সে কি তার নতুন নতুন শেখার নেশা! না কি দেখার! জানে না সে। সেই গল্পটাই আজ বলতে বসেছে তানিশা। আসুন, তাহলে আমরা গল্পটা শুনতে থাকি-
যে যাই বলুক না কেন, তানিশার মনের ভাবনা ছিলো অন্যরকম। সম্প্রতি তার এক ব্যাংকার বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিলো। সে কথাচ্ছলে চাকরিজীবি মেয়েদের ব্যাংকের পরিসংখ্যান জানাতে যেয়ে বলেছিলো- জানো তো, চাকরিজীবি প্রায় অধিকাংশ মেয়ের ব্যাংকের নমিনী হচ্ছে তাদের মা, বাবা, ছেলে, মেয়ে এবং বোন। কদাচিৎ স্বামী এবং ভাইয়ের নাম থাকে। কথাটা শোনার সাথে সাথে তানিশার নিজের ব্যাংকের খতিয়ান মনে পড়লো। তার যা কিছু অল্প স্বল্প থাকুক না কেন, সবখানেই তার স্বামী প্রবরের নাম। সেখানে বাবা, মা, ভাই, বোন তো দূরের কথা ছেলে মেয়ে বা অন্য কারোরই নাম নেই। সেদিন থেকেই ও মনে মনে ভেবে রেখেছিলো যদি এবার সামান্য কোনো বাড়তি আয় বা ব্যাংক ব্যালান্সের ব্যাপার থাকে তো চিন্তাটা হবে অন্য রকম। তবে বাবা মা তো কবেই গত হয়েছে, আছে বাবার মতো বড় ভাই। তাকে নিয়ে কিছু ভাবা যেতে পারে। হঠাৎ ভাইয়ের কি দিয়ে কি হয়ে গেলো, কোটি কোটি টাকার হিসাব অমিল হচ্ছে দিন কে দিন। নিজের ব্যাংক ব্যালান্স, নিজস্ব পরিবহন ব্যবসা, ইটের ভাটা হঠাৎ করেই মাইনাস প্লাসে মাইনাস হচ্ছে। নিজের অধীনে কর্মরত কর্মচরীদের বাচ্চারা সব দেশের নামকরা সেরা বেসরকারী ভার্সিটিতে পড়ছে, আর তার বাচ্চাদের বিদেশী ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপলাই করবার জন্য ব্যাংকে গচ্ছিত তরল মানির সার্টিফিকেট দেখাতে অন্যের দারস্থ হতে হচ্ছে। এইসব নানান চিন্তায় বর্তমানে তার শরীরটাও পারমিট করছে না। যদি সম্ভব হয়, তো প্রশিক্ষণ শেষে পাওয়া সম্মানীটার সাথে আরও কিছু যোগ করে সে ভাইকে পাঠাবে। ভাই দেশের বাইরে যাবে ডাক্তার দেখাতে। সেক্ষেত্রে এই টাকাটা তার কাজ দেবে আর তানিশারও ভালো লাগবে। কতদিন ধরেই বিষয়টা নিয়ে ভাবছে, কিন্তু ছেলেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিষ্টার ফি দিতে যেয়ে সেও নাকাল। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ভাইয়ের জন্য সে কিছু করতে পারছে না।

একটু খুশি হয়েই মনে মনে সে হিসাব কষে, গত তিন বছর আগে নায়েমের ট্রেনিংয়ে সে বেশ একটা অংকের সম্মানী পেয়েছিলো, তখনকার চেয়ে এখন সময় একটু বদলেছে এবং বদলেছে তার স্কেলটাও। অতএব মনে মনে ইচ্ছেটা পোষণ করে খুব সকালে ঠিকা চাচীর বানানো চমৎকার নাস্তা, ঘন দুধ চা পান করে দুপুরের খাবার সাথে নিয়ে সকাল সাড়ে ছয়টায় বিআরটিসি বাস ধরে সে সময়ের আগেই ক্যাম্পাসে পৌঁঁছে গেছে প্রতিদিন। আর সে (অর্থাৎ তার আপনার চেয়ে আপন যে জন!) তো তারও আগে প্রস্তুত থাকতো, তাকে প্রস্তুত হতে এবং বাস পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। তাঁর জন্য অনেক কিছুই বুঝতে পারে না তানিশা।
(আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে) ক্লাস শেষে রাজধানীতে (পরিবহন) রাজার হালে দীর্ঘ সময় নিজের সাথে একান্ত বোঝাপরায় কেটে গেছে পথের সৌন্দর্যে আর একান্ত চিন্তা করার স্বাধীন সৌন্দর্যের নীরবতায়।
এরই মধ্যে দেখা হলো তার প্রিয় পাঠক শারমিন ভিনার সাথে। তিনি পাশ্ববর্তী কলেজের শ্রেণি বিষয়ের প্রশিক্ষণার্থী। তানিশার পথের আনন্দ। দারুণ মেধাবী, ন¤্র, ভদ্র কবিতা পিয়াসী। তার সাথে পথের সময়গুলো উড়ে যায় রাস্তার পাশে থাকা বৃক্ষের মতো উড়ে উড়ে। কত গল্প, জীবনের কত ঘটনা, কত স্মৃতির কাহানা। তানিশা বিমুগ্ধ পাঠকের মতো শুনে যায় তার নিবিড় আন্তরিক গল্প বলার পারঙ্গমতায়। প্রতিটি সকাল তানিশার কাছে নতুন হয়ে ধরা দেয়।
এখানে প্রশিক্ষণে আসার একদিন পর থেকেই সদ্য সরকারি ঘোষণাপ্রাপ্ত হওয়া একটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জনাব বিনয় কুমার মহোদয় তানিশার লেখালেখি, বইপত্র বিশেষ করে এ বছর প্রকাশিত "বিভোর রাত্রিদিন" "রুদ্ধদিনের শব্দসম্ভার" নিয়ে তার অতি আগ্রহ এবং কৌতুহল তানিশাকে মুগ্ধ করে। এরও আগে তিনি তানিশার কাছ থেকে বই সংগ্রহ করেছেন।
সেশনের ফাঁকে, লাঞ্চের পরে সময় পেলেই তিনি বই নিয়ে ডায়াসে চলে যান। পাঠ করেন খুঁজে খুঁজে তার প্রিয় কবিতাগুলো। কথা বলেন বিভিন্ন আঙ্গিকে। তিনি তানিশাকে সংবর্ধনা দেবার কথা বলেন। তানিশা হেসে উড়িয়ে দেয়। এড়িয়ে যায়। তাছাড়া তাদের সাথে বেশি কথা বলার সুযোগও বা কই? সময়ই বা কই?
শুধু প্রতিদিন যশোরে চলে যাবে বলে স্যারকে দিয়ে ক্লাসের সময়টাও একটু কমিয়ে নিয়েছে তানিশা। স্যার অবশ্য তাকে বলেছিলেন, আপনি আপনার বাসের সময় মতো চলে যাবেন। কিন্তু তানিশা রাজি হয় না-
‘আমি একজন অধ্যক্ষ। এটা কি প্রতিদিন সম্ভব? স্যার বলুন?’
স্যার তানিশাাকে বুঝেছেন।

তো এভাবেই চলছিল বেশ। ক্লাস, পড়াশোনা, প্রতিদিন আসা যাওয়া, সব মিলিয়ে সময়গুলো এনজয় করছিলো। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই দিনটা কেটে যায়। বিনয় স্যারের সাথে এ নিয়ে আর কথা হয় না তানিশার। ব্যস্ততায়। যদিও তিনি প্রতিদিনই তাকে মনে করিয়ে দেন।
কিন্তু স্ট্যাডি ট্যুরের পর তিনি এবং অন্য সব ভাইয়েরা নাছোড়বান্দা। সময় ফুরিয়ে যায়, আমাদেরকে সময় দিন। আগামীকাল অবশ্যই হোস্টেলে থাকতে হবে আপনাকে। আর কোনো কথা হবে না। আমাদের নির্ধারিত ক্লাস শেষে বিকালেই আয়োজন করবো।
আপনারাই বলুন, কার সাধ্যি আছে এমন ভালোবাসা পায়ে ঠেলে! এড়িয়ে যায়।
অতঃপর মুহুর্তের মধ্যেই ব্যানার, ক্রেষ্ট, ফুল, মিষ্টি, কেক, সিঙ্গারা, সমোচা, কোকের আয়োজন করে। অতঃপর শুরু হয় আয়োজন। একেবারে সাড়ে তিন ঘন্টার দীর্ঘ আয়োজনে মন খুলে কথা বলে তাকে বোনের দরদে বরণ করে নেন।

তানিশা মনে মনে ভাবে, মহান আল্লাহ এই ছোট্ট জীবনে আমাকে অনেক সম্মান দিয়েছেন। কিন্তু আজকের ঘটনাটি ছিল একেবারেই অন্যরকম। আজ ১ জুন, ২০২২ খ্রি. তারিখ বিকাল চারটায় এইচএসটিটিআই, খুলনার সভাকক্ষে অধ্যক্ষগণের শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ কোর্সের ২৬ তম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীগণ কর্তৃক আমাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই আমার একুশজন অধ্যক্ষ ভাইকে। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ এবং আপ্লুত।
আমার ভাইয়েরা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা করে এই কয়দিনে দেখা তাঁদের বোনকে নিয়ে আন্তরিক অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। সাথেই আছি ভাইয়েরা আমার। আমার জন্য দোয়া করবেন।


এইসএসটিটিআই এর সুযোগ্য পরিচালক প্রফেসর ড. ইসলাম মহোদয় অন্য একটি প্রশিক্ষণ গ্রুপের শিক্ষা সফরে থাকায় রাতে ফিরে এসে অন্যান্য স্যারদের সাথে নিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এলেন। এটিও তার জন্য একটি বড় পাওয়া। জীবন মানেই সংগ্রাম। জীবন মানেই আনন্দ। আহা জীবন! তুমি ভালো থেকো।
বহুদিন পর হোষ্টেলের সকালটা অন্য রকম সুন্দর।
প্রশিক্ষণের অংশ হিসাবে গতকাল ৩০ মে, ২০২২ খ্রি. অধ্যক্ষদের শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ এর শিক্ষাসফর অনুষ্ঠিত হয়। এই শিক্ষাসফরে এইচএসটিটিআই, খুলনা এর সুযোগ্য পরিচালক প্রফেসর ড. ইসলাম মহোদয়, উপপরিচালক মহোদয় সহ খুলনা বিভাগের ২২ টি কলেজের অধ্যক্ষগণ অংশগ্রহণ করে।
এই শিক্ষাসফরে একই সাথে তিনটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়। গণ প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ সরকারের মেগা প্রজেক্ট রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে সকাল পৌনে নয়টায় ক্যাম্পাস থেকে যাত্রা শুরু করে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এইসআর জনাব তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত একটি আয়োজনসহ, বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপ দেখা, কিছু স্থান পরিদর্শন এবং অচিরেই বাংলাদেশ বিদ্যুত উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনের পথে এই স্বপ্ন দেখতে দেখতে গরম চায়ের কাচে চুমুক দিতে থাকে তানিশা। সেখানকার অসাধারণ আতিথিয়েতা শেষে মংলায় অবস্থিত দিগরাজ ডিগ্রী কলেজের যোগ্য অধ্যক্ষ মহোদয়ের নেতৃত্বে অত্যন্ত সুন্দর পরিচ্ছন্ন কলেজটি পরিদর্শন শেষে তারা দুপুরের খাবার গ্রহণ করে।
তারপর ফকিরহাটে অবস্থিত সরকারি শেখ হেলাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ পরিদর্শন করে। মনোরম পরিবেশে সেখানে তাদেরকে এক সুন্দর পরিবেশে ফুলেল শুভেচ্ছা ও উপহার প্রদানের মাধ্যমে সংবর্ধিত করেন কলেজটির সভাপতি জনাব স্বপন দাস।
সকাল সাড়ে আটটায় শুরু করে এই সফরে সকলেই মনোরম পরিবেশে আনন্দ সহকারে অনেক অজানা তথ্য ও অভিজ্ঞতা অর্জন শেষে যখন হোষ্টেলের গেটে পৌছে তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত সাড়ে নয়টা বাজে।
-আপনি তো আজ যেতে পারবেন না। চলুন আপনার রাতের খাবারের ব্যবস্থা করে তবে আমরা যাবো।
এগিয়ে আসে দুজন অধ্যক্ষ। যাদের বসবাস এ শহরের উপকণ্ঠে।
বাইশ জন অধ্যক্ষ মানে বাইশটি প্রতিষ্ঠান। বাইশটি প্রতিষ্ঠান মানে একটি বিভাগ। একটি বিভাগ মানে আমার বাংলাদেশ। অধ্যক্ষগণের শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা শীর্ষক প্রশিক্ষণের ২৬ তম ব্যাচের সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে তাদের সার্টিফিকেট এবং সম্মানীর খামটা হাতে পেয়ে তানিশা খুশিতে আটখানা। আজই ভাইকে টাকাটা পাঠিয়ে দেবে সে। সাথে খুশির খবর। সে ফার্ষ্ট হয়েছে এই প্রশিক্ষণে। কিন্তু সে যে প্রথম হয়েছে, কর্তৃপক্ষ তার তো কোনো নম্বর ফর্দ দিলো না। এ+ তো অনেকেই পেয়েছে, সে তো একা নয়। তবে? তার মনটা একটু খারাপ হয়ে যায়। এবার সে সন্তর্পনে টাকার খামটা খোলে। কিন্তু এ কি? মাত্র তো কয়টা টাকা? প্রতিদিন সাড়ে তিনশ টাকা হিসাবে সম্মানী দিয়েছে তাদেরকে। অথচ তাদের গড়ে প্রতিদিনের বেতন প্রায় দুই হাজার টাকা। যেই হিসাবে নায়েম থেকে সে সম্মানী পেয়েছিলো। তানিশার খুব মন খারাপ হয়।। তার মনে পড়ে সৈয়দ মুজতবা আলীর পাদটীকা গল্পের পÐিত মহাশয়ের বেতনের হিসাব। সে বুঝতে পারে না, সে কি হাসবে, নাকি প্রতিবাদ করবে? সে হাসতেও পারে না, প্রতিবাদও করে না গোপন কান্নায় ভেঙে যায় তার আশান্বিত সুখের স্বপ্ন।

 

ড. শাহনাজ পারভীন
কবি, গবেষক, কথাসাহিত্যিক
সম্পাদক: দ্যোতনা, ছড়াঘর। ২২ জুলাই, ২০২১ খ্রি.।

অধ্যক্ষ, তালবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজ, যশোর

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top