সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

করবী : ময়ূরী মিত্র


প্রকাশিত:
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৩:৩১

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৪৯

 

দুপুর ঝেড়ে ফেলে সূর্য তখন পা ফেলছে বিকেলে। তখনো না আসা বিকেলের রোদে বিসর্জনে যাবেন বলে সাজগোজে ব্যস্ত দেবী জগদ্ধাত্রী৷ রাস্তার দুপাশে নানারকম শিল্প পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানদার৷ তাঁদের এই পসরা অবশ্য দেবীর আসা ও যাওয়া দুই সময়েই৷ দোকানদার ও ক্রেতার ইচ্ছেগুলোকে দেখে আবাহন ও বিসর্জনের ফারাক করা মুশকিল৷ মৃত্যু যদি নতুন প্রাণের স্টার্টিং পয়েন্ট হয় তাহলে এই ফারাক করতে যাওয়াটাই অবশ্য বোকামি৷
অটো করে যাচ্ছিলাম থিয়েটারের দলে মহড়া দিতে৷ যাওয়ার এই পথটুকুতে ভীষণ চেষ্টা করি মানুষ খুঁজতে ও তাঁদের গল্প বানাতে৷ কেন এই সময়টিকেই বেছে নিয়েছি তা নিয়ে প্রশ্ন আমারও৷ হয়ত থিয়েটারের সঙ্গে মানুষকে দেখার একটি অনিবার্য সুফল যুক্ত থাকে বলে৷
পথ থেকে অনেক স্টিলের বাসন, একটি ওভেন ও একটি লাল টকটকে মেয়েকে নিয়ে উঠলেন এক মা৷ দেখলাম --মায়ের গালও টকটকে লাল - অনেকটা বিহারী বউয়ের সিঁদুরের মতো৷ সত্যিই বলতে কি -গালের এমন লাল আমি কখনো দেখিনি৷ তাই বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছিলাম -মা মেয়ে গালে রুজ মেখেছে কিনা৷ কাছে মুখ নিয়ে যেতেই নাকে মাংসের বাসী বাস এল৷ মুখের অস্বস্তি দেখে বিব্রতভাবে বললেন --এবারই প্রথম জগদ্ধাত্রীর মেলায় মোমোর দোকান দিয়েছিলাম৷ কখনো করিনি তো ব্যবসা৷ সব পুর বেশি হয়ে গিয়েছে --পচেও গিয়েছে৷ যেটুকু ভালো আছে বাড়ি গিয়ে মেয়েটাকে চাউ বানিয়ে দেব৷ লাল গালের ছোট্ট ফুলটা তারস্বরে বলে উঠল --House এ গিয়ে চাউ খাব৷ আমার আর মায়ের House৷ এত্ত জোর সে চেঁচালে অটোওয়ালা ভড়কে পিছনে দেখলেন ৷গোঁফের ফাঁকে হাসি৷ তিনিও বোধহয় এমন লাল্লু গাল ও এমন চিল্লু girl দেখেননি৷
মা বললে --লালু সবে বাংলা ও ইংরেজি পড়তে শুরু করেছে৷ দুটো ভাষাকে একতালে ভালোবাসার জন্য তার বাক্য ব্যবহারে একটা ব্যারাম দেখা গেছে৷ সে একই বাক্যে ইংরেজি বিশেষণ ও বাংলা বিশেষ্য ব্যবহার করছে৷ ইস্কুলে মার খাওয়ার পরিমাণ ইদানিং নাকি বেড়েছে লাল্লুর ৷ বলাবাহুল্য -এই সব কথাবার্তা যখন চলছিল লাল্লু কিন্তু একটুও লজ্জা পায়নি ৷ একভাবে অটো দাপাচ্ছিল আর "My বাড়ি গিয়ে চাউ eat করব" বলে যাচ্ছিল ৷
চামড়ায় সামান্য শিরশির ভাব উঠল --লাল্লুকে ছোঁয়ার৷ লাল গালে বুড়ি চামড়া হাজির হল৷ ফিসফিস করে বললাম --House নয় -বল Home৷ লাল্লু কইল --আমাদের Home৷ মাথা নাড়লাম ৷
-----উঁহু বল আমাদের লাল Home ৷ আমায় সে Home এ নিবি নে লাল্লু?
----নেব তো ৷ মা তোমার আমার জন্য মুরগি food রেঁধে দেবে ৷ কিন্তু Red Home কেন মাসি ?
নিজের অচঞ্চল ভাবে নিজেই বিস্ময় বোধ করছি৷ আরো ফিসফিসিয়ে লাল মেয়েটাকে বললাম --তোর গালের লালটা আমার গালে একটু ঘষে দিবি৷ ব্যাস ! আমার গালও লাল হয়ে গেল৷ আর তারপর তুই তোর মা আর আমি --আমাদের তিনবন্ধুর বাড়িটা হয়ে গেল --লাল Home৷
লাল্লু বেবাক৷ ছোট হাঁ এর মধ্যে ছটফট করছে তার বাচ্চা জিভ৷ সেই জিভটা একসময় বলে উঠল -- মা তাহলে লাল Home এ তুলে নিয়ে যাব প্যান্ডেলের God কে ? আমাদের সঙ্গেই থাকবে -চাউ খাবে৷ ফুল দিয়ে খুব সাজাব তাকে৷ ওহ মা ! ওহ পিসি ! সে তখন flower ভগবান হয়ে যাবে ৷ কী মজা !
নিজের শব্দজাদুতে পাগল হয়ে গেল বেচারা লাল্লু৷ আরে সে রাস্তায় নেমে লাফাচ্ছে --নাচ্ছে --তালি মারছে -- হেসে হেসে মরছে ৷ আর --আর কী যেন বলার চেষ্টা করছে তার ভালোবাসার ইংরেজি বাংলা সাজিয়ে৷ ফুলের থোকায় ঝড় লেগেছে গা ৷
বাই দিলাম লাল্লুকে৷ চেঁচিয়ে বললাম --লাল্লু Flower দেবী যেন অনন্ত বাঁচে তোর আমার লাল Home এ৷ সে যেন তোর জগতটাকে গড়ন দিয়ে যায়৷

 

ড. ময়ূরী মিত্র
গদ্যকার, বিশেষ শিশুদের প্রশিক্ষক ও নাট্যশিল্পী 
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top