সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

টুকরো টুকরো স্বপ্ন : কাইউম পারভেজ


প্রকাশিত:
৪ মার্চ ২০২৩ ২২:২৮

আপডেট:
৪ মার্চ ২০২৩ ২২:২৯

ছবি : কাইউম পারভেজ

 

গত বছরের বই মেলায় নতুন সংযোজন - স্থানীয় আলোকচিত্র শিল্পীদের অসাধারণ কিছু আলোকচিত্র সমাহারে এক নান্দনিক প্রদর্শনী। পেন্সিল অষ্ট্রেলিয়ার আয়োজনে এবং একুশে একাডেমীর উৎসাহে এই সুকুমার কাজটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। আমাদের সাকিনা আকতার, অশোক অধিকারী, শহীদুল আলম বাদল, কবীরুদ্দিন সরকারসহ আরো অনেক শিল্পীর অক্লান্ত পরিশ্রমের নেপথ্য স্বার্থকতায়। আমরা খুব উচ্ছসিত হয়েছি – উদ্ভাসিত হয়েছি শিল্পকলা-গণমাধ্যমের এই অঙ্গনটিকে সামনে টেনে আনার জন্য। সেই ১৮৩৯ সাল থেকে ফরাসী শিল্পী Louis-Jacques-Mandé Daguerre এই আলোকচিত্র উদ্ভাবন করার পর থেকে সারা বিশ্বব্যাপি শান্তি-অশান্তির দলিল, যুদ্ধ বিগ্রহের দলিল, ঘৃণা-ভালবাসার দলিল, পরিবর্তিত বিশ্বের প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের সাক্ষ্যপ্রমাণে কি বিস্ময়কর ভূমিকা রেখেছে আলোকচিত্র। আমি সেই সময়কার কথা বলছি যখন ইন্টারনেট বলে কিছু ছিলো না। কম্পিউটার নামক কোন শব্দ অভিধানে ছিলো না।
বেশীদিনের কথা নয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতার খবর নৃশংসতার জলজ্যান্ত দৃশ্য সারা বিশ্ব জানলো দেখলো তথ্যচিত্র আলোকচিত্রের মাধ্যমেই। বছর তিনেক আগে সিরিয়া-আরব যুদ্ধে বোমায় আহত রক্তাক্ত তিন বছরের শিশুটি মৃত্যুর আগে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো – আমি ঈশ্বরের কাছে সব বলে দেবো। সেই একটি আলোকচিত্র সারা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিলো – মানবতা কাঁদলো। এমন উদহারণের কোন শেষ নেই। একবার ভাবুনতো আপনার নিজের কাছেই এমন কত উদহারণ গল্প আছে। মেলায় প্রজন্মরা আসবে – জানবে তাদের ইতিহাস ভাষা সংস্কৃতি পুরোনো পৃথিবী।
আমার গল্পটা হলো – পেন্সিল অস্ট্রেলিয়া এবং একুশে একাডেমীর এই ভাবনা উদ্দ্যোগের জন্য আমি উদ্বেলিত গর্বিত। উদ্দোক্তাদের আমি সাধুবাদ জানাই। আশা করি এটা চলতে থাকবে আপন মহিমায় – স্বার্থকতায়।
গল্প আরো দু একটা আছে এবার সে কথাটই বলি। একদিন মেলা প্রাঙ্গণে হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিলো ওই যে মাঠের মাঝখান দিয়ে সরু হেঁটে যাওয়া পথটা আছে সেখানে আল্পনা করতে পারলে দারুণ একটা ব্যপার হতো। আল্পনাটা এখন একুশের অংশ – আমাদের সংস্কৃতির অংশ তো বটেই। উৎসাহী এবং আঁকিয়ে লোকের অভাব হবে না। একুশে একাডেমীকে বলেছিলাম। তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে শুনেছিলেন। বললেন কাউন্সিলের সাথে আলাপ করবেন। হয়তো কাউন্সিল অনুমতি দেয়নি নতুবা ওঁদের কাছে যথাযথ নথিপত্র ”আলোকচিত্র” নিয়ে আলোচনা করার সময় হয়ে ওঠেনি। এই মেলা চত্বরে একটা শহীদ মিনারের দাবী আকাঙ্খা আমাদের বহুদিনের। কাউন্সিল শুরুতেই না করেছিলো। যতবার প্রস্তাব করা হয়েছিলো ততবারই না করতে করতে অবশেষে একদিন একডেমীর ক্যারিজমায় হ্যাঁ হয়েছে। সেই আস্থায় বলি এটাও হয়তো সম্ভব। একান্তই যদি না হয় আমরা কাপড়ের মধ্যে আল্পনা এঁকে মেলার দিন ওই রাস্তায় বিছিয়ে দিতে পারি। পরে মেলা শেষে খুলে নিয়ে গেলাম। তাও যদি না করা যায় আমাদের ছোট্ট মিনারটার সামনে হার্ড বোর্ডের উপর আল্পনা এঁকে বিছিয়ে দিতে পারি সামান্য একটু জায়গায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে। আল্পনার ছোঁয়া একটু না হয় থাকলো মেলা প্রাঙ্গণে।
আরেকটি স্বপ্নের কথা আগে হয়তো বলেছি লেখায় আলোচনায় বা আড্ডায় আবার মনে হলো – আবার বলি। প্রজন্মরা হয়তো জানেনা চেনেনা ভাষা শহীদের। তাই মেলা প্রাঙ্গণে যদি ভাষা শহীদদের এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বদের ছবি টাঙ্গিয়ে দেয়া যেতো মায়েরা বাবারা প্রজন্মকে দেখাতে পারতো জানাতো পারতো এটা শহীদ আবুল বরকত, আবদুস সালাম, রফিকউদ্দীন, আবদুল জব্বার, শফিকুর রহমান, আব্দুল আউয়াল, অহিউল্লাহ। ইনি গাজীউল হক, ইনি ভাষা মতিন, কমরুদ্দীন শহুদ। এই যে আরো আছে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, এম আর আখতার মুকুল, বিচারপতি হাবিবুর রহমান, আলতাফ মাহমুদ, আবদুল লতিফ। আরো যাঁদের ছবি যোগাড় করা যায়। ইন্টারনেটে গেলেই এঁদের অনেকের ছবি পাওয়া যাবে। সম্ভব হলে আলাদা একটা ষ্টল করে সেখানে এই সব ছবি রাখা যেতে পারে। আমরা পালা করে সবাই কিছুক্ষণ করে ওখানে থাকলাম। কৌতুহলী প্রজন্ম এবং বাবা-মাকে ভাষা শহীদদের চিনিয়ে দিলাম তাঁদের সম্পর্কে বললাম যতটুকু যা জানি। সুন্দর একটা নাম হতে পারে -ভাষা শহীদের ঘর বা অন্য কিছু। কষ্টের? অসম্ভব? মোটেই না আমি তা বিশ্বাস করি না। একখানা ভাঙ্গা চেয়ার আর টেবিল থেকে আজকের বই মেলা - এই আয়োজন। সেটা পারলে এটাও হবে। লাগুক না একটু সময় তবুও হোক না। আমার মনে হয় সবাই সেটা চাইবে। জয় হোক একুশে একাডেমীর।

 

ডঃ কাইউম পারভেজ
লেখক, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top